খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, মুসা ইবনে নুসাইর ও তারেক ইবনে যিয়াদের আলোচনাও কি হয়?
কাসেদ বলল, তাদের ব্যাপারে বেশ কিছু মানুষকে আলোচনা করতে দেখেছি। তারা একে অপরকে মুসা ইবনে নুসাইর ও তারেক ইবনে যিয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল আর বলছিল তারা যে কোথায় চলে গেল…। খলীফাতুল মুসলিমীন! যে ব্যক্তিই জেনেছে যে আমি দামেস্ক থেকে এসেছি সেই জিজ্ঞেস করেছে, মুসা এবং তারেক দামেস্কে আছে কিনা। তারা এটাও জিজ্ঞেস করেছে তারা কবে ফিরে আসবে। আমি গভীর ভাবে লক্ষ্য করলাম কেন্দ্রের খেলাফতের সাথে স্পেনের কোন সম্পর্কই নেই। খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনার সেখানে যাওয়া দরকার।
খলীফা বললেন, হ্যাঁ, আমার সেখানে অবশ্যই যাওয়া উচিৎ। তানাহলে একদিন খুৎবা হতেই আমার নাম বাদ পড়ে যাবে।
“তুমি যেতে পারো, কুলসুম কাসেদকে বলল, কাসেদ চলে গেলে কুলসুম সুলায়মানকে লক্ষ্য করে বলল, আপনি স্পেনে যাবেন না। আপনি কি কাসেদের এত খোলামেলা কথা ও আলোচলার দ্বারা বুঝতে পারেননি যে, স্পেন একদিন কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আপনি বনু উমাইয়্যার খেলাফতকে খতম করতে চান? মুসা ইবনে নুসাইরের বংশধরকে কি আপনি কেলাফতের। মসনদে বসাতে চান?
সুলায়মান বললেন, না! আমি মুসার বংশ নিপাত করে মরব।
কুলসুম বলল, মুসাকে এ অধিকার কে দিয়েছিল যে, সে এক নব বিজিত দেশের আমীর তার ছেলেকে বানিয়ে এসেছে? মুসাকে খতম করার দ্বারা তো আর তার বংশ শেষ হবে না তার পুরো বংশ শেষ হওয়া দরকার।
আবু হানিফ কে ডাক, সুলায়মান বললেন,
কুলসুম যাবার জন্যে উদ্যত হলো, সুলায়মান তাকে বাধা দিয়ে বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ, দারোয়ানকে পাঠাও।
কুলসুম বলল, আবু হানিফকে আপনার দরবারে আনার জন্যে আমার যাওয়া প্রয়োজন, সে আপনার হকুমের অপেক্ষায় কাছেই বসে আছে।
কুলসুম কামরা হতে বেরিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কামরাসহ আরো দুটো কামরা অতিক্রম করে তৃতীয় একটা কামরার দরজা খুলল। এ কামরাটা অত্যন্ত সুন্দর ও সাজানো গোছানো ছিল। তাতে মাঝ বয়সী এক সুদর্শন লোক বসেছিল। সে কুলসুমকে দেখে দাঁড়িয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দিল, কুলসুম সোজা তার বুকে চলে গেল, এ ব্যক্তিই আবু হানিফ।
বস, কুলসুম তাকে বসতে বলে নিজে তার কাছে বসে বলল, স্পেনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছো তো? তুমি খলীফার পরামর্শ দাতা… পরামর্শ দাতা আরো আছে, কিন্তু আমি তোমাকে একেবারে তার হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে দিয়েছি।
আবু হানিফ বলল, এটাতো পুরাতন কথা, নতুন কিছু বল, দূত কি খবর নিয়ে এসেছে? সুলায়মান কি বলেছেন?
কুলসুম তাকে দূতের তাবৎ কথা শুনাল এবং সে খলিফাঁকে যে পরামর্শ দিয়েছে তাও বর্ণনা করল। আবু হানিফ বলল, এ পরামর্শ আমিও দেব। যদি সুলায়মানের খেলাফত কায়েম থাকে তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে…। একথাও স্মরণ রাখবে কুলসুম! স্পেনের যে সকল দাসীকে মুসা ইবনে নুসাইর সুলায়মানকে উপহার হিসেবে দিয়েছে তারা সকলেই অপরূপ সুন্দরী। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তাদের বুদ্ধিমত্তাও অনেক বেশী। এসব রমণীরা সেখানে দাসী-বাদী ছিল না বরং তারা প্রত্যেকেই শাহী মহল ও আমীর ওমরাদের পরিবারের মেয়ে। তাই তাদের মাঝে কেউ যেন তোমাকে পিছনে ফেলে নিজে বেশী বাদশাহর নিকটবর্তী না হয়ে যায়। কুলসুম বলল,এ ব্যাপারে পরে আলাপ হবে, এখন খলীফা তোমাকে তলব করেছেন, তিনি তোমার কাছে স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজের ব্যাপারে পরামর্শ চাবেন। কি পরামর্শ দেবে?
কুলসুব বলল, তাড়াতাড়ি যাও, তিনি তোমার প্রতিক্ষা করছেন, তাকে স্পেন যাবার পরামর্শ দেবে না।
আবু হানিফ দ্রুতপদে খলীফার কামরায় পৌঁছে গেল এবং দু’জনে গোপনে পরামর্শ করতে লাগল।
***
ঐ দিনই শেষ প্রহরে দামেস্ক হতে একজন দূত স্পেনের দিকে রওনা হয়ে গেল। সে একটা লিখিত পত্র নিয়ে যাচ্ছিল। পত্র একটা চামড়ার থলীর মাঝে ছিল। থলীর মুখে আবু হানিফ নিজ হাতে খলীফার সম্মুখে মহর লাগিয়ে ছিল। পত্র খলীফার নির্দেশে আবু হানিফ লেখেছিল। এ পত্র বাহকের নাম ইতিহাসে আবুন নছর পাওয়া যায়। এ পত্র বাহককেই সুলায়মানের পূর্বে খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক মুসাকে স্পেন হতে ডেকে আনার জন্যে পাঠিয়ে ছিলেন। আবুন নছর শাহী মহলে খুবই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ছিল।
সুলায়মান তার পয়গাম স্পেনে পাঠাবার জন্যে আবুন নছরকে ডেকে বলেছিলেন, আবুন নছর তুমি তো জান, আমার বড় ভাই ওয়ালীদ তোমাকে কি পরিমাণ বিশ্বাস করতেন। তোমার সে বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা এখনও বহাল– রয়েছে। এ পয়গাম পথিমধ্যে খুলবেনা। যদি নষ্ট হয়ে যাবার আশংকা থাকে তাহলে থলির মহর খুলে পত্র জ্বালিয়ে দেবে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে যাতে অন্য কারো হাতে না পড়ে।
আবু নছর বলল, এমনটি হবে আমীরুর মু’মিনীন!
খলীফা সুলায়মান বললেন, আরেকবার ভাল করে শুনে নাও। এ পয়গাম হাবীব ইবনে উবায়দার হাতে পৌঁছুবে। অন্য কেউ যেন না জানতে পারে যে তুমি কোন পয়গাম নিয়ে এসেছ…। বাকী সবকিছু তো তোমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
***
সে সময় স্পেনের রাজধানী টলেডো ছিল। আব্দুল আজীজ সেখানেই অবস্থান করছিলেন। আবুন নছর রাত্রে রাজধানীর কাছে পৌঁছেছিলেন। কেল্লার দরজা বন্ধ থাকার দরুণ রাত্র তাকে শহরের বাইরেই কাটাতে হয়।