নেকাবহীন ইঞ্জেলার চেহারা দেখে আব্দুল আজীজ চমকে উঠল। ইঞ্জেলার চোখে-মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ছিল।
অকস্মাৎ আব্দুল আজীজের মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, তুমি রানী হবে, এ মুলকের রানী… আমার অন্তর রাজ্যের রানী।
ইঞ্জেলা : বিধি মুতাবেক কি শাদী হবে?
আব্দুল আজীজ : ইসলামী কানুন মুতাবেক শাদী হবে। আর তুমি…
ইঞ্জেলা : আমি ইসলাম কবুল করব না। তবে ইসলামী কানুন মুতাবেক শাদী কবুল করে নেব।
আব্দুল আজীজ তাকে বারবার বলল, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর কিন্তু সে তা মানল না বরং বলল আমি পরে ইসলাম গ্রহণ করব। আব্দুল আজীজ মেনে নিল এবং ইঞ্জেলা যে ইসলাম গ্রহণ করেনি তা গোপন রাখল।
পরের দিন আব্দুল আজীজের শাদী ইঞ্জেলার সাথে হয়ে গেল। আব্দুল আজীজ সৌন্দর্যের মোহে অন্ধ হয়ে পড়ল কিন্তু সে বুঝতে পারলনা কিছু দিন পরেই এ আওরাত তাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করবে যাতে ইতিহাস থ… মেরে যাবে।
দেড় বছর পূর্বে মেরীদার মত একটি বড় শহর ইসাবালা মুসা জয় করে সেখানে প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্যে ইহুদিদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পূর্বেই বলা হয়েছে স্পেনে ইহুদিরা ছিল নির্যাতিত-নিপীড়িত। এ কারণে তারা রডারিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গোপনে তারেককে সাহায্য করে ছিল। এর প্রতিদান হিসেবে তারেক তাদেরকে বড় বড় পদ প্রদান করে ছিলেন আর তাদের ওপর যে অযথা টেক্স ছিল তা মওকুফ করে ছিলেন। মুসাকে তারা সাহায্য করেছিল তাই মুসাও তাদেরকে পদে বসিয়ে ছিলেন। কিন্তু মুসা ইবনে নুসাইর এবং তারেক ইবনে যিয়াদ একথা ভুলে গিয়েছিলেন যে ইসলাম ও মুসলমানের বড় দুশমন ইহুদীদের চেয়ে আর কেউ নেই।
ইহুদীরা তাদের আসলরূপ প্রকাশ করা শুরু করল। সর্ব প্রথম ইসাবালাতে তাদের ষড়যন্ত্রের বিজ বপন করল। সেখানে তারা দু’জন ধর্মগুরু ও চারজন ইহুদী এক ঘরে গোপন বৈঠকে বসল।
ধর্মগুরু : আমাদের এক উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেছে। রডারিক উৎখাত করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের সাথে মিলে আমরা তা করেছি। এখন আমাদের আসল উদ্দেশ্যে আসা দরকার। আর আপনারা জানেন আমাদের সে মূল উদ্দেশ্য হলো জেরুজালেম পূনরুদ্ধার করা। খৃষ্টবাদের রাজত্ব খতম করা আমাদের মাকসাদ ছিল তা আমরা মুসলমানদের হাতে করিয়েছি। তার বিনিময়ে আমরা বড় বড় পদ দখল করেছি। একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মুসলমানরা আমাদের দুশমন। আর এ দুশমন কখনো শেষ হবে না। আপনারা লক্ষ্য করছেন দিন দিন ইসলাম বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে এটা রোধ করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। আর এ কাজ খ্রীস্টানদের সাথে মিলে করতে হবে। স্পেনকে আমরা ইসলামের কবরস্থান বানাব।
ইহুদী জাতি সৃষ্টিগতভাবে ধোকাবাজ, ষড়যন্ত্রকারী ও ফেত্নাবাজ। তাদের সে ষড়যন্ত্র শুরু হলো।
সে সময় ইসাবালার হাকিম ও কেল্লাদার ছিলেন দামেস্কের অধিবাসী আৰু বকর। তিনি এক বিকেলে বাগানে পায়চারী করছিলেন। এমন সময় এক নওজোয়ান খুব সুরত লাড়কী চুল উসক-খুসক, গায়ে জীর্ণ-শীর্ণ পোষাক। সে আবু বকরকে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝল যে তার ওপর অনেক জুলুম-নির্যাতন হয়েছে। আবু বকর তার থেকে জানতে চাচ্ছিলেন সে নির্যাতনকারী কে? কোন মুসলমান নয়তো? লাভূকী কাঁদতে লাগল। আবু বকর তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিতে লাগলেন। সে আবু বকরের হাত নিজের হাতে নিয়ে চুমু খেল। মেয়েটির কাছে একটা ঝুড়ী ছিল। তাতে কয়েকটি আপেল ও অন্যান্য ফল ছিল। সেখান থেকে একটা আপেল সে আবু বকরকে দিয়ে ইশারা করল খাবার জন্যে।
আবু বকর মনে করলেন, গরীব মেয়ে তাকে সম্মান করে শুকরিয়া আদায় করতে চাচ্ছে তাই তিনি সে আপেল খেলেন। মেয়েটি সালাম করে চলে গেল।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আবু বকর নিজ ঘরে ফিরে আসছেন, পথি মাঝে তার মাথা ঘুরা শুরু হলো। বাড়ীতে পৌঁছুতে পৌঁছুতে তার অবস্থা বড্ড খারাপ হয়ে গেল। ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করলেন, “কিছুক্ষণ পূর্বে কি কিছু খেয়েছিলেন?”
আবু বকর লাড়কীর অবস্থা বলে তার থেকে একটি আপেল খেয়ে ছিলেন বললেন।
ডাক্তার : আপেলের ভেতর হয়তো কোন বিষাক্ত কিছু ছিল বা কৌশলে তার ভেতর বিষাক্ত কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আবু বকর ঐ মেয়ের কথা বলে বারবার পরিতাপ করতে লাগলেন।
ডাক্তার ঔষধ দিলেন, কিন্তু প্রাণ রক্ষা করতে পারলেন না।
মুসাকে সংবাদ দিলে তিনি নতুন হাকিম নিযুক্ত করলেন।
আবু বকরের ইন্তেকালের দুতিন দিন পরে ফৌজের এক নায়েবে সালার ঔ মেয়ের হাতে কিছু খেয়ে মারা গেল।
দু’তিন দিন পর একজন মুসলমান উপরস্থ কর্মকর্তা রাত্রে একাকী পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, পিছন দিক থেকে তাকে খঞ্জর মেরে কতল করা হলো। সকালে রাস্তায় তার লাশ পাওয়া গেল। এভাবে কয়েক দিনের মাঝে ত্রিশজন মুসলিম কর্মকর্তা মারা গেল। কেউ মরলো বিষপানে কেউ তলোয়ারের আঘাতে কেউ বা খঞ্জরে।
মুসাকে খবর দেয়া হলো কয়েক দিনের মাঝে ত্রিশজন হাকিম মারা গেছেন। লোক কর দিতে বাহানা শুরু করেছে। কয়েদীদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। খবর পাওয়া গেছে কিছু কয়েদী হাতিয়ার সগ্রহ করে পালিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি যদি সামাল না দেয়া হয় তাহলে বিদ্রোহ হবার সমূহ সম্ভানা।