তাই আমি তাদের চরিত্রগুণে বিমুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আম্মাজান! আপনার নিশ্চয় স্মরণ আছে, আমি এক সময় ওয়াইসকে হৃদয় থেকে কামনা করতাম, যখন সে রবিন ছিল। কিন্তু যখনই শুনতে পেলাম, রবিন ওয়াইস হয়ে গেছে। খ্রিস্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, ঠিক তখনই আমি তাকে ত্যাগ করেছিলাম। আমি বলতে চাচ্ছি, মুসলমানদের যে চরিত্র তা আর কোন জাতির মাঝে নেই। হতেও পারে না। মিসরে গিয়ে দেখুন। খ্রিস্টান বাদশাহ হিরাক্লিয়াস খ্রিস্টানদের রক্তে মিসরের মাটি রঞ্জিত করছে। সেখানের প্রধান সমস্যাই হলো প্রকৃত ও নির্ভেজাল খ্রিস্টধর্ম কোনটি তা নির্ণয় করা সম্রাট হিরাক্লিয়াসের খ্রিস্টধর্ম না জনসাধারণ যে ধর্ম পালন করছে তা?
রাবেয়া তার মনের কথা একের পর এক বলে যাচ্ছে আর ওয়াইস নিরবে। বসে আছে। ঘরের লোকেরা সবাই চুপচাপ শুনছে। সবশেষে রাবেয়া বলল, আমি তো অন্য এক ইচ্ছে নিযে আপনাদের নিকট এসেছি। আমি চাচ্ছি, আপনারা সবাই মুসলমান হয়ে যান।
রবিয়ের পিতার কণ্ঠে আগুনের হলকা। বলল, চুপ কর। কোন মুসলমানদের কথা তুমি বলছো? সে মুসলমান তো এখন আর নেই যাদের স্বভাব চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে অমুসলমানরা মুসলমান হত। ইসলাম মদ পানকে এমনভাবে হারাম করেছে যেমনিভাবে শূকরের গোশতকে হারাম করেছে। কিন্তু এখানে কিছু মুসলমান আছে যার মদ পান করা শুরু করে দিয়েছে। তারা মদ পানকে হালাল মনে করে।
প্রতিবাদী কণ্ঠে ওয়াইস বলল, আপনার একথা আমি মানি না। আপনি বরং এটা বলুন যে, আমার ও আপনার মেয়ের ইসলাম গ্রহণ করাকে আপনি ভাল মনে করছেন না। মুসলমানদের নিয়ে মিথ্যা কথা বলবেন না। মিথ্যা অপবাদ দিবেন না।
রাবেয়ার পিতার দৃঢ় কণ্ঠ। এটা অপবাদ নয়। আমি তোমাকে এমন বহু মুসলমান দেখিয়ে দিতে পারব। আমি তাদের তোমাকে অবশ্যই দেখাব।
ওয়াইস বলল, হতে পারে এটা তাদের ব্যক্তিগত পাপাচার। তাই বলে, ইসলাম ধর্ম বা খলীফা বা অন্যান্য মুসলমানরা মুসলমানকে তা পান করার অনুমতি প্রদান করে না। আর ইসলাম এসব বৈধ মনে করে না।
রাবেয়ার পিতা দৃঢ়তার সাথে বলল, কিছুদিন পর তুমি নিজেই তা শুনবে, দেখবে। এ ধরনের মদখোরদের কোন বিচার এখন আর হচ্ছে না। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য মুসলমানরাও মদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তারাও মদ পান শুরু করেছে। মদ সকল পাপের উৎস। মদ পান করলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। হাজার রকমের পাপ তখন তার থেকে প্রকাশ পেতে থাকে। যদি এ জাতি মদ পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের ঐ সব স্বভাব চরিত্র নিঃশেষ হয়ে যাবে যার আকর্ষণে অমুসলমান বিমুগ্ধ চিত্তে মুসলমান হচ্ছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করার কারণে ওয়াইসের মত রাবেয়াও অতিষ্ঠ ও বিরক্ত হয়ে উঠল। শৈশব কাল থেকে রাবেয়া তার পিতাকে দেখে এসেছে ধর্মের ব্যাপার তার পিতা নিরাপোষ। খ্রিস্ট ধর্ম তার শিরায় শিরায় সর্বদা তোলপাড় সৃষ্টি করত। তাই সে চাইল, তার পিতার মিথ্যাচার এখানেই শেষ করে দেয়া দরকার। সে তার পিতাকে বলল, আব্বাজান! আমি আবারো ওয়াইসকে নিয়ে আপনার নিকট হাজির হব। আপনি কি আমাকে তার অনুমতি প্রদান করছেন?
পিতার কণ্ঠস্বর এবার অত্যন্ত উত্তাল মনে হল। বলল, শোন, আমার ঘরের দরজা তোমাদের জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। তোমরা যদি আবার খ্রিস্ট ধর্মে ফিরে আস তাহলে তোমাদের জন্য আমার হৃদয় ও গৃহের দরজা সর্বদা অবারিত পাবে।
ওয়াইস আর বসে থাকতে পারল না। দাঁড়িয়ে বলল, আমরা আর কখনো ভুলেও আপনার দরজায় আসব না। তারপর রাবেয়াকে তুলে নিয়ে বলল, চল রাবেয়া! আমি আমার লাঞ্ছনা ও অপমান সহ্য করতে পারি কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র অপবাদ ও মিথ্যচার সহ্য করতে পারি না। আমি এখানের আরো কিছু খ্রিস্টানকে মুসলমান বানিয়ে নিব।
এতক্ষণ রাবেয়ার বড় ভাই নিরব ছিল। কোন কথা বলেনি। এবার সে একটু ক্ষীপ্ত কণ্ঠেই বলল, তুমি হয়তো কিছুতেই তা করতে পারবে না। রোজী! তাকে ইসলামের প্রচার থেকে থামিয়ে রাখবি। নইলে
ভাই! আমি রোজী নই। আমি রাবেয়া। তিনি তার ধর্মের জন্য যা ভাল মনে করেন করবেন। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
ওয়াইস ও রাবেয়া সেখান থেকে আহত হৃদয়ে চলে এসেছে। ফিরে আসার সময় রাবেয়ার ভাই অগ্নিদৃষ্টিতে অপলক নেত্রে তাদের দিকে চেয়ে রইল। সে চোখে ছিল অপমান ও যন্ত্রণার আগুন।
***
ওয়াইস শুধুমাত্র বীর যোদ্ধাই নয়। অত্যন্ত বুদ্ধিমান, চৌকস, দূরদর্শী। তাছাড়া চর বৃত্তিতে তার প্রচুর সুনাম। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় সে রাবেয়ার ভাইয়ের মতিগতি বুঝতে পারেনি। সেদিন বিতর্কের শেষের দিকে অত্যন্ত রুক্ষ ভাষায় তার ভাই হুমকির স্বরে বলেছিল, তাকে ইসলাম প্রচার থেকে থামিয়ে রাখবি। নইলে…..একথার মর্ম কি? ইঙ্গিত কি? সে বিষয়টি ওয়াইস লক্ষ্য করেনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলার পথে ওয়াইস রাবেয়াকে বলল, আর কখনো আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসব না।
রাবেয়ার কণ্ঠে একরাশ বেদনা। বলল, আমি ভাবতেও পারিনি আমার পিতামাতা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে। তবে একটি কথা স্মরণ রাখবে, আমার পিতা যাই করুন তিনি ধর্মভীরু। কিন্তু আমার ভাই ভাল মানুষ নয়।