মনে হচ্ছে তুমি পাক্কা মুসলমান বনে গেছো। সুলতানা হাসতে হাসতে বললো, আমীরে উন্দলুস মনে হয় তোমাকে একটু বেশিই এনআম আর বখশিষ দিয়েছেন।
আমীর আব্দুর রহমান আমাকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার এই দিয়েছেন যে, আমি আসল মুসলমান হয়ে গেছি।
আমার মতে তুমি কখনোই এই চেষ্টা করোনি যে, তিনি খাঁটি মুসলমান হয়ে যান। সুলতানা বললো, তুমি তো তাকে নারী ও মদে ডুবিয়ে রাখতে চাইতে।
হ্যাঁ, সুলতানা! যারিয়াব বললো, আমি আমীরে উন্দলুসকে ভোগ-বিলাসে মত্ত রাখতে চেয়েছি। আমার যৌবন তত তোমার সামনেই রয়েছে। এসব আমার পাপ ছিলো এবং আমি এসব থেকে তাওবা করে নিয়েছি।
আজ আমি সেসব কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যা তুমি শুনতে চাও না। হ্যাঁ, সুলতানা! একটা পাপ আমি করে যাচ্ছি, এ থেকে হয়তো আমি তাওবা করবো না। এটা হলো, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা। এটা ছাড়া আমি টিকতে পারবো না।
ভালোবাসাকে তুমি পাপ মনে করো? সুলতানা বললো।
এটা এর ওপর নির্ভর করে তুমি কাকে ভালোবাসছো এবং কিভাবে ভালোবাসছো। তুমি তো জানোই আমাদের ভালোবাসা কোন ধরণের? আমীর আব্দুর রহমান তোমাকে হেরেমের হীরা বলে এবং আমিও তোমাকে আমার হীরা বলি। যারিয়াব বললো।
অন্য কোন কথা বলো যারিয়াব!
না সুলতানা যারিয়াব দুঃখভরা গলায় বললো, তুমি অতীতের পর্দা উঠিয়ে দিয়েছে। তাই তুমি শুনতে না চাইলেও আমার না বলা কথা তোমায় শুনতে হবে। তারপর আমি তোমার কথা শুনবো।
আমার এখন একটি কথাই রয়ে গেছে। আমার ছেলে আব্দুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হবে। প্রভাবশালী তিন চারজন উমারাকে আমার হাতে নিয়ে নিয়েছি। এখন আমি আমীর আব্দুর রহমানের মৃত্যুর অপেক্ষা করছি। তার তো এখন মরে যাওয়া উচিত। তুমি কি আমার ছেলের পক্ষে নেই?
আগে সময় আসুক। যারিয়ার বললো, আমীর আব্দুর রহমানের পয়তাল্লিশ জন পুত্র। এর মধ্যে কিছু তো তার বিবাহিতা স্ত্রীদের সন্তান। অধিকাংশই হেরেমের মেয়েদের পেটের সন্তান। এর মধ্যে এক সন্তান তোমার। আমি চাই আব্দুর রহমান মৃত্যুর আগে যেন তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করে যান। আর তা না করে গেলে তার মৃত্যুর সময় পুরো মহলে রক্তের বন্যা বইবে।….
আর এমন ঘটলে ধর্মদ্রোহী সন্ত্রাসী খ্রিষ্টান দলগুলোর ওপর সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যাবে। সালতানাতে উন্দলুস তখন ভয়াবহ অবস্থায় পড়বে। ভেবে দেখো সুলতানা! এক্ষেত্রে মুদ্দাসসিরার মতামতকেও আমীর গুরুত্ব দিবেন। মুদ্দাসসিরার মতো প্রভাব কিন্তু তোমার নেই। সে চাইলে তোমাকে মহল থেকেও বের করে দিতে পারবে।
সুলতানা গভীর চিন্তায় হারিয়ে গেলো।
তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে আমীরে উন্দলুসকে পাক্কা মুসলমান কে বানিয়েছে? যারিয়ার বললো, আমাকে তুমি বিদ্রূপও করেছিলে। তবে পাক্কা মুসলমান আমি নই মুদ্দাসসিরাই এ অবদানের সবচেয়ে বড় দাবীদার। ইসলামের খাঁটি প্রেম রয়েছে ওর মধ্যে। আর আমীরে উন্দলুস আব্দুর রহমানের মধ্যেও আত্মমর্যাদাবোধ কিছুটা অবশিষ্ট ছিলো।…
তিনি ভোগ বিলাসের জীবন থেকে মুক্ত হওয়াতে ইসলাম উন্দলুস কিছুটা হলেও মজবুত শিকড় গাড়তে পেরেছে। তার শাসনামলের শুরুতে মনে হচ্ছিলো খ্রিষ্টানরা উন্দলুসের শিকড়ে দাঁত বসাতে যাচ্ছে।…..
