ইহুদীরা গোপনে এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে খ্রীস্টানদের কথাই কেবল সকলের মাথায় আসছিল ইহুদীদের কথা কেউ চিন্তাই করতে পারত না। ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে ইহুদী ও ঈসায়ী লাড়কীদের ব্যবহার করা হতো।
সংবাদ পাওয়া মাত্র মুসা তার বড় ছেলে আব্দুল আজীজকে সাত আটশত ফৌজ নিয়ে ইসাবালাতে রওনা হবার নির্দেশ দিলেন। আর বললেন, কেবল বিদ্রোহ দমনই নয় বরং ষড়যন্ত্রকারীদেরকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
মুসা : ষড়যন্ত্রকারীদের সর্বনিম্ন শাস্তি মৃত্যু দন্ড। আমার সন্দেহ হচ্ছে এ ষড়যন্ত্রের মূলে রয়েছে ইহুদীরা।
ইহুদীরা! আব্দুল আজীজ আশ্চর্য হয়ে বলল, তারা তো আমাদের পক্ষে রয়েছে।
মুসা : ইহুদীরা তারা নিজেরা নিজেদের সাথে রয়েছে। তারা অন্য কারো সাথে থাকে না। তুমি সকলের প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখবে। কাউকে সন্দেহের উর্ধ্বে জ্ঞান করবে না।
আব্দুল আজীজ তার খ্রীস্টান স্ত্রী ইঞ্জেলাকে নিয়ে সাত শত ফৌজসহ ইসাবালাতে পৌঁছলো। পৌঁছেই গোয়েন্দা বাহিনীকে নির্দেশ দিল দু’ একদিনের মাঝে বের করতে হবে বিদ্রোহ কিভাবে শুরু হলো এবং এর পিছনে কাদের হাত রয়েছে। জংগী কয়েদী যারা শ্রমিক হিসেবে ছিল তাদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করতে লাগল কে কে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। কয়েদীরা ভয় পেয়ে অস্বীকার করল। আব্দুল আজীজ দু’জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিল তারা যেন যে কোন উপায়ে এটা উদঘাটন করে। তারা কয়েদীদেরকে লোভ দেখিয়ে পরিশেষে চার জনকে নির্দিষ্ট করল। তিনজন খ্রীস্টান, একজন ইহুদী। হাতিয়ার একটা গির্জাতে জমা করা হচ্ছিল। তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হলো মূল ব্যক্তিদেরকে বের করার জন্যে, তারা দু’জনের নাম বলল, তাদেরকেও গ্রেফতার করা হলো।
ইঞ্জেলা দেখল আব্দুল আজিজ এত পেরেশান যে রাত্রে ঘুম পর্যন্ত আসতে পারে না।
এক রাত্রে ইঞ্জেলা তার স্বামীকে পেরেশান অবস্থায় বিন্দ্ৰি দেখে বলল,
সকল সৈন্য সামন্ত্র বিদ্রোহীদেরকে খতম করার জন্যে দিবা-রজনী ছুটে বেড়াচ্ছে তার পরও তুমি এত পেরেশান কেন?
আব্দুল আজীজ : তুমি কি জান বিদ্রোহের একটা স্ফুলিঙ্গ গোটা মুলক জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতে পারে? মুলককে এর হাত থেকে বাঁচান আমার দায়িত্ব। তুমি তো জান এ মুলকের জন্যে আমরা কত জান কুরবানী করেছি। শহীদের রূহের কাছে এবং আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাব দিহি করতে হবে। সেদিন আমার চোখে ঘুম আসবে যেদিন বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ব্যক্তিকে আমার সামনে কতল করা হবে।
ইঞ্জেলা : আমাকেও ইযাজত দাও আমি এ ব্যাপারে কিছু কাজ করি।
তুমি কি করবে?
আগামীকাল বড় গির্জাতে গিয়ে পাদ্রীকে বলব, আমি এক মুসলমানের সাথে শাদী করেছি কিন্তু খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করিনি। তার পর যা করি তা তুমি জানতে পারবে।
আব্দুল আজীজ তাকে অনুমতি দিল।
পরের দিন সকালে সে গির্জাতে চলে গেল। বড় পাদ্রী তাকে দেখে তো আশ্চর্য হয়ে গেল।
পাদ্রী : আমি তো শুনেছি তুমি এক মুসলমান ফৌজী কমান্ডারের সাথে শাদী করেছ। এখন আবার গির্জাতে তোমার কি কাজ?
