আমার মাত্র পনের জন এমন জানব আর আত্মত্যাগী সিপাহী প্রয়োজন, যাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের উম্মত্ততা আছে এবং আছে বিচক্ষণতাও। ওসীম তাদেরকে বুললেন।
একটু পরই পনের জন জানবার্য নির্বাচন করে উপস্থিত করা হলো। ইবনে ওসীম তাদেরকে খুব ভালো করে যাচাই-বাছাই করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন,
এই দুই সিপাহীর সাথে তোমরা পাহাড়ি এলাকায় যাবে। এক গুহায় নৈশ হামলা চালাতে হবে। ওখানে কাউকে পালাতে দেবে না এবং কাউকে জীবিত পাকড়াও করবে না। শুধু যুবতী একটি মেয়েকে জীবিত পাকড়াও করবে। খ্রিষ্টানদেরকে আমরা দেখিয়ে দেবো, এই যে তোমাদের কুমারী মরিয়াম। যে কবরস্থানে আত্মপ্রকাশ করেছিলো।
তিনি কমান্ডারদেরকে আরেকটি নির্দেশ দিলেন,
আমাদের যত ফৌজ আছে সবগুলোকে এক জায়গায় একত্রিত করো। এর উদ্দেশ্য হলো, বিদ্রোহীরা মনে করবে টলায়টার ফৌজ পালাচ্ছে। তারপর বিদ্রোহীদের প্রস্তত করা সৈন্যদের ওপর সুযোগ বুঝে চূড়ান্ত হামলা করা হবে।
***
রাতের অন্ধকারে দুই সিপাহীর পথ নির্দেশনায় পনের জানবায সেই পাহড়ি এলাকায় পৌঁছে গেলো যা এক দীর্ঘ এবং প্রশস্ত কেল্লার রূপ নিয়ে তাদের শত্রুদেরকেই সুরক্ষা দিচ্ছে। ওরা এক সঙ্গে পথ চলছে না। প্রত্যেকে একটু ব্যবধান রেখে পথ চলছে।
আরে কে রে? ওদের কানে আচমকা এই শব্দ পৌঁছলো।
সবাই নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। যে আওয়াজ দিয়েছে সে এক জানবাযের সামনে এসে পড়লো। আচমকা তার পেছন থেকে জানাবায তার ঘার ধরে সজোরে মটকে দিলো এবং পরক্ষণেই তার বুকে আমুল খঞ্জর বিদ্ধ করে করে দিলো। নৈশ হামলাকারীদের তার লাশ একটা গর্তে ফেলে দিলো।
ওরা আবার আগের নিয়মে চলতে লাগলো। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় আবার কেউ একই ধরনের আওয়াজ করলো। অর্থাৎ এখানেও কেউ প্রহরা দিচ্ছে। সবাই নিঃশব্দে গাছ বা ঝোঁপ ঝাড়ের পেছনে চলে গেলো। শুধু দুই জানবার্য সামনে এগিয়ে গেলো।
তুমি কে ভাই! এক জানবায কণ্ঠ কাতর করে বললো, আমি তো যখমী, পানি খুঁজে ফিরছি। যে আওয়াজ দিয়েছিলো সেও এসে গেলো। তক্ষণে এক জানবার্য একটি গাছের আড়ালে কোনোকোনি ভাবে প্রস্তুত হয়ে গেছে। সে সামনে আসতেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তার বুকের নরম জায়গায় খঞ্জর বসিয়ে দিলো।
এ পর্যন্ত দুজন বিদ্রোহী দলের প্রহরীকে খতম করা গিয়েছে।
এর অর্থ হলো, প্রহরার ব্যবস্থা ওরা বেশ নিচ্ছিদ্র রেখেছে। জানবাস দলের কমান্ডার বললো।
আরেকটু সামনে গিয়ে আমরা এই পথ থেকে সরে পড়বো, সিপাহীদের একজন বললো, আমাদেরকে অতি দুর্গম রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। তোমাদের সবাইকে একেবারে নীরবতা অবলম্বন করতে হবে। একটি পাতা মাড়ানোর শব্দও যেন কোথাও না হয়।
