ইঞ্জেলা; এখন বুঝতে পারলে তো কেন আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করিনি। নিজ ধর্মে থাকার দরুনই তারা আমার জালে ধরা দিয়েছে। তানাহলে তারা আমার কাছে আসত না। সুতরাং আমাকে আমার ধর্ম ত্যাগ করতে আর কখনো বলবে না। আর সবচেয়ে জরুরী কথা হলো ইহুদীদেরকে বিশ্বাস করা ছেড়ে দাও। তারা বাহ্যিকভাবে তারেক ইবনে যেয়াদকে যে সাহায্য করেছে তা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে করেছে। তারা চেয়েছিল রডারিকের বাদশাহী খতম করতে তাতে তারা কামিয়াব হয়েছে এখন তারা চেষ্টা করছে, যাতে তোমার বাদশাহী কায়েমই না হয়।
আব্দুল আজীজ মুসাকে বলল, তারেক ইবনে যিয়াদকে সতর্ক করে দেয়া দরকার সে এখনও ইহুদীদেরকে দোস্ত, জ্ঞান করছে। সে একা রয়েছে, কোথায় কোন বিপদে পড়ে বলা যায় না।
মুসা গর্জে উঠে বললেন, “তারেককে আমি কি সতর্ক করব। সে অবাধ্য, নাফরমান। থোকায় পড়বে, বিপদের সম্মুখীন হবে তখন বুঝবে। তাকে আমি বলেছিলাম যেখানে আছে সেখানেই অবস্থান করো কিন্তু সে তা অমান্য করে সামনে অগ্রসর হয়েছে। এখন সংবাদ পেলাম সে টলেডো ছেড়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছে।
আব্দুল আজীজ : টলেডো থেকে কি কেউ এসেছে?
মুসা : তাকে টলেডোতে অবস্থান করতে বলে কাসেদ পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু কাসেদ যাবার তিন দিন পূর্বেই সে রওনা হয়ে গেছে। গত রাত্রে কাসেদ ফিরে এসেছে। সে যে রাস্তা দিয়ে গেছে তা খুবই বিপদাপন্ন। আমি তার কাছে পয়গাম পাঠাচ্ছি যেন সে টলেডোতে এসে সাক্ষাৎ করে।
আব্দুল আজীজ : পয়গাম কোথায় পাঠাচ্ছেন? কাসেদ তাকে কোথায় পাবে।
মুসা : সে যে জলাভূমি দিয়ে গেছে তার সম্মুখে মায়েদা নামে এক শহর রয়েছে। কাসেদ নিরাপদ রাস্তা দিয়ে যাবে। আমার সম্মুখে তারেকের উপস্থিতি খুবই জরুরী। আমি তাকে লাগাম লাগাতে চাই।
আব্দুল আজীজ মুসাকে রাগান্বিত দেখে বলল, সম্মানিত বাবা! তারেককে শাস্তি দিতে গেয়ে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে ইতিমধ্যেই সে স্পেন বিজয়ীর মর্যাদা অর্জন করেছে এবং স্পেনের ভবিষ্যৎ আমির সেই হবে।
মুসা : তাকেই আমি স্পেন বিজয়ী মনে করি। তবে তার মত অবাধ্যকে আমীর নিযুক্ত করব না।
আব্দুল আজীজ; আমার মনে হয় তারেক আপনার গোলাম ছিল এজন্যে তার প্রতি আপনার খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
মুসা : না, বেটা! নিজের আজাদকৃত গোলামকে তুচ্ছ জ্ঞান করা ইসলামের পরিপন্থি। আমি ইসলামের কোন বিধানের পরিপন্থি চলার দুঃসাহস করতে পারি না। হযরত আবু বকরের ইন্তেকালের কিছু দিন পূর্বে আমার জন্ম। হযরত উমরের পূর্ণ খিলাফত কাল প্রত্যক্ষ করেছি যা এখনও আমার পূর্ণমাত্র স্মরণ রয়েছে। আমি ঐসব খলীফাদের নকশে কদমে চলতে চাই। তুমি হয়তো শুনেছ যে হযরত উমর (রা) খালীদ ইবনে ওয়ালীদকে সিপাহ্ সালার পদ হতে বিচ্যুত করে ছিলেন। তুমি কি জান ইবনে ওয়ালীদ কত বড় সিপাহ্ সালার ছিলেন?
আব্দুল আজীজ : হ্যাঁ ওয়ালেদে মুহতারাম! তা জানি। তাকে রাসূল (স) সাইফুল্লাহ তথা আল্লাহর তরবারী বলেছিলেন। রাসূল (স) এর ইন্তেকালের পর ধর্মান্তরিত হবার ফেস্তা ব্যাপকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে ছিল, খালেদ তা দমন করে ছিলেন। আপনি তারেককে সাজা দিতে পারেন তাই বলে স্পেনের সর্ব প্রথম আমীর হবার অধিকার হতে তাকে বঞ্চিত করতে পারেন না।
ইঞ্জেলা : তুমি কি চুপ করতে পারছ না। তোমার বাবা সালারে আলা। স্পেনে কাকে আমীর নিযুক্ত করতে হবে তিনি তা ভাল জানেন। তারেক হয়তো ভাল সিপাহসালার এবং বাস্তবেও তাই। কারণ রডারিকের মত বাদশাহকে পরাজিত করা চারটি খানি কথা নয়। কিন্তু তার মাঝে আমীরের গুণাবলী নেই। আমীরের গুণাগুণ তোমার মাঝে রয়েছে।
“আমার মাঝে!” আব্দুল আজীজ আশ্চর্য হয়ে বলল,
ইঞ্জেলা : হ্যাঁ! স্পেনের আমীর হবার গুণাবলী, তোমার মাঝে পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে। তুমি এক মহৎ ব্যক্তির সন্তান। তিনি তোমাকে তোমার যোগ্যতানুসারে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করেছেন।
ঐ রাত্রে আব্দুল আজীজ-ইঞ্জেলা যখন শয়ন করতে গেল তখন আব্দুল আজীজ, মুসার সাথে যে কথা হচ্ছিল তা উঠাল।
আব্দুল আজীজ : ইঞ্জেলা! আমি তারেক ইবনে যিয়াদের বিরুদ্ধে কোন কথা সহ্য করতে পারি না। তুমি এখনো তাকে গোলাম মনে করছ আর আমাকে তার চেয়ে উত্তম জ্ঞান করছ।
ইঞ্জেলা কেবল সুন্দরীই ছিল না বরং বিজ্ঞ এক যাদুকর ছিল। সে খুব ভাল করে জানত কার কাছে কোন সময় কোন কথা বলতে হবে।
ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি অন্তর থেকে তারেকের বিরোধী নই। তুমি তাকে যে পরিমাণ সম্মান কর আমিও সে পরিমাণ করি। তবে তোমার সম্মুখে তার তারীফ করতে ভয় হয় যে তুমি সন্দেহে পড়ে যাও যে, তোমার চেয়ে আমি তারেককে বেশী পছন্দ করি।
ইঞ্জেলার নরম শরীর, মধুময় হাসির যাদুতে কিছুক্ষণের মাঝেই আব্দুল আজীজ যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়ল।
বেশ কিছুক্ষণ নানা কথা-বার্তা বলার পর ইঞ্জেলা বলল,
লক্ষ্য রেখো! তোমার পিতা,যদি স্পেনের আমির তোমাকে বানানোর ফায়সালা করে তাহলে তারেক হকদার” একথা বলে এড়িয়ে যেও না। আমি তোমাকে স্পেনের শাহী তখতে আসনাসীন দেখতে চাই।
“তুমি যা বলতে চাও তাই হবে ইঞ্জেলা।” আব্দুল আজীজ আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলল।
মুসা ইবনে নুসাইর তারেক ইবনে যিয়াদকে টলেডোতে আসার জন্যে পয়গামসহ কাসেদ পাঠিয়ে ছিলেন।