আলী ইবনে উবাই : আরেকটা বিষয় লক্ষ্য রাখবে ইবনে নুসাইর! তারেকের কাছে যেসব মূল্যবান গণীমতের সম্পদ রয়েছে তা তুমি তার থেকে নিয়ে নিবে এবং তুমি নিজে তা খলীফার দরবারে পেশ করবে তানাহলে সে নিজেই এগুলো পেশ করে খলীফার আস্থাভাজন হয়ে যাবে।
তারেক ইবনে যিয়াদ যাকে পিতা মনে করতেন সে মুসা ইবনে নুসাইর তার মদদে আসার জন্যে ভীষণ খুশী। তার আশা, অর্ধ স্পেন বিজয় করার দরুন মুসা তাকে প্রাণ খুলে অভিনন্দন ও মুবারকবাদ জানাবেন।
মুসা ইবনে নুসাইরের তিন ছেলে, আব্দুল্লাহ, মারওয়ান ও আব্দুল আজীজ। বড় ছেলে আব্দুল আজীজকে তিনি আফ্রিকাতে তার স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। আর বাকী দু’জনকে নিজের সাথে রেখেছিলেন, স্পেনে এসে যখন বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠতে দেখতে পেলেন তখন তিনি তার বড় ছেলেকে স্পেনে নিয়ে আসা সমীচীন মনে করলেন।
মুসা ইবনে নুসাইর মেরীদার দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। মেরীদা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর সৌন্দর্যে টলেডোকেও হার মানিয়ে ছিল। তার এ সৌন্দর্যের স্রষ্টা ছিল রুমী বাদশাহ্। রুমী তাকে কেবল সুন্দরের মহিমায় সুশোভিতই করেনি বরং তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও করে ভীষণ মজবুত। সৈন্যদেরকে দিয়েছিল পর্যাপ্ত ট্রেনিং। মেয়ীদা শহর ছিল প্রাচুর্যে ভরা।’
মেরীদার দিকে মুসা ইবনে নুসাইর পূর্বেই গোয়েন্দা বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, তারা ফিরে এলে তিনি তাদের থেকে বিস্তারিত তথ্য সগ্রহ করলেন। গোয়েন্দার কাছে তিনি জানতে চাইলেন, “সেথাকার লোকদের মাঝে কেমন যুদ্ধ স্পৃহা রয়েছে? নিজেই জবাব দিলেন, না থাকাটাই স্বাভাবিক, মানুষের কাছে হয়তো দৌলত থাকে তানাহলে স্পৃহা থাকে। দুটো এক সাথে থাকে না কারণ দৌলত মানুষকে বিলাসী বানায়।”
গোয়েন্দা : না আমীরে মুহতারাম! মেরীদা শহরের মানুষের কাছে দুটোই আছে। আমি ছদ্মবেশে খ্রীস্টান ব্যবসায়ী হয়ে সেখানে প্রবেশ করেছিলাম। একটি সরাইখানা কয়েকটি গীর্জাতে অবস্থান করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, মুসলমানরা তো সারা মূলক কজা করে নিয়েছে; এ শহরও দখল করে নিবে এখন কি করা?
আমীরে মুহতারাম! তারা সকলে আমাকে একই জবাব দিয়েছে, “মেরদা শহরবাসীর রয়েছে আত্ম মর্যাদা, তাদের আছে সাহসীকতা ও বীরত্ব। গীর্জা-ইবাদত খানায় যেসব লোক রয়েছে, তাদের লম্বা দাড়ি ও ঢিলা-ঢালা পোষাকই কেবল দেখনা এরা প্রত্যেকে হলো যুদ্ধবাজ। এরা নিজেদের গীর্জার পবিত্রতা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করে দেবে। তবে জীবন দেয়ার আগে তার সম্মুখে যে মুসলমান আসবে তাকে সে অবশ্যই খতম করবে। সাধারণ মানুষও প্রাণপণ লড়াই করবে। মুসলমানরা এ শহর সে সময় নিতে পারবে যখন একজন খ্রীস্টানও জীবিত থাকবে না।”
আমীরে মুহতারাম! শহরের কোন মