স্বমস্বরে জবাব এলো না- না…।
ইঞ্জেলা ফৌজদের মাঝে গিয়েও এ ভাষণ পেশ করল। মানুষের মাঝে পূর্ণ জোস-স্পৃহা জাগ্রত হলো। তারা পাগল পারা হয়ে ওঠল।
সুন্দর কোন রমণী যদি পুরুষদেরকে আহ্বান করে তাহলে পুরুষের মাঝে উম্মাদনা সৃষ্টি হওয়াটা যেন কুদরতের ফায়সালা।
***
মুসা ইবনে নুসাইর তো এ প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলেন যে, শহর অবরোধ করবেন কিন্তু গোয়েন্দারা এসে খবর দিল মেরীদা ফৌজ শহরের বাহিরে যুদ্ধ করার জন্যে বাহিরে চলে এসেছে এবং এমন প্রতিরোধ গড়ে তোলেছে, শহরের প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়। মুসা দূর থেকে দেখতে পেলেন ফৌজ বাহিরে প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে আছে।
মুসা তার ফৌজকে বেশ দূরেই অবস্থান করালেন, পুরো ফৌজ ক্লান্ত-শ্রান্ত তাই তিনি তাদেরকে বিশ্রাম করার কথা বললেন। আর নিজে তার তিন সন্তান ও দু’একজন জেনারেল সাথে নিয়ে শহরের আশে-পাশে পর্যবেক্ষণের জন্যে চলে গেলেন। পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি লড়াইয়ের প্লন তৈরী করবেন।
শহরের পশ্চাতে টিলা, ঘন গাছ-পালা ছেয়ে ছিল। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা কিন্তু সে রাস্তা দিয়ে শহরের কাছে যাওয়া বড় মুশকিল। মুসা সে রাস্তা দিয়েই সম্মুখে অগ্রসর হবার জন্যে ঘোড়া হাঁকালেন।
কিছু দূর অগ্রসর হতেই একটা তীর এসে গাছের গোড়ায় পড়ল। মুসা ঘোড়া থামালেন। আবার একটা তীর এসে ঠিক তার সামনে মাটিতে বিদ্ধ হলো। মুসা ঘোড়া ফিরিয়ে দ্রুত ফিরে এলেন। তীর দু’টো হয়তো দূর থেকে এসেছিল তাই মুসা বা তার ঘোড়ার শরীরে বিদ্ধ হয়নি বা হয়তো তীরন্দাজ মুসাকে সতর্ক করে দিল সম্মুখে অগ্রসর হবে না।
ঐ পাহাড়ী এলাকায় ফৌজ লুকিয়ে ছিল। শহরের সম্মুখ ভাগে যে ফৌজ রয়েছে তার চেয়ে বেশী ভয়াবহ এ ফৌজ।
মুসা : আমার প্রিয় সাথীরা! আমরা বড় মুশকিলে পড়ে গেলাম। তবুও আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে, তাঁর রহমতের আশা ছাড়া যাবে না।
মুসা তার সন্তান ও সালারদের সাথে শহরের পশ্চাতেই ছিলেন। তারা ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এরি মাঝে হঠাৎ করে হৈ চৈ শুনতে পেলেন, কিসের হৈ চৈ তা তিনি ভাল করে বুঝতে পারলেন, এটা লড়াই এর শোরগোল। ঘোড়ার পদাঘাতে জমিন কাঁপছিল।
মুসা দ্রুত অশ্ব হাঁকিয়ে তার লস্করের দিকে রওনা হলেন তার সন্তানরা ও সালাররা তাকে অনুসরণ করল। শহরের পশ্চাৎ হতে সম্মুখে আসতেই তিনি এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখতে পেলেন। মেরীদার যে ফৌজ শহুরের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল তারা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করেছে। মুসলমানরা এ হামলার জন্যে বিলকুল প্রস্তুত ছিল না। সোয়াররা ঘোড়া হতে জিন খুলে এদিক সেদিক পানির তালাশে ঘুরছিল। পায়দলরা শুয়ে পড়েছিল আর ফৌজের জন্যে তৈরী হচ্ছিল খানা। তারা দুশমনকে আসতে দেখে, যে যে অবস্থায় ছিল ঐ অবস্থাতেই হাতিয়ার ধারণ করেছিল। সোয়ারীরা ঘোড়ার পিঠে জিন বাঁধার অবকাশ পায়নি তারা তীর ও বর্শা হাতে পায়দল বাহিনীর সাথে শরীক হয়েছিল।
মুসলমান তীরন্দাজরা কামান-ধনুক নিয়ে অগ্রভাবে চলে গেল। তারা আক্রমণকারীদের ওপর বৃষ্টির মত তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। হামলাকারীদের অগ্রভাগে ছিল ঘোড় সোয়ার। ঘোড় সোয়ার যখন একেবারে কাছে চলে এলো তখন তীরন্দাজরা জীবন বাঁচানোর জন্যে সরে পড়ল। পায়দল বাহিনী তাদের মুকাবালা করল, কিছু সোয়ারীকে তারা জখম করল কিন্তু নিজেরা ঘোড়ার পদতলে পৃষ্ঠ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। মুসলমানরা জীবন বাঁচিয়ে মুকাবালা করছিল।
মেরীদার এ বাহিনী স্থির হয়ে যুদ্ধ করার জন্যে আসেনি ফলে তারা অতর্কিত হামলা করে ডানে-বামে চলে গেল।
মুসা ইবনে নুসাইর যখন পৌঁছলেন তখন লড়াই শেষ। প্রবল তুফানের পরে যেমন সব লন্ড ভন্ড হয়ে পড়ে থাকে, ফৌজের অবস্থা ঠিক তেমনি ছিল। দুশমন ও মুসলমান ফৌজের আহতরা কাতরাচ্ছিল। কিছু মৃত্যু মুখে ঢলে পড়েছিল।
মেরীদা ফৌজ যেখানে ছিল সেখানে পৌঁছে গেল এবং তারা গগন বিদারী ধ্বনী দিতে লাগল।
এক ঘোড় সোয়ার মুসলমানদের কাছে এসে বলল,এটা গ্রানাডা-কর্ডোভা নয়। এটা মেরীদা। তাড়াতাড়ি ফিরে যাও। তারপর সে দ্রুত ফিরে গেল।
প্রথম দিন আক্রমণের পর এভাবে আক্রমণ চলতে লাগল। মুসা বুঝতে পারলেন এটা তাদের কৌশল। তিনি তার ফৌজকে চার ভাগে ভাগ করে শহরের চারদিকে পাঠিয়ে দিলেন। মুসলমানদের মত ঈসায়ী লস্করও ভাগ হলো। মুসলমানদের কোন ফৌজ সামনে অগ্রসর হলে ঈসায়ী ফৌজ সামনে এসে মুকাবালা করে মুসলমানদেরকে হয়তো পিছু হটিয়ে দিত বা নিজেরা আক্রমণ করেই পিছু হটে যেত। এভাবে প্রতিদিন আক্রমণ হতে লাগল যার ফলে মুসলমানরা শহর পূর্ণ মাত্রায় অবরোধ করতে পারল না।
আবাল-বৃদ্ধ বনিতা, নারী-পুরুষ ধনী-গরীব নির্বিশেষে জীবন বাজিরেখে লড়তে লাগল। পাদ্রীরা গির্জা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। সাত-আট মাস এভাবে লড়াই চলতে লাগল। উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হলো। মুসা সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রাখলেন। অন্যান্য জেনারেলদের সাথে সলা-পরামর্শ করলেন।
মুসাঃ আমি মেনে নিতে পারছি না, এত দিনের খাদ্য-সামগ্ৰী শহরের মাঝে মওজুদ রয়েছে। নিশ্চয় কোন রাস্তা দিয়ে বাহির হতে খাদ্যাদি শহরে প্রবেশ করছে। সে রাস্তার সন্ধান পেলে তা বন্ধ করে দিয়ে শহর অবরোধ করতাম।