স্পেনী জেনারেল সন্ধির জন্যে কতগুলো শর্ত দিল কিন্তু মুসা ইবনে নুসাইর তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন,
পরাজিত কি তোমরা হয়েছ না আমরা হয়েছি? আমরা শর্ত পেশ করব তোমরা নও। তোমরা যদি আমাদের শর্ত না মন তাহলে তোমাদের ফৌজ কচু কাটা হবে।
স্পেনী জেরারেল : আপনার শর্ত কি?
মুসা : তোমাদের ফৌজ হাতিয়ার সমর্পণ করবে, তামাম ফৌজ আমাদের কয়েদী হবে। আমরা নয় মাস অবরোধ করে রেখেছি, আমাদের বহু জীবনের ক্ষতি হয়েছে, আমরা তার মূল্য আদায় করব। শহরে যত স্বর্ণ রোপা আছে তা চাই সরকারী হোক বা জনগণের তা আমাদের কাছে অর্পণ করতে হবে। যেহেতু উদ্দেশ্য পরিস্কার বুঝা যাচ্ছেনা তাই বড় বড় অফিসারকে আমাদের কাছে যুদ্ধপন হিসেবে রাখতে হবে। ফিরে যাও, যদি শর্ত গ্রহণীয় হয় তাহলে তামাম ফৌজকে একত্রিত করে হাতিয়ার জমা কর আর বড় বড় অফিসারদেরকে আমার কাছে নিয়ে আস।
স্পেনী জেনারেল ফিরে গেল। মুসা তার ফৌজকে হামলার জন্যে প্রস্তুত থাকতে বললেন।
অল্প কিছুক্ষণ পরেই সে জেনারেল পঞ্চাশজন সম্ভ্রান্ত পুরুষ ও সমপরিমাণ রমণী সাথে নিয়ে ফিরে এলো।
জেনারেল : এদের সকলকে আপনি পন হিসেবে রাখতে পারেন। তবে এদের সাথে সাধারণ কয়েদীর মত ব্যবহার না করার জন্যে আপনার কাছে আবেদন করব, এরা সাধারণ জনতা নয় বরং সকলে বড় অফিসার। তাছাড়া শাহী খান্দানের লোকও রয়েছে। ফৌজ তাবৎ হাতিয়ার একত্রিত করেছে আপনি শহরে প্রবেশ করতে পারেন।
মুসা : আমরা এদেরকে সম্মানের সাথে রাখব। তুমি তো জানই আমরা পণ কেন চেয়েছি।
স্পেনী জেনারেল : আমি একজন জওয়ান আওরতের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই, তার নাম ইঞ্জেলা। বাদশাহ রডারিকের বিধবা বিবি। আপনার কাছে তার কোন গুরুত্ব নেই কিন্তু সে আমাদের কাছে পূজনীয়।
মুসা : সে তোমাদের বাদশাহুর বিধবা পত্নী এ জন্যে?
স্পেনী জেনারেল : এ জন্যে নয় সিপাহ্ সালার! এ রমণীই আমাদের ফৌজ ও জনসাধারণের মাঝে স্পৃহা-প্রেরণা জাগিয়ে তুলে ছিল। তারা যে প্রাণ পণ লড়াই করেছে এ রমণীরই বদৌলতে। আমাদের যদি রসদ বন্ধ না হয়ে যেত তাহলে আপনি এ শহরের কাছেও আসতে পারতেন না। আপনি হয়তো তাকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিবেন। সেই আপনাকে এত দীর্ঘ দিন অবরোধ করে রাখতে বাধ্য করেছে এবং আপনার অনেক জীবনের ক্ষতি করেছে। এজন্যে দাবী নয় আবেদন করছি, সে রমণীর সম্মান যেন ভূলণ্ঠিত না হয়।
মুসা : এরূপ আওরতকে আমরাও বড় মনে করি। আমরা তার সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখব। এদের মাঝে কে সে মহিলা, তাকে দেখতে চাই।
জেনারেলের ইশারাতে কালো পোষাক পরিহিতা, নেকাবে মুখ চাকা এক রমণী সামনে এলো। রমণীদের মাঝে তার চেহারাতেই কেবল নেকাব ছিল।
মুসা : আমরা তার চেহারা নেকাব ছাড়া দেখতে চাই।
রমণীঃ আমি আমার চেহারা কেবল তার সামনে নেকাব মুক্ত করব যে আমাকে শাদী করবে। আর আমি শাদী তার সাথে করব যার অবস্থান ও সম্মান হবে শাহান শাহ্। আমি কারো দাসী বা রক্ষিতা হবো না, কেবল বিবি হতে চাই। আমার সাথে যদি জবরদস্তি করা হয় তাহলে আমার ও তার জিন্দেগীর শেষ দিন হবে। আমি রানী ছিলাম, রানী হতে চাই, আর আপনি নিজেই ওয়াদা করেছেন আমার ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করবেন।
মুসা : আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকব। আমাদের মনযোগ পুরো স্পেনের দিকে। এক খুব সুরত আওরতের দিকে নয়। আমরা তোমার সাহসীকতা ও ইজ্জতের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখব। তুমি কারো দাসী-বাদীতে পরিণত হবে না।
মুসলমান ফৌজ শহরে প্রবেশ করল। মুসা প্রথমে নির্দেশ দিলেন, মেরীদা শহরবাসী ও ফৌজের জন্যে খানা তেরী করার জন্যে। যেন লক্ষ্য রাখা হয়, কেউ ক্ষুধার্ত না থাকে আর যে সরদ আটক করা হয়েছে তা যেন বাজারে দিয়ে দেয়া হয়।
প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনের জন্যে মুসা ইবনে নুসাইর আরবী হাকিম নিয়োগ করলেন আর তাদের অধিনে নিয়োগ দিলেন খ্রীস্টান কর্মচারী। তাদেরকে নির্দেশ দিলেন প্রত্যেকের থেকে তার সামর্থ অনুপাতে কর উসুল করার জন্যে। কাউকে যেন বাধ্য না করা হয় যে তার বিবি বাচ্চা ভুখা থাকে। এদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যে বিশেষ ভাবে হুকুম দিলেন।
শহরের একটি ময়দানে ফৌজ ট্রেনিং হচ্ছে। মুসা সে ট্রেনিং প্রত্যক্ষ করছেন। এরি মাঝে তাকে খবর দেয়া হলো, শহরের প্রধান পাদ্রী এসেছে এবং জিজ্ঞেস করছে সিপাহ্ সালার কখন দরবারে বসবেন তখন সে সাক্ষাৎ করতে আসবে।
মুসা লক্ষ্য করলেন, প্রধান পাদ্রী তার আরো কয়েকজন সহযোগীসহ ময়দানের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। মুসা তাকে আহ্বান করলেন।
প্রধান পাদ্রী : আমীরে আলা দরবারে কখন বসবেন? আমি কিছু আবেদন নিয়ে আপনার সাথে মুলাকাত করতে চাই।
মুসা মৃদু হেসে বললেন, আপনি যখন এসে গেছেন তখন এখানেই দরবার বসিয়ে দিচ্ছি। আমরা সকলে আল্লাহর দরবারে দন্ডায়মান, বান্দার কোন দরবার থাকে না। এখানেই বসা যাক, একথা বলেই মুসা সেখানেই বসে পড়লেন। প্রধান পাদ্রী মাটিতে বসতে ইতস্ত: করছিল।
মুসা : বসুন। এটাই আমাদের তরীকা। যেখানে কোন অভিযোগ শোনা যায়, কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, আমরা সেখানে বসেই তার সমাধান করি।
আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “যখন যে অবস্থায় আমাকে আহ্বান করবে আমি তা শ্রবণ করব।”