ইঞ্জেলা মৃদু হেসে বলল, গির্জাতেই তো আমার কাজ, গির্জার ইজ্জত রক্ষার্থে আমি যে কাজ করেছি আপনারা সকল পুরুষ মিলেও তা করতে পারেননি কথা বলেই সে পাদ্রীর হাত ধরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
ইঞ্জেলার মুচকি হাসিতেই ছিল যাদু। তারপর অট্টহাসি দিয়ে তা মহা যাদুতে পরিণত করল। পাদ্রীর হাত ধারণ করাতে পাদ্রী একেবারে অভিভূত হয়ে পড়ল।
পাদ্রী : তাহলে তুমি অন্য কোন অভিপ্রায়ে ঐ সালারের সাথে শাদী করেছ?
ইঞ্জেলা : হ্যাঁ। সর্ব প্রথম আপনার থেকে হলফ নেব যে আপনি আমার সকল কথা গোপন রাখবেন। গির্জাতে ইবাদতের বাহানায় আপনার কাছে এসেছি। আমাকে একজন বন্ধু মনে করে কথা বললেন, বাদশাহর বিধবা ও বিজয়ী সালারের পত্নি জ্ঞান করবেন না।
পাদ্রী : কি বলছ তুমি! আমি গির্জাতে বসেছি, তুমি যদি বল তাহলে কুমারী মরিয়ামের তাসবীরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কসম খেয়ে বলব যে,…
না ফাদার! ইঞ্জেলা তাকে বাধা দিয়ে বলল, আপনার এ কথাই আমার কাছে হলফের মত। আমি বলছিলাম যে, আমি ঐ সালারের সাথে শাদী ঠিকই করেছি কিন্তু নিজ ধর্ম ত্যাগ করিনি। সে আমার এমন পাগল হয়েছিল যে আমার শর্ত মেনে নিয়েছে। তাকে খুশী করার জন্যে বলেছিলাম কিছু দিন পরে আমি ইসলাম গ্রহণ করব।
পাদ্রী হেসে বলল, এটা তোমার সৌন্দর্যের মহিমা ইঞ্জেলা
তাই যদি হয় তাহলে এদ্বারা আমি আরো ফায়দা লুটতে চাই। আমার স্বামী বিদ্রোহের আগুন নির্বাপনের জন্যে এসেছে আর আমি সে আগুন আরো প্রখর করবার জন্যে এসেছি। আমি জানি যেসব লোক ধরা পড়েছে তারা মূল হোতা নয়। মূল হোতা কারা তাদেরকে বাঁচানোর জন্যে আমার জানা প্রয়োজন তারা কারা।
“তুমি কি তোমার স্বামীকে তাদেরকে ক্ষমা করার জন্যে বলবে?”
“না ফাদার! আমার স্বামী কাউকে ক্ষমা করে না, তার অবস্থা তো এমন যে তার কাছে গিয়ে কেউ যদি কারো নাম পেশ করে তাহলে তাকে কতল করবে। আমি এখান থেকে সকলকে বেরিয়ে যাবার ইন্তেজাম করব।”
“প্রথমে তুমি আমাকে তো রক্ষা কর। বিদ্রোহের ব্যাপারে এ গির্জাও শামিল।”
“তা আমি জানি, আমার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস হওয়া দরকার যে আমি ঐ সালারের সাথে শাদী এ কারণে করেছি যাতে ইসলামী হুকুমতকে অন্তঃসার শূন্য। করে তা চিরতরে খতম করতে পারি। তা আমি কিভাবে করব সে প্রশ্ন আমাকে করবেন না। শুধু এতটুকু বলছি যে আমি আমার স্বামীর বাবাকে আমার আশেক। বানিয়ে তার সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলব তারপর এমন নাটক তৈরী করব যে তার বাপ-বেটা পরস্পরে খুন খারাবী করে মরবে।”