আব্দুল আজীজ তো আগে থেকেই ইঞ্জেলার জন্যে এমন পাগল পারা ছিল যে শাদী করার পরেও তাকে খ্রীস্টান থাকার অনুমতি দিয়েছে। এখন এত বড় কাজ আঞ্জাম দেয়ার পর আব্দুল আজীজ তার গোলাম হয়ে গেল।
আব্দুল আজীজ বিদ্রোহের অপরাধে নব্বইজন ইহুদী-খ্রীস্টানকে কতল করেছিল।
ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে বিস্তারিত বলেছিল যে, এ বিদ্রোহের আগুন ইহুদীরা জ্বালিয়ে ছিল এবং তারা মুসলমানদেরকে দুশমন জ্ঞান করে। মুসলমানদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার সুবাদে ইহুদীদেরকে জায়গীর দেয়া হয়েছিল তা ছিনিয়ে নেয়া হলো। খ্রীস্টানদের রাজত্বে তাদের যে অবস্থান ছিল সে অবস্থানে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হলো।
যেখানেই বিদ্রোহের খবর পেত আব্দুল আজীজ নিজে সেখানে গিয়ে শক্ত হাতে তা দমন করতে লাগল। এভাবে সে বিজয়ী শহরগুলো বিদ্রোহ মুক্ত করল।
৬. স্পেন আগমন
“নদীর উত্তাল তরঙ্গ, জলাভূমি, কণ্টকাকীর্ণ পথ মুসলমানদেরকে পশ্চাৎপদ করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করল; কিন্তু তাদের আল্লাহু আকবার ধ্বনি, বজ্রের নিনাদ ও পাহাড়সম বাধার প্রাচীর চুর্মার করে সম্মুখে অগ্রসর হলো… আর তারা ফ্রান্স সীমান্তে পৌঁছে গেল।”
আমীরে মুসা ইবনে নুসাইরের স্পেন আগমনে তারেক ইবনে যিয়াদ অত্যন্ত খুশী হয়ে ছিলেন। তিনি খুশীর আতিশায্যে বলেছিলেন,
“আমীরে আফ্রিকা মুসা ইবনে নুসাইর যিনি আমার পীর-গুরু তিনি স্পেনে এসেছেন এ খবর শ্রবণ মাত্র আমি রুহানী শক্তি খুঁজে পাচ্ছি।”
তারেক যখন সংবাদ পেলেন মুসা মেরীদা ও ইসাবালার মত গুরুত্বপূর্ণ শহর করতলগত করেছেন তখন তিনি নতুন প্রেরণা-উদ্দীপনা ফিরে পেলেন।
তারেক : “আমি আমার মুনীবের চরনে টলেড়ো পেশ করতে চেয়েছিলাম, এখন শুধু টলেডো নয় বরং তাকে আমি স্পেনের আরো অনেক বিস্তৃত এলাকা পেশ করব।”
তারেক বিন যিয়াদ টলেডোতে। এখান থেকে তিনি আশে পাশের যে সকল এলাকা বিজয় হয়নি তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সম্মুখে বড় তিনটি শহর ছিল, সেদিকে তিনি রওনা হবার জন্যে প্রস্তুত হলেন। কিন্তু যাবার জন্যে যে রাস্তা তিনি নির্বাচন করলেন তা জলাভূমি, খুবই সংকটময়।
জুলিয়ন : কিন্তু… ইবনে যিয়াদ! তুমি যে রাস্তা দিয়ে যাবার মনস্থ করেছ তা তো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঐ রাস্তা নিয়ে কেউ যাতায়াত করে না। তুমি এত বিপুল পরিমাণ রসদপত্র, সৈন্য-সামন্ত দিয়ে সে পথ কিভাবে অতিক্রম করবে?
তারেক ইবনে যিয়াদ : সহজ রাস্তা কোনটি তা আমি জানি। কিন্তু তুমিতো জান, সে রাস্তা দিয়ে যেতে হলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হবে ফলে রাস্তায় দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। আমি রাস্তাতে সময় ব্যয় করতে চাচ্ছি না। স্পেনের বিস্তৃত এলাকা দ্রুত বিজয় করে আমি সুসা ইবনে নুসাইরের সাথে মুলাকাত করতে চাচ্ছি। বর্বররা যে সাহসী তাদের কাছে অসাধ্য বলে কিছু নেই, ফলে রাস্তা যত কঠিনই হোক তা তারা অতিক্রম করতে পারবে।
আওপাস : আমার প্রিয় বন্ধু! ঐ রাস্তা এত সংকটময় যে আপনার সৈন্য হালাক হয়ে যেতে পারে বা বিপদে পড়তে পারে।
তারেক ইবনে যিয়াদ : আওপাস! এমন কোন বিপদ নেই যা আমাদের সম্মুখে আসেনি। এটা কি কম বিপদ ছিল যে রডারিক এক লাখ সৈন্য নিয়ে আমাদের মাত্র বার হাজার সৈন্যের সম্মুখে এসেছিল। তুমি জান টলেডোতে পৌঁছবার পূর্বে আমরা শুনেছিলাম যে টলেডোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই মজবুত, আমরা যদি সে ভয়ে বসে থাকতাম তাহলে আজ আমরা এখানে পৌঁছতে পারতাম না। আওপাস! আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালা তাকে পথ প্রদর্শন করেন যে তার রাস্তায় দ্বিধাহীন চিত্তে-শংকাহীনভাবে অগ্রসর হয়।
জলাভূমি। বিপদশংকুল রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল তারেক ইবনে যিয়াদের বাহিনী। পাহাড়ী নদীর খর স্রোত। যে কোন সময় বিপদ ঘটতে পারে। কয়েকটা খচ্চর রসদ-পত্রসহ ভেসেও গেল। এহেন মুহূর্তে তারেক ইবনে যিয়াদ ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে লস্কর বাহিনীর পশ্চাৎ-সম্মুখে গিয়ে বিভিন্নভাবে ফৌজের মাঝে উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলতে লাগলেন তিনি চিৎকারে করে করে বলতে লাগলেন,
“তোমাদেরকে এ দরিয়া, নদী রুখতে পারবে না।”
“তোমরা পাহাড়ী প্রাচীর ভেদ করতে পারবে।”
“আল্লাহ্ তোমাদের সাথে আছেন।”
“হে আল্লাহর লস্করেরা! মঞ্জিল সন্নিকটে।”
“তোমরা জান্নাতের রাস্তায় অগ্রসর হচ্ছে।”
“গোটা স্পেন তোমাদের, স্পেনের তাবৎ খাজানা তোমাদের।”
আল্লাহকে স্মরণ করে অগ্রসর হও।
তারেক একথাগুলো এমন স্পৃহা-উদ্দীপনা নিয়ে বলছিলেন, ফৌজরা মুসীবতে থাকা সত্ত্বেও তাদের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। স্বমরে তারা জবাব দিল,
“তারেক! আমরা তোমার সাথে রয়েছি।”
“আমরা তোমাকে আল্লাহর সম্মুখে লজ্জিত হতে দেব না।”
“আল্লাহু আকবার… আল্লাহু আকবার।”
চলতে চলতে এমন এক এলাকা এলো যা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ঢাকা। তারেক ইবনে যিয়াদ তার মাঝ দিয়ে ফৌজ নিয়ে রওনা হলেন। ঘোড়ার পদতল হতে পানি উঠতে লাগল। কিছুদূর অগ্রসর হতেই শোর-গোল শুরু হয়ে গেল। চিৎকার ভেসে আসতে লাগল বাঁচাও, চাচাও। ঘোড়া এমনভাবে বিকট আওয়াজ করতে লাগল যেন বড় মসীবতের সম্মুখীন হয়েছে। একজন হাঙ্গর, হাঙ্গর করে চিৎকার করে উঠল।
দেখতে ঘাস দেখা গিয়ে ছিল আসলে তা ছিল গভীর জলাভূমি। পানির ওপর ঘাস বেড়ে উঠে ছিল।