একজন বলল, সিপাহ সালার মহোদয়! আমার একটি পরামর্শ, যদি মিসরে আক্রমণ করতে হয় তাহলে আর দেরি নয়। এখনই আক্রমণ করতে হবে। রোমান সৈন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া মিসরের খ্রিস্টান জনতা এখন তাদের দুশমন। এ অবস্থায় আক্রমণ করলে আমরা। প্রায় বিনা যুদ্ধেই মিসর পদানত করতে পারব।
গুপ্তচরদের রিপোর্টে আমর ইবনে আস (রা.) দারুণ বিমুদ্ধ হলেন। বললেন, আমি এখন সবার আগে মদীনায় যাব। এবং আমীলুল মুমিনীন হযরত উমর (রা.) থেকে মিসর আক্রমণের অনুমতি নিয়ে তবে ফিরে আসব।
মূল আলোচনা শেষ হলে তারা রাবেয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করল। রাবেয়া তখন বাইরে বসে ছিল। ওয়াইস বলল, সিপাহসালার যেন রাবেয়ার সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
আমর ইবনে আস (রা.) রাবেয়াকে ভিতরে ডেকে নিলেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কিভাবে ওয়াইসের নিকট এল। রাবেয়া ঐ কাহিনীই শোনাল যা গুপ্তচর সিপাহ সালারকে শুনিয়েছে। আসলে এ প্রশ্ন করে তিনি ঘটনার সত্যতা যাচাই করলেন। আর একথাও বুঝতে চেষ্টা করলেন যে, এ অল্প বয়সী কুমারীর উপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না তো!
রাবেয়ার কথা শুনে আমর ইবনে আস (রা.) নিশ্চিত হলেন। তারপর রাবেয়াও নিজের বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে সিপাহ সালার আমর ইবনে আস (রা.) ওয়াইস ও রাবেয়ার বিয়ে সম্পন্ন করে দিলেন।
***
আমর ইবনে আস (রা.) মদীনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস, এবার তিনি মিসর আক্রমণের অনুমতি পাবেন। তিন চারদিন পর মদীনা থেকে আমীরুল মুমিনীনের এক দূত এক চিঠি নিয়ে এল। চিঠি পড়ে তার শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে গেল। আমর ইবনে আস (রা.) এর মত সাহসী লোকের হাতও কাঁপতে লাগল। চিঠির মর্ম ভাষা
আমর ইবনে আস (রা.)! আসোলামু আলাইকুম, তুমি কি আমাকে আমার সাথীদেরকে যারা আমার জিম্মায় রয়েছে তাদের ধ্বংস হওয়া দেখবে? আর তুমি তোমার সাথীদের নিয়ে জীবিত থাকবে? সাহায্য পাঠাও, সাহায্য, সাহায্য!
আমর ইবনে আস (রা.) দুতকে জিজ্ঞেস করলেন, কি বিপদ এসেছে?
বার্তাবাহক উত্তরে বলল, দুর্ভিক্ষ। আরবের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে উত্তর সীমান্ত পর্যন্ত সর্বত্র মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। মানুষ আর পশু না খেয়ে না খেয়ে ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুবরণ করছে। আমি বলতে পারব না, ফিরে যাওয়ার পূর্বে আর কতজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। খাবারের জন্য কোথাও শস্য পাওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে মানুষ ছটফট করছে। দুধের পশুগুলো হাড়ের খাঁচা হয়ে একের পর এক মরছে। এটা হিজরী ১৮ সাল মুতাবেক ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দের কথা।
এরপর আমর ইবনে আস (রা.) আমীরুল মুমিনীনের পত্রের উত্তরে লিখলেন।
আমীরুল মুমিনীনের নামে, আসোলামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু,
আপনি কোন দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি খাদ্য সামগ্রী সহ এক কাফেলা পাঠাচ্ছি যার শুরু অংশ আপনার নিকট গিয়ে পৌঁছবে আর শেষ অংশ আমার নিকট থাকবে।
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এ ধরনে পত্র শামে হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর নিকট এবং আবু উবায়দা (রা.)-এর নিকটও প্রেরণ করেছিলেন। তারা শামের আঞ্চলিক শাসক ও সিপাহসালার ছিলেন। এ ধরনের পত্র ইরাকের গভর্নর ও সিপাহ সালার সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (র.)-এ নিকটও প্রেরণ করেছিলেন। আমর ইবনে আস (রা.)-এর মত তাঁরাও উত্তর পাঠালেন।
তারপরই মদীনায় একের পর এক খাদ্য বোঝাই বিশাল বিশাল কাফেলা আসতে শুরু করল। আমর ইবনে আস (রা.) ফিলিস্তিন থেকে আটা ও ঘিয়ে বোঝাই করা এক হাজার উটের কাফেলা স্থল পথে পাঠালেন এবং আকাবা বন্দর থেকে বহু জাহাজ বোঝাই করে জল পথে খাবার-খাদ্য সামগ্রী পাঠালেন। এ ছাড়া পাঁচ হাজার কম্বলও পাঠালেন।
শাম থেকে হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) আটা ও ঘিয়ে বোঝাই করা তিন হাজার উটের কাফেলা পাঠালেন তা ছাড়া তিন হাজার জামাও প্রেরণ করলেন।
সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) ইরাক থেকে খাদ্য শস্যে বোঝাই করা এক হাজার উট প্রেরণ করলেন।
শামের এক অঞ্চলের আমীর ও সিপাহ সালার হযরত আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) চার হাজার উটের পিঠে খাদ্য শস্য বোঝাই করা কাফেলা নিয়ে মদীনায় উপস্থিত হলেন।
হযরত উমর (রা.) এতে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাকেই এ খাদ্য বন্টনের দায়িত্ব দিলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, আবু উবায়দাকে এই পরিশ্রমের জন্য চার হাজার দেরহমা দিয়ে দাও।
আবু উবায়দা (রা.) এ কথা শুনে বিস্মিত হলেন। বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার এ বিনিময়ের প্রয়োজন নেই। আমি তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটুকু করেছি। আমার এ কাজকে আপনি দুনিয়ার দিকে ঠেলে দিবেন না।
আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রা.) বললেন, তুমি তো এর বিনিময় চাও নি। তাই তা নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লমের সাথে আমার এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। তুমি এখন আমাকে যা বলেছে আমিও তাই রাসূলের নিকট বলেছিলাম। রাসূল আমার কথা কবুল করে নিয়ে আমাকে মূল্য নিতে বাধ্য করেছিলেন।
অবশেষে আবু উবায়দা (রা.) চার হাজার দেরহাম নিয়ে নিলেন এবং আবার শামের সে অঞ্চলে ফিরে গেলেন।