ফাঁকা জায়গা থেকে ঘোষণা করা হলো, কেউ ঝামেলা করতে এলে পুরো গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হবে। লোকেরা এটা শুনে পিছিয়ে গেলো। কিন্তু সাত আটজন খ্রিষ্টান অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করলো। অসংখ্য তীর ওদের দিকে ছুটে গেলো। ওরা মাঝখানেই যমদূরেত সাক্ষাৎ পেয়ে গেলো।….
আরেক দলে খ্রিষ্টান আরেক দিক থেকে তেড়ে আসতে লাগলো। এ সময় গ্রামের বাইরে থেকে ঘোড় সাওয়ার পুলিশরা ঘোড়া নিয়ে গ্রামে ঢুকেই ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘোড়া নিয়ে। এতে কিছু খ্রিষ্টান ঘোড়ার পায়ের নিচে পিষ্ট হলো। আর বাকিরা পালিয়ে গেলো। পুলিশ বাহিনী ফ্লোরা ও মরিয়মকে নিয়ে সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে গেলো।
আমি নিশ্চিত দুজনে পথে ইনস্পেক্টররকে ওদের রূপের লোভ দেখিয়ে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলো। সুলতানা বললো, ধন সম্পদ এবং নিজেদের দেহেরও লোভ দেখিয়েছিলো ওরা।
না, সুলতানা! যারিয়ার বললো, তুমি হলে হয়তো এই নারীত্ব ব্যবহার করার চেষ্টা করতে। কিন্তু কোন কোন মেয়ের মানসিক শক্তি পুরুষের চেয়ে বেশি থাকে।…
এ ধরনের মেয়েকে সে নারীই বুঝতে পারবে যার চরিত্র ও বিশ্বাসে দৃঢ়তা আছে। ওরা দুজন পথে কাউকেই কোন ধরনের লোভ-লালসা দেখায়নি। বরং ওরা দুজনই ইসলামকে গালমন্দ করতে থাকে এবং চ্যালেঞ্জ করতে থাকে। ওরা উন্দলুসে মুসলমানদের কখনোই নিশ্চিন্ত ও সুস্থিরভাবে থাকতে দেবে না।
তুমি বিস্মিত হচ্ছো সুলতানা! কারণ, তোমার কোন ধর্ম বিশ্বাস নেই। নিজের বিলাসমত্ত প্রবৃত্তিকেই তুমি ধর্ম বানিয়ে রেখেছে। এমন নারীও ছিলো যারা তারিক ইবনে যিয়াদ ও সেসব মুজাহিদদেরকে জন্ম দিয়ে ছিলো যারা উন্দলুসকে জয় করে ছিলো….।
আরেক ধরনের নারী আছে যারা সেসব উমারাদেরকে জন্ম দিয়েছে যাদের কাছে বাদশাহী আর ক্ষমতাই সবচেয়ে প্রিয়। তাদের বংশে যে নারীই সন্তান জন্ম দেয় তার একমাত্র চাওয়া পাওয়া হয় তার ছেলে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হবে। তুমি দ্বিতীয় শ্রেণীর নারীদের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য তুমি হয়রান হচ্ছে, ওরা দুজন কেন মুক্ত হওয়ার জন্য নিজেদের দেহের লালসা দেখায়নি। ওদের সাথে তোমার অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে।…।
সারা রাস্তায় ওরা ইসলাম ও মুসলমানদেরকে গালিগালাজ করেছে। পরের দিন ওদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিচারক ফ্লোরাকে বলেন,
তোমার শাস্তির ব্যাপারে আমি এজন্য নমনীয় হচ্ছি যে, তুমি এক মুসলমান পিতার কন্যা। আশা করি তুমি বন্দিত্ব দশা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং সরল পথে ফিরে আসবে।
তবুও ফ্লোরা তার উগ্রতা ছাড়লো না। দুজনকে কয়েদ খানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। একদিন এক শুভ্রকেশী পাদ্রী ওদের সাক্ষাতের জন্য কয়েদ খানায় হাজির হলো। তাকে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হলো। কিন্তু কয়েদখানার প্রধান কর্তা সেই পাদ্রীকে কয়েদকানা থেকে বের করে দিলো। কারণ, সে ফ্লোরা ও মরিয়ামকে বলছিলো, দৃঢ় থাকবে। কারণ, পরে তোমাদেরকে মহলের হেরেম ঢুকানো হবে।
অনেক পর আমি এক সূত্রে জানতে পারি, সেই শুভ্রকেশী পাদ্রী ছিলো ধূর্ত ইউগেলিস। ফ্লোরা ও মারিয়মকে কয়েদখানায়ও ইসলামের নামে অনবতর কুটুক্তি করতে থাকে। তাদেরকে আরেকবার বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিচারক যখন দেখলেন, এদের মনোভাব আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তখন তিনি আইনের সঠিক ব্যবহার করলেন এবং দুজনকেই মৃত্যুদন্ড দিলেন।
দুজনকে মরণ ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো। ইউগেলিস ফ্লোরা ও মরিয়মের শোকে আরো হিংস্র হয়ে উঠলো। প্রতিশোধের আগুন তাকে পোড়াতে লাগলো। সে তার জঙ্গি তৎপরতা আরো বাড়িয়ে দিলো। খ্রিষ্টানরা এবার প্রকাশ্যে ইসলাম ও প্রশাসনকে গালমন্দ করতে লাগলো। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডা আরো বাড়িয়ে দিলো।
আমীরে উন্দলুস হুকুম দিলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তি করবে তাদের শাস্তি সোজা মৃতুদন্ত। এ হুকুমের পর কয়েখ মাসের ব্যবধানে আট হাজার খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হলো। ইউগেলিস তার মিশনের ব্যর্থতা ও ফ্লোরার শোকে প্রায় পাগল হয়ে গেলো। এ অবস্থাতেই সে ধরা পড়লো এবং জন সম্মুখে তাকে ফাঁসি দেয়া হলো।
সুলতানা উদাস কণ্ঠে বললো,
যারিয়াব! তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের সেই সোনালী অতীতের কথা শোনাও। যা আমাকে আবার যৌবনে নিয়ে যাবে। কিন্তু তুমি আমার মন আরো উদাস করে দিলে।
সুলতানা মদের সুরাহী নিয়ে মদ ঢালতে উদ্যত হলো। যারিয়াব তার হাত থেকে মদের সুরাহীটা নিয়ে নিলো। তারপর সেটা দূরে রেখে দিলো।
সুলতানা! জীবনের এই শেষ দিকে এসে আমারও ইচ্ছে করে কেউ আমার সাথে আমার যৌবনকাল নিয়ে যদি কথা বলতো। তুমিও এটা চাও। কিন্তু তোমার ও আমার চাওয়ার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। তুমি এই বার্ধক্যে এসে যৌবনবতী হতে চাচ্ছো। এজন্য তুমি যৌবনের স্মৃতির আশ্রয় নিচ্ছে। এটা আসলে নিজের জীবন থেকে পালানো।…
বার্ধক্যকে গ্রহণ করে নাও। তাকে অভিবাদন জানাও। কারণ, তুমি অতীতে এক ব্যর্থ জীবন রেখে এসেছে। এখন বাস্তব জীবনের ফিরে এসো।….
আমার যৌবনকালে তুমি তো কমপক্ষে এতটুকু বলতে যে, আমাকে তুমি হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসো।
তা তো এখনও বলি। যারিয়াব বললো, এখন তো অনুভব করি, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এত অধিক হয়ে উঠেছে যে, আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বললেও আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়বো নির্দ্বিধায়। কিন্তু আজ রাতে অতীতের সেসব কথা শুনে নাও যা আমি শোনাতে চাই।