জায়গাটি মজবুত কোন কেল্লার চেয়ে কম নয়। ওরা এক পাহাড়ের ওপর উঠলো। একটু দুরে আলো দেখা গেলো। দুই জানবার্য পা টিপে টিপে সামনে এগিয়ে গেলো। ওখানে দুই লোক একটি গর্তে আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে।
নৈশশ হামলাকারীরা ওদেরকেও চোখের পলকে যমের বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
তারপর ওদেরকে এই পাহাড় থেকে নেমে আরেক পাহাড়ে চড়তে হলো। সেই পাহাড় থেকে নেমে সবাই অনুভব করলো তাদের পা চোরা বালিতে দেবে যাচ্ছে। পথ নিদের্শক সিপাহীরা বললো, সম্ভবত: অন্য কোন পথ আছে। কিন্তু তরা এ রাস্তাই চিনে।
চোরা বালি গভীরতর হচ্ছে। জানবার্যরা একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে চোরা বালির পথটুকু পার হয়ে গেলো। ঠান্ডায় ওদের পা জন্মে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু ওরা হাটা থামালো না।
একটু পর ওরা একাধিক কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পেলো। এক জানবা পা টেনে টেনে হামাগুড়ি দিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।
***
ফিরে এসে সেই জানবায জানালো। সে খুব কাছ থেকে ওদের কথা শুনে এসেছে। ওদের কথায় জানা গেছে, ফ্লোরা এখানে নেই। আজ সন্ধ্যার আগে শহরের কোন গির্জায় চলে গেছে। গুহায় ভেতরে বিশ জনের কম লোক হবে না।
ওগুলো সব সন্ত্রাসী। ভেতর থেকে মদের গন্ধ আসছে। গুহার ভেতরে আলো জ্বালানো আছে। গুহার মুখটি বেশ চওড়া।
কমান্ডারের কথায় জানবাজরা সবাই এগিয়ে গেলো। দেখা গেলো, গুহার মুখে তিনজন লোক বসা আছে তীর ধনুক নিয়ে। ওদেরকে ভেতরের লোকেরা দেখতে পাচ্ছে না।
ওরা বিদ্রোহ আর সন্ত্রাস নিয়ে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে গল্প করছে। মদ ও পান করছে। তিনটি তীর আচমকা তিনজকে বিদ্ধ করলো এবং তিনজনের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শোনা গেলো।
আরো তিনজন লোক গুহামুখে আসলো। ওদেরও একই পরিণত হলো। গুহার ভেতরে এখনো বিশজনের মতো লোক আছে। গুহার ভেতরটা অনেক বড় ও প্রশস্ত হলেও সমতল নয়।
গুহার দেয়ালের সাথে বড় বড় পাথর রয়েছে। এগুলোর পেছনে একজন করে লোক লুকিয়ে বসে থাকতে পারবে। গুহার লোকগুলো ঐ পাথরগুলোর দিকে ছুটে গেলো। কিন্তু গুহামুখ থেকে তিনটি তীর এসে আরো তিনজনকে ফেলে দিলো।
এবার ভেতর থেকে তীর ছুটে আসতে লাগলো। কিন্তু এদের এতটুকু হুশ নেই যে, ভেতরের আলো নিভিয়ে দিলে ওদের পজিশন বেশ মজবুত হয়ে যেতো। কিছুক্ষণ তীর বিনিময় হতে লাগলো।
নৈশ হামলাকারীরা এমন দুঃসাহস দেখালো যে, চার জানবার্য হামাগুড়ি গিয়ে গুহার ভেতরে চলে গেলো। ওদেরকে বাকি জানবাযরা কভার দিতে লাগলো।
পাথরের পেছন থেকে বিদ্রোহীরা এদের দিকে তীর ছুঁড়তেই গুহা মুখ থেকে বাইরের জানবাযরা তীর ছুঁড়ে জবাব দিয়ে দিলো যে, ওরা একা নয়, আরো অনেকেই আসছে তোমাদের যমদূত হয়ে।