আল্লাহর এ ফরমানের পর বান্দার কি অধিকার থাকতে পারে দরবারের জন্যে নির্দিষ্ট সময় ও স্থান নির্ধারণ করার। এমনটি যদি আমি করি তাহলে পাপী হবো। আমি ফেরাউন নই, বাদশাহও নই। আপনি তো কওমের নেতা। আপনার কওমের যে কোন ব্যক্তি যদি আমাকে রাস্তার মাঝে দাঁড়াতে বলে তাহলে আমি অবশ্যই দাঁড়াব।
প্রধান পাদ্রী : আপনি খোদার বিধানের পাবন্দ বলে মনে হচ্ছে। আমি আপনার কাছে আবেদন করতে যাচ্ছি, আমাদের গির্জাগুলোর যেন কোন অসম্মানী না হয় এবং আমাদের ইবাদতের ওপর যেন কোন পাবন্দী না লাগে।
মুসাঃ এর প্রতি আমি অবশ্যই লক্ষ্য রাখব। ইসলামের নির্দেশ, কোন মুলক বিজয় করলে সেখানের ধর্ম ও ইবাদত খানার সম্মান যেন রক্ষা করা হয়। আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনাদের উপাসনালয়ের সম্মানপূর্ণ মাত্রায় রক্ষা করা হবে। তবে এ নির্দেশ আপনকে দেব যে গির্জাতে যেন হুকুমতের বিরুদ্ধে কোন কথা না বলা হয় এবং আপনারা আপনাদের ধর্মের কোন প্রচার-প্রসার করতে পারবেন না।
পাদ্রী : আপনি কি ইসলামের তাবলীগ করবেন?
মুসা : কোন প্রয়োজন হবে না। এতদিন হলো এ মুলক আমাদের অধিনে এসছে আপনি কি কোন অভিযোগ শুনেছেন বা কোন খবর আপনার কাছে পৌঁছেছে যে, কোন মুসলমান সিপাহী বা কোন অফিসার কোন রমণীর ইজ্জত আক্রর ওপর আঘাত হেনেছে?
না।
কোন মুসলমান কারো ঘরে প্রবেশ করে কিছু চেয়েছে।
না
কেউ কোন অনিষ্ট সৃষ্টি করেছে।
না।
মুসা : আমরা যা করছি এটাই ইসলামের তাবলীগ। আপনার নসীহত আমাদের এ তাবলীগের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আপনার ওপর আরেকটা হুকুম জারি করছি তাহলো, কোন ইহুদী বা খ্রীস্টান যুবতী রমণীকে আপনারা জোরপূর্বক যাজিকা বানাতে পারবেন না। আমরা জানি ইবাদত খানায় তাদের সাথে কি ব্যবহার করা হয়। মনে রাখবেন আমরা কোন শাহী হুকুম, শাহী প্রতাব নিয়ে এখানে আসিনি। আমরা এসেছি এক আদর্শ নিয়ে। আমরা মানুষের মুখবন্ধ করবার জন্যে আসিনি বরং তাদের মুখ খুলবার জন্যে এসেছি। তাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে আমি যদি ভুল পথে চলি তাহলে তারা আমাকে বাধা প্রদান করতে পারবে। পাদ্রী হয়তো আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু মুসার বক্তব্য ও ব্যবহার তাকে মুখ বন্ধ করে দিল। সে উঠে সম্মান জানিয়ে চলে গেল।
***
এক রাত্রে একাকী আব্দুল আজীজ তার বাবাকে বলল, বাবা! ইঞ্জেলা নামী ঐ লাকী আমার খুব পছন্দ যাকে আপনার সম্মুখে পেশ করা হয়েছে।
মুসা : তার চেহারায় নেকাব ছিল। পাতলা নেকাবের কারণে সুন্দরী মনে হয়েছে হয়তো বাস্তবে তেমন সুন্দরী নাও হতে পারে।
আব্দুল আজীজ : আমি তার চেহারার সৌন্দর্যের প্রতি লক্ষ্য করছিনা। তার, সাহসীকতা আমাকে প্রভাবান্নিত করেছে। আপনার সাথে সে যেভাবে কথা বলেছে স্পেনের কোন জেনারেলও এমনভাবে বলতে পারবে না। আমি তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এখানের প্রতিটি জেনারেল তাকে শাদী করার জন্যে পাগল পারা ছিল। কিন্তু সে সকলকে বলেছে তোমরা আগে মেরীদা রক্ষা কর। হামলাকারীদেরকে চিরতরে খতম করে দাও। সে সকলের মাঝে যুদ্ধস্পৃহা জাগিয়ে ছিল। আমার এমন একজন বিবিই দরকার।
মুসা : আমার প্রিয় বৎস! তার সাথে তোমার শাদীর ইয়াজত আমি দেব। আর আগে তুমি তাকে ভাল করে যাচাই-বাচাই করে নাও। সে শাহী খান্দানের। তুমি তো জান শাহী খান্দানের লোক কেমন হয়। এমন যেন না হয় তার পেট থেকে আমার যে বংশ পরমপরা সৃষ্টি হবে তা যেন আমাদের লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
মেরীদার মহলে ইঞ্জেলাকে পৃথক এক কামরাতে থাকতে দেয়া হয়েছিল। তার জন্যে খাদেমাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। একদিন খাদেমা তাকে খবর দিল এক আরব সেনাপতি তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে।
ইঞ্জেলা : বৃদ্ধ না যুবক!
খাদেমা : যুবক, আপনার সমবয়সী।
ইঞ্জেলা : ভেতরে পাঠিয়ে দাও।
আব্দুল আজীজ : আমি সিপাহ্ সালারের বেটা। সিপাহ সালার মুসা ইবনে নুসাইর আমীরে আফ্রিকা আর বর্তমানে আমীরে উন্দুলুসও। তারপরে আমি হবো আমীরে উন্দুলুস।
“এখানে আপনার আগমনের হেতু?”
আব্দুল আজীজ : “এত বড় অজ্ঞা?” তুমি কি এখনো নিজেকে স্পেনরানী জ্ঞান করা।
ইঞ্জেলা : স্পেনের রানী না হতে পারি কিন্তু নিজের অন্তরের রানী তো বটে। এটা এমন এক সালতানাত যা আমার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। স্মরণ রেখ সালার! একজন বাদশাহর বিধবা রমণী। শাহী খান্দানে পয়দা হয়েছি। এজন্যে আমার মাঝে ও সাধারণ মহিলাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ মহিলারা তো তোমাদের মত সালারদের দাসী হওয়াকেও ধন্য বলে জ্ঞান করে।
আব্দুল আজীজ : আমি তোমাকে দাসী-বাদী বানাতে আসিনি! বাদশাহর বিবি ছিলে আবার বাদশাহরই বিবি হবে।
ইঞ্জেলা : তুমি কি আমাকে শাদী করতে চাও?
আব্দুল আজীজ : হ্যাঁ। আমি বাবার থেকে ইযত নিয়েছি। তোমাকে যদি দাসী-বাদী বানানোর ইচ্ছে থাকত তাহলে এখানে এভাবে রানী হয়ে থাকতে না।
ইঞ্জেলা : আমি বিবি হব না কি রানী?
“নেকাব সরিয়ে দিলে সহীহ জওয়াব পাবে।”
ইঞ্জেলা কেবল চেহারার নেকাবই নয় মাথার কাপড়ও সরিয়ে দিল। আব্দুল আজীজ এ যুবতীর ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করে ছিল তারা বলেছিল তার বয়স প্রায় ত্রিশ বছরের কাছাকাছি। কিন্তু তাকে দেখতে মনে হয় যোড়শী ললনা, সে এত অনিন্দ্য সৌন্দর্যের মহিমায় উদভাসিত যে তাকে প্রথমবার যেই দেখে সেই বিস্ময় অভিভূত হয়ে পড়ে। তার চোখে রয়েছে সম্মোহনী যাদু। কথায় রয়েছে মধুময় এমন এক অস্বাভাবিক ক্ষমতা, তাতে যে কেউ হয়ে যায় পাগল পারা। পরিণত হয় তার অনুগত দাসে।