আপনি যেহেতু পুণ্যবতী এক নারী তাই আল্লাহ তাআলা আপনাকে আপনার অজান্তে অনাগতগ কোন কোন ঘটনার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে দেন। হুররানী বললেন, আজ আমীরে উন্দলুসের সেই গোলাম যাকে তিনি দরবারে উচ্চ পদে। সমাসীন করেছিলেন, সেই নসর আমার কাছ থেকে বিষ নিয়ে গেছে। সে এটা আমীরে উন্দলুসের ওপর প্রয়োগ করবে।
হুররানী মুদ্দাসসিরাকে বিস্তারিত জানালো। নসর তাকে কিভাবে হুমকি দিয়েছে এবং কি কি লোভ লালসা দেখিয়েছে।
আপনি কি আমার অপারগতা বুঝতে পারছেন?
কেন বুঝবো না! কিন্তু নসর কি এটা বলেনি কার ইঙ্গিতে সে এত বড় অপরাধ করতে যাচ্ছে? মুদ্দাসসিরা জিজ্ঞেস করলো।
না, আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছি। কিন্তু সে বলেনি। আপনি আমীরে উন্দলুসকে সতর্ক করে দিন। নসর বা কোন খাদেমার হাতে তিনি কোন কিছু যেন না খান। আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি যথাসম্ভব আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
ঠিক আছে আপনিও বিষয়টা গোপন রাখবেন।
অবশ্যই। অবশ্যই।
অবিরাম-বিশ্রামহীন যুদ্ধের ময়দানে কাটানোর কারণে এবং সর্বশেষ নৌপথের যুদ্ধে দীর্ঘসময় অসম্ভব খাটুনির কারণে আমীর আব্দুর রহমানের শরীর অনেক খানিই ভেঙ্গে পড়েছে। তার ওপর বার্ধক্যের চাপ তো আছেই। তাই নিয়মিতই তাঁর কোন না কোন ঔষধ সেবন করতে হয়।
একদিন তাঁর অতি বিশ্বস্ত পরামর্শক নসর তাঁর কাছে এলো। তার হাতের একটা কৌটা দেখিয়ে বললো, এতে এমন এক আশ্চর্য জীবন সঞ্জীবনী আছে যে, তা সেবন করলে যৌবনের শক্তি শরীরে ফিরে আসে। দূর দেশের এক হাকিম থেকে আমি এটা আনিয়েছি।
তুমিও তো অনেক বুড়ো হয়ে গেলো নসর! আব্দুর রহমান কাষ্ঠ হেসে বললেন, বার্ধক্যকে যৌবনের রূপান্তর করে দেয়ার মতো সঞ্জিবনী তোমার বরং অধিক প্রয়োজন। আমি তো অনেক ঔষধই খাচ্ছি। এটা তুমি খেয়ে নাও।
না, না, এটা তো আমি আপনার জন্য নিয়ে এসছি। নসর জোর হেসে বললো।
নসর। আব্দুর রহমান বাদশাহী গাম্ভীর্যভরা গলায় গর্জে উঠলেন।
আমি তোমাকে হুকুম দিচ্ছি, এ ঔষধটুকু এখনই তুমি তোমার মুখে পুরে নাও।
ঘামে নসর প্রায় গোসল করে ফেললো। এ হুকুম পালন না করা ছাড়া তার উপায় নেই। সে বিষের পুরিয়াটি মুখে পুরে নিলো। আব্দুর রহমান তখনই তাকে চলে যেতে বললেন।
ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, নসর দৌড়ে বাইরে বের হয়ে হুররানীর কাছে ছুটে গেলো। তাকে বললো, যে বিষ সে আমীরে উন্দলুসকে খাওয়াতে গিয়েছিলো সেটা তাকে খাইয়ে দেয়া হয়েছে। খোদার দিকে চেয়ে কিছু একটা করুন।
তাড়াতাড়ি গিয়ে বকরির দুধ পান করে নাও। হুররানী তাড়া দিলেন।
নসর দৌড়াতে শুরু করলো। কিন্তু বিষ তার যা কাজ করার সেটা করে ফেলেছে। পথেই সে আধোমুখো হয়ে পড়ে গেলো।
ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, আমীর আব্দুর রহমান মরণ বিষ থেকে তো বেঁচে গেলেন এবং বিষ প্রয়োগকারীও সে বিষ খেয়ে শেষ হয়ে গেলো।
কিন্তু যে গোলামকে তিনি স্নেহ করে এত বড় পদ দিয়েছেন যাকে এত বিশ্বাস করেছেন সে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করতে চেয়েছিলো, এই চিন্তা তাঁকে এমনভাবে আহত করলো যে, সাত আট দিন পর পুরো উন্দলুসবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন।
সেটা ছিলো ২২ সেপ্টেম্বর ৮৫২ খ্রি.।
বহুদিনপর এ তথ্য ফাঁস হয় যে, সুলতানা মালিকায়ে তরুবের কথায় নসর আমীর আব্দুর রহমানকে বিষ পান করাতে চেয়েছিলো।
আমীর আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মুহাম্মাদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আর উন্দলুসের কালনাগিনী সুলতানা ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ ইতিহাসের অন্ধকার পাতায় হারিয়ে যায়।
আর নান্দনিকতায় অমর ইতিহাস হয়ে থাকে দেহ-মন সর্ব দিক দিয়ে রূপসী মুদ্দাসসিরা।
সমাপ্ত
১৩-৫-২০১০
রাত ২টা