বাহিনী দ্রুত পিছনে ফিরে এলো কিন্তু ফিরে আসতে আসতেই কয়েকটা গাধা ও কয়েকজন ফৌজ পানির তলে হারিয়ে গেল।
সেখান থেকে ফিরে তারেক পাহাড়ী রাস্তা ধরলেন। রাস্তা অত্যন্ত বিপদ সংকুল। একে তো হিংস্র প্রাণীর ভয় তাছাড়া রাস্তা এতো সরু যে একটু খানি বেখেয়াল হলেই নিচে পড়ে জীবন হারানোর রয়েছে শংকা। প্রতিটি ফৌজ ক্লান্ত শ্রান্ত। কিন্তু তারেক ইবনে যিয়াদের উৎসা-উদ্দীপনায় তারা ভেঙ্গে পড়েনি। হয়নি। হিম্মত হারা। অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে পরিশেষে দীর্ঘ দেড়মাস পর ফৌজ পৌঁছল স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর মায়েদার সন্নিকটে।
দু’দিন বিশ্রামের পর তারেক শহর অবরোধ করলেন।
শহরের প্রাচীরের ওপর বেশুমার ফৌজ তীর ও বর্শা হাতে দন্ডায়মান। তারা মুসলমানদেরকে আহ্বান করছে যেন শহর রক্ষায় তারা জীবন বিলিয়ে দেবে।
তারেক ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে শহরের চতুর্দিক প্রদিক্ষণ করলেন। দেখতে পেলেন শহরের প্রাচীর সবদিকে ভীষণ মজবুত। আর বুঝতে পারলেন এখানের মানুষের অন্তর প্রাচীরের পাথরের মত শক্ত ও দৃঢ়।
তারেক এলান করালেন তোমরা যদি স্বেচ্ছায় দরজা খুলে দাও তাহলে তোমাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করা হবে আর যদি আমরা খুলি তাহলে তোমাদের সাথে সেরূপ ব্যবহার করা হবে যেমন দুশমন দুশমনের সাথে করে।
এলানের জবাবে ওপর থেকে তীর বর্ষিত হতে লাগল তার সাথে আওয়াজ এলো পারলে তোমাদের হিম্মতে তোমরা দরজা খোল।
তারেক দরজার ওপর হামলার নির্দেশ দিলেন, সারা দিন হামলা চলল, কিন্তু কোন ফলাফল পাওয়া গেল না।
পরের দিন সকালেও ঐ রকম হামলা-আক্রমণ চলতো কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে শহরের প্রধান ফটক খুলে গেল এবং চারজন ঘোড় সোয়ার সফেদ ঝান্ডা নিয়ে এগিয়ে এলো। তারা সম্মুখে এগিয়ে এসে বলল, তোমাদের সিপাহ্ সালার কোথায় আমরা সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। তাকে তারেক ইবনে যিয়াদ নাগাদ পৌঁছে দেয়া হলো। সন্ধির জন্যে এসেছিল স্বয়ং কেল্লাদার নিজে।
কেল্লাদার : হে সিপাহসালার! বিপদ সংকুল ভয়াবহ জলাভূমি দিয়ে নাকি এসেছেন?
তারেক মৃদু হেসে বললেন, কেন? আপনি কি আশ্চর্য হচ্ছেন যে আমি ঐ জলাভূমি অতিক্রম করে এসেছি?