কারণ, এ লোক তোমার মতো সুন্দরীদের বেহেশতে হারিয়ে গিয়েছিলো। তোমার কি মনে নেই, তোমার রূপ যৌবন এবং আমার সুর সঙ্গীত আমীর আব্দুর রহমানকে সালতানাতের সব ধরনের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বেপরোয়া করে দিয়েছিলো।..
***
কোন শাসক যখন অযোগ্য হয়, নির্বোধ বা ভোগ বিলাসপ্রিয় হয় তখন সে চাটুকার ও তার দেশের শত্রুদের জন্য বেশ কার্যকর শাসক বনে যায়। সে সব উপদেষ্টা আর পরামর্শই তার কাছে ভালো লাগে যারা তাকে এই উপলব্ধি দেয় যে, সে নির্বোধ ও অযোগ্য নয়। যারিয়াব অক্লান্ত বলে যাচ্ছে।
তাহলে আমি আমীরে উন্দলুসের চাটুকার! সুলতানা গাল ফুলিয়ে বললো।
আমি ও তুমিও। দুজনই আমরা তাকে ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলাম। এর ফলেই তার শাসনকালেই উন্দলুসের ইতিহাসে খ্রিষ্টানরা সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহ করেছে। ধর্মদ্রোহীদের আন্দোলন তার যুগেই সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করেছে। সুলতানা! মনে করে দেখো! সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও রক্ত তার আমলেই ঝরেছে।….
আবার তার যুগেই কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রতিভাবানরা সবচেয়ে বেশি সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতাও। আবার তার কালেই দুশমন মাত্রাতিরিক্ত দুঃসাহসিক হয়ে উঠেছে। তবে এটা আমীরে আব্দুর রহমানের প্রবল ব্যক্তিত্ব দীপ্ত ঈমানের পরিচায়ক যে, তিনি এক সময় শরাবের পেয়ালা ছুঁড়ে ফেলেছেন। আমার প্রিয় গিটারের তার ছিঁড়ে দিয়েছেন। আর তোমার রূপের জাদুর জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছেন।…
এসবের পেছনে অবশ্যই এক নারী ও কয়েকজন বীর পুরুষের অবদান আছে। ইচ্ছে করে নির্জনে বসে যাই এবং উন্দলুসের সেসব ইতিহাস নিজের চোখের সামনে হাজির করি যা আমীর আব্দুর রহমানের কর্মজীবনে রচনা করেছেন। খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীদের মরণ বিষ এ লোক যেভাবে অকার্যকর করে দিয়েছে, অতীতের কোন আমীর তা পারেনি।…….
তুমি জানা সুলতানা! এই আব্দুর রহমানের কাছেই তার দুশমনরা বন্ধুত্ব ও সাহায্যের ভিক্ষা চাইতে এসেছিলো। বার্য নাটাইনি, মোকয়েলি এসেছিলে, থিয়োক্লাস এসেছিলো। এমনকি উন্দলুসের সবচেয়ে বড় দুশমন ফ্রান্সের শাহলুই যখন তারই ছেলের বিদ্রোহে ঘাবড়ে গিয়ে ছিলেন তখন তিনি তার এক দূত গোপনে আমীরের কাছে এই আবেদন প্রার্থনা করে পাঠান যে,