আব্দুল আজীজ ইবনে মুসা : আমরা শহরের চারদিকে ঘুরে দেখেছি, এমন কোন রাস্তা পাইনি যা দিয়ে বাহির থেকে রসদ-পত্র আসতে পারে।
মুসাঃ কোন রাস্তা অবশ্যই আছে। আমরা প্রথম দিন পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যে রাস্তায় গিয়ে ছিলাম আমাদের সামনে দুটো তীর এসে পড়ে ছিল, ঐটাই রসদ আসার রাস্তা বলে মনে হয়। আজ রাতে কয়েকজন সেদিকে গিয়ে দেখবে সে পথ দিয়ে শহরে রসদ-পত্র প্রবেশ করে কিনা।
“আমি আজ রাতে সেদিকে যাব।” মুসার ছেলে আব্দুল্লাহ্ বলল।
মুসা : তোমার সাথে আরো কয়েকজনকে নিয়ে যাবে আর পায়ে হেঁটে যাবে ঘোড়ায় চড়ে গেলে পদ ধ্বণীতে তারা টের পেয়ে যেতে পারে। সাথে দোভাষী নিয়ে যাবে।
রাত্রে আব্দুল্লাহ বেশ দূরে ঘুরে শহরের পশ্চাতে সে পাহাড়ী রাস্তায় পৌঁছে গেল। রাস্তার পাশ দিয়েই নদী বয়ে চলেছে। আব্দুল্লাহ্ খুব সতর্কতার সাথে ধীর পদে সামনে এগুতে লাগল। ঘন গাছ-পালা, চাঁদনী রজনী, নদীর কুলকুল ধ্বনী শুনা যাচ্ছে। এর মাঝ দিয়ে আব্দুল্লাহ্ তার সঙ্গী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। কিছুদূর অগ্রসর হতেই মানুষের আওয়াজ শুনতে পেল। আব্দুল্লাহ তার সাথীসহ উঁচু ঘাসের মাঝে লুকিয়ে পড়ল।
দুতিন জন ব্যক্তি পরস্পরে কথা-বার্তা বলতে বলতে আসছিল। তাদের পদ ধ্বণী শোনা গেল। কিছুদূর এসে তারা দাঁড়িয়ে গেল। আব্দুল্লাহ্ দোভাষীকে জিজ্ঞেস করল, তারা কি বলছে?
দোভাষী : তারা কিসতির ব্যাপারে কথা বলছে। তারা বলছে আজও যদি কিসতি না আসে তাহলে সবাই ক্ষুধায় মারা যাবে।
দোভাষী আব্দুল্লাহকে বলল, রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এ রাস্তা দিয়েই শহরে রসদপত্র পৌঁছে।
আব্দুলাহ : তুমি মাথা নিচু করে ঝুঁকে ঝুঁকে পিছনে গিয়ে আমাদের সাথীদেরকে আসতে বল, তারা যেন ঝুঁকে ঝুঁকে নিচু হয়ে এখানে আসে।
তাদের কাছে খবর পৌঁছা মাত্র তারা আব্দুল্লাহর কাছে উপস্থিত হলো। আব্দুল্লাহ্ তার সাথী মুজাহিদদেরকে বলল, এ দুজন লোককে পাকড়াও করতে হবে। তারপর সে তরজুমানকে বলল, তুমি তাদের কাছে এমনভাবে যাও যেন তুমি অনেক দূর থেকে এসেছ ফলে তুমি খুবই ক্লান্ত।
তারা তোমার দিকে লক্ষ্য করলে আশে-পাশের কোন গ্রামের নাম বলে সেখানে যাবার রাস্তা জিজ্ঞেস করবে তারপর যুদ্ধের আলাপ করতে করতে এদিকে নিয়ে আসবে।
স্পেনী দোভাষী অত্যন্ত চালাক ছিল। সে আস্তে আস্তে তাদের দিকে রওনা হলো। তার পদ ধ্বণীতে তারা তার দিকে ফিরে তাকাল। গোভাষী দু’তিন কদম চলেই বসে পড়ল, ভাবটা এমন যেন অনেক দূর থেকে আসার কারণে একেবারে ক্লান্ত-শ্রান্ত।
দোভাষী স্পেনী ভাষায় বলল, “অনেক দূর থেকে এসেছি ভাই! একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমাকে রাস্তা বাতিয়ে একটু সাহায্য কর ভাই!”
তারা দু’জন তার কাছে এলো। দু’ভাষী দাঁড়িয়ে তাদের সাথে আলাপ করতে করতে আল্লাহর কাছে এসে গেল, মাত্র কয়েক গজ দূরে। আব্দুম্নাহ তার ফৌজদেরকে ইশারা করা মাত্র তারা পশ্চাৎ দিক হতে ঐ দু’জনকে পাকড়াও করে ফেলল। তারপর আব্দুল্লাহ তাদের দুজনকে সাথে নিয়ে নিজেদের ক্যাম্পে চলে এলো।
মুসা ইবনে নুসাইর গভীর ঘুমে। তাকে জাগ্রত করে আব্দুল্লাহ বিস্তারিত বর্ণনা দিল। অন্যান্য জেনারেলরাও এসে জমা হলো। দু’স্পেনী ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল।
মুসা ইবনে নুসাইর : ভয় পেওনা, তোমাদেরকে হত্যা করা হবে না। মেরীদা বিজয়ে আমাদেরকে সাহায্য করলে তোমাদেরকে আযাদ করে দেয়া হবে। তোমরা বল শহরে রসদ-পত্র কোন পথে পৌঁছে এবং শহরের ভেতরে খাদ্য সামগ্রী কি পরিমাণ আছে?
এক স্পেনী বলল, আমরা দরিয়া পাড়ে রসদ বহনকারী কিন্তী দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা দু’জন ফৌজি অফিসার। দশ বার দিন পরপর শহরের খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য আসবাব পত্র রাত্র বেলা নৌকাযোগে আসে, আমরা নৌকা থেকে মাল নামিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শহরে নিয়ে যাই। দু’তিন দিন পূর্বে নৌকা আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসেনি, না জানি কি অসুবিধা হয়েছে।
মুসা : শহরে কি রসদপত্র বিপুল পরিমাণে মওজুদ রয়েছে।
স্পেনী : যৎসামান্য রয়েছে। যদি আজকে রাত্রে কিস্তী না আসে তাহলে শহরে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেবে।
মুসা : ঐ রাস্তা ছাড়া শহরে রসদ পৌঁছার অন্য কোন রাস্তা আছে কি?
স্পেনী : রাস্তা তো কয়েকটা কিন্তু আপনার ফৌজের অবস্থানে ঐ একটা রাস্তা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়ী এলাকা এবং নদীর পাড়ে হবার দরুন রাস্তাটা বেশ নিরাপদ। যদি এ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে শহরে দুভক্ষ দেখা দেবে।
মুসা : এদের দুজনকে নিয়ে যাও। এদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে।
দু’স্পেনীকে নিয়ে যাবার পর মুসা ইবনে নুসাইর তাবু থেকে বেরিয়ে আসমানের সেতারার দিকে তাকিয়ে রাত অনুমান করলেন। রাতের শেষ প্রহর। মাল বোঝায় কিস্তী যেখানে পৌঁছে সেখানে পাঁচশত ঘোড় সোওয়ার ও দেড় হাজার পায়দল পৌঁজ তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছার নির্দেশ দিলেন।
মুসা : তার ছেলে আব্দুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আব্দুল্লাহ! তুমি এই সৈন্য বাহিনীর সাথে যাও। ঐ জায়গা তুমি দেখে এসেছে। রসদ আটকাতে হবে। লস্করকে এমনভাবে নিয়ে যাবে যাতে দুশমন জানতে না পারে। যদি তোমার ওপর আক্রমণ হয় তাহলে আমি পাল্টা আক্রমণের ব্যবস্থা করব। তুমি অতি সত্বর রওনা হয়ে যাও, সুবহে সাদেকের পূর্বে সেখানে পৌঁছতে হবে। মেরিদার লোক খাদ্য ব্যতীত জীবিত থাকতে পারবে কিন্তু শরাব ছাড়া তারা অন্ধ ও উন্মাদ হয়ে যাবে।