ইউগেলিস বললো, যারিয়াব! আমি আশা করব আপনি আমাদেরকে ধোকা দেবেন না। আর ধোকা দিলেও সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।
আমি রেগে গেলাম। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা আমার জন্য ভালো হলে কী হবে আমার?
সে বললো, আপনি এই দুনিয়ায় থাকবেন না।
আমি বললাম, আমার একটা শর্ত আছে। সেটা পূর্ণ করে দিলে মহলে আমি বিদ্রোহ করিয়ে দেবো। চার সালারকে ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ করে দেবো। ইউগেলিস আমাকে শর্ত জিজ্ঞেস করলো। আমি ঠোঁট টিপে হাসলাম। ওরা তিনজন পরস্পরের দিকে তাকালো।…
ফ্লোরা ও মরিয়মের চেহারায় আমি ক্ষুদ্ধতা বা আনন্দ কোনোটারই ছায়া দেখলাম না। তবে ওদের ঠোঁটে যে হৃদয় কাড়া হাসি ছিলো সেটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইউগেলিস আমাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে দুজনকে নিয়ে অন্য কামরায় চলে গেলো। একটু পর সে একা ফিরে এলো।
আমাকে বললো, ঐ মেয়েদের মনে মুসলমানদের ব্যাপারে এমন ঘৃণা জমে আছে যে, ওরা কোন মুসলমানের দৈহিক স্পর্শ সহ্য করতে পারবে না।….
আমাকে মনে হয় বাচ্চা মনে করছিলো ইউগেলিস। ইউগেলিসের কথার ভঙ্গি দেখেই আমি বুঝে গেছি সে কী বলতে চাচ্ছে। ফ্লোরাকে তো ওরা মরিয়ম ছানী বানিয়ে রেখেছিলো। আর মরিয়ম নিজেই ছিলো গির্জার নান। যাদের ওপর বিয়ে হারাম। ভুলেও যদি কোন পুরুষের সঙ্গে ওদের দৈহিক স্পর্শ ঘটে ওরা সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে গির্জায় গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। কিন্তু আমি এও জানতাম, এ দুজনের দেহ ইউগেলিসের জন্য বৈধ ছিলো।…..
***
যারিয়াবের এসব কথা সুলতানার জন্য একেবারেই নতুন। তাই সুলতানা ফ্লোরা ও মরিয়মের ব্যাপারে যারিয়ারে এধরনের প্রস্তাবের কথা শুনে চমকে উঠলো।
তুমি কি একেবারে হৃদয়-মন থেকে চাচ্ছিলে ঐ দুই মেয়ে তোমার কাছে আসুক? তুমি তো আমার ভালোবাসার দাবী করো। সুলতানা জিজ্ঞেস করলো।
না, যারিয়াবের হেসে বললো, মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদাবোধ আমার মধ্যে তো আগইে জেগে উঠেছে। এখন ইউগেলিস যখন আমাকে হত্যার হুমকি দেলো তখন ওর ধর্মীয় আত্মমর্যাদাকে নিয়ে একটু খেলার ইচ্ছা জাগলো। ইউগেলিস যখন বললো, ফ্লোরা ও মরিয়মের মনে মুসলমানদের ব্যাপারে ঘৃণায় পূর্ন তখন ও দেরজপাতে আমারমনে যতটুকু সম্মানছিলো সেটাও আমারমন থেকে বেরিয়ে গেলো। ইউযালিস আমাকে পরের রাতে আসতে বলোল।..
ইউগেলিস যখন আমাকে পরের রাতে আসতে বললো তখনই ওর হাবভাব আমি পড়তে পেরেছি। পরের রাতে ও আমার সাথে অন্য কোন খেলা খেলতে চায়। এটা আমার সন্দেহ ছিলো। হতে পারে মেয়ে, দুজন দেহ দানে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। কারণ, ওদের চরিত্র তো আমি জানি।……
ইহুদী খ্রিষ্টানদের মেয়েরা নিজেদের জাত ধর্মের জন্য নিজেদের সতীত্ব ও দেহ অনায়াসে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে পারে। কিন্তু আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা। ইউগেলিসকে আমি বললাম, আগামীকাল রাতে আমি এসে বিদ্রোহের সব পরিকল্পনা করে ফেলবো। বোকার মতো আমি ওর জালে ফেঁসে গেছি এমন একটা বিশ্বাস ওর মধ্যে সঞ্চারিত করে চলে এলাম।…….
সকাল হতেই পুলিশ চীফ মনসুর ইবনে মুহাম্মদের কাছে গেলাম। তাকে বললাম, ইউগেলিস, ফ্লোরা ও মরিয়ম অমুক গ্রামের অমুক বাড়িতে আছে। আজ রাতেই ওদেরকে গ্রেফতার করা যায়। আমি ওখানে গিয়েছিলাম একথা মনসুরকে বললাম না। শুধু বললাম, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি। ওরা তিনজন আজ রাতে ওখানে থাকবে।…..
মনসুর ইবনে মুহাম্মাদ অতি দূরদর্শী পুলিশ চীফ। সে তখনই তার এক সোর্সকে ভিখারীর ছদ্মবেশে সেখানে পাঠিয়ে দিলো। বলে দিলো, ওখানে গিয়ে ভিক্ষা করবে এবং একজন পুরুষের সাথে দুটি মেয়েকে দেখলে তাদের পিছ নিবে এমনভাবে যে, ওদের যেন কোন সন্দেহ না হয়। ফিরে এসে আমাকে জানাবে ওরা কোথায় গিয়েছে। রাতে মনসুর সে গ্রামে পুলিশের একটা দল পাঠিয়ে দিলো।
পরদিন সকালে খবর আসে, ফ্লোরা ও মরিয়মকে গ্রফতার করা হয়েছে। কিন্তু ইউগেলিস বেরিয়ে গেছে। পুলিশের ঝটিকা বাহিনীর সাথে এমন দুজন লোক ছিলো যারা ইউগেলিস ও মরিয়মকে চিনতো। পুলিশের লোকেরা যখন সে বাড়িতে গিয়ে উঠে সেখানে তখন ইউগেলিস লুকিয়ে ছিলো। পুলিশকে দেখে ঘরের লোকেরা এমনকি অন্যান্য মেয়েরাও পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিলো।…
গ্রামের খ্রিষ্টানরা ঘুম থেকে উঠে এদিকে দৌড়ে এলো। দলের সাথে যে ইনস্পেক্টর ছিলো সে সাথে সাথে ঘোষণা করে দিলো, তারা কে? এবং কী জন্য এসেছে। কেউ যদি ওদের সাথে লড়তে আসে তাহলে পুরো গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হবে।
কিন্তু ফ্লোরা ও মরিয়ম চিৎকার করে করে গ্রামের লোকদেরকে উত্তেজিত করছিলো, ওরা যাতে ওদেরকে মুসলিম সিপাহীদের হাত থেকে মুক্ত করে। কিন্তু কেউ ওদের কাছে আসার সাহস পায়নি।….
ওদের দুজনকে যখন টেনে হেচড়ে বের করা হলো, ফ্লোরা তখন উঁচু আওয়াজে বলছিলো, ক্রশের পূজারীরা! তোমাদের আত্মমর্যাদাবোধ কোথায় গেলো? এই মরিয়ম নান কে দেখে কি তোমাদের অন্তর কেঁদে উঠছে না? তোমরা কি করে সহ্য করছো? মুসলমানরা তাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। খোদার পুত্রের আত্মার কাছে কী জবাব দেবে?
***
মনসুর ইবনে মুহাম্মাদের জানা ছিলো, যারা অসংখ্যবার বিদ্রোহ করেছে তারা পুলিশ দেখলেই লড়াইয়ে নেমে পড়বে। মনসুর তাই পুরো এক ব্যটালিয়ন পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছিলো। গ্রামের মাঝখানে কিছু ফাঁকা জায়গা ছিলো। ফ্লোরা ও মরিয়মকে সেখানে আনা হলো। কয়েকটি মশাল জালানো হলো। ইনস্পেক্টর কিছু পুলিশ গ্রামের বাইরেও রেখে এসেছিলো। যাদেরকে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগানো যেতো।…..