কেল্লাদার : হ্যাঁ, শুধু আমিই নই যেই শুনবে সেই আশ্চর্যবোধ করবে। ঐ জলাভূমি দিয়ে কেবল জিন-ভূত অতিক্রম করতে পারবে। কোন মানুষ জীবিত ঐ রাস্তা পাড়ি দিতে পারে না।
তারেক ইবনে যিয়াদ : দেখুন আমার দোস্ত! আমি আমার লস্করসহ আপনার সামনে জীবিত। এখন চিন্তা করুন যে ব্যক্তি এত বড় ভয়াবহ উপত্যাকা পাড়ি দিয়ে আসতে পারে তার জন্যে এ শহরের দরজা খোলা কোন ব্যাপার নয়। আপনি যদি ইনসানের খুন প্রবাহিত করতে ভালবাসেন তাহলে আপনার এ আশা পূর্ণ করব তবে জেনে রাখেন আপনি জিন্দা থাকবেন না আর এ শহরের অধিবাসী ও ফৌজকে বহু জরিমানা দিতে হবে।
কেল্লাদার : আমি খুন-খারাবী চাই না। মেনে নিয়েছি, যে ব্যক্তি এত বড় ভয়াবহ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে পারে তার জন্যে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা সন্ধির শর্ত ঠিক করবার এসেছি।
তারেক : ঠিক আছে আপনার শর্ত পেশ করুন।
আমরা শহরবাসীর জান-মাল-ইজ্জত আব্রুর জামানত চাই। লোকদের ঘরে লুটতরাজ হবে…।
তারেক : এ শর্ত তোমাদের নয় বরং এ শর্ত তো ঐ মহান ধর্মের যা আমরা সাথে নিয়ে এসেছি। আমরা এখানে লুটতরাজ ও মানুষের ইজ্জত হরনের জন্যে আসিনি। আমরা মানুষকে ঐ অধিকার ফিরিয়ে দিতে এসেছি যা আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে দিয়েছেন। যান, ফটক খুলে দিন।
এভাবে কোন প্রকার খুন-খারাবী ছাড়াই মায়েদা শহর তারেক ইবনে যিয়াদের হস্তগত হলো।
এ শহরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে লোক নিয়োগ করে তারেক ইবনে যিয়াদ সম্মুখ শহরের দিকে অগ্রসর হলেন। সে শহর কোন প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়া তার হাতে এলো।
তারেক ইবনে যিয়াদ ফৌজকে কিছুদিন বিশ্রাম দানের সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ঐ সকল তুহফা আমার সম্মুখে নিয়ে এসো যা এ পর্যন্ত একত্রিত করা হয়েছে।
তার সম্মুখে তাৎক্ষণিকভাবে তা উপস্থিত করা হলো। তার মাঝে সবই মূল্যবান জিনিস ছিল সবচেয়ে মূল্যবান ছিল ঐ টেবিল যা হযরত সুলায়মান (আ)-এর বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।
তারেক খুশীর আতিশয্যে বললেন, এটা আমিআমীরুল মু’মিনীন এর কাছে তুহফা হিসেবে পেশ করব।
“আমীরুল মু’মিনীনের জন্যে সবচেয়ে কিমতি ও খুব সুরত তুহফাতো হলো উলুস।” এক সালার বলল,
তারেক : স্পেন তো আমি আল্লাহর দরবারে পেশ করে দিয়েছি। এ মুলক আল্লাহর রাসূলের জন্যে। কে জানে কোন সময় দুশমনের একটা তীর আমাকে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দেবে।
তারপর তারেক তুহফা ভাগ করতে লাগলেন, “এগুলো আমীরে মুসা ইবনে নুসাইরের জন্যে আর এগুলো আমীরুল মু’মিনীন এর সম্মানে পেশ করব।
***
যখন তারেক তার সৈন্য বাহিনীকে বিশ্রাম দিচ্ছেন তখন মেরীদাতে আব্দুল আজীজ তার পিতা মুসা ইবনে নুসাইরের কাছে রিপোর্ট পেশ করছে, সে কিভাবে বিদ্রোহ দমন করল এবং কতজন বিদ্রোহীর গর্দান উড়িয়েছে।
আব্দুল আজীজ : আর এ কাজের পিছনে রয়েছে ইঞ্জেলার পূর্ণ অবদান। সে নাহলে বিদ্রোহের খবর আমরা তখন পেতাম যখন বিদ্রোহীরা তামাম বড় বড় শহর : দখল করে নিত। তারপর সে ইঞ্জেলা ও বিদ্রোহীদের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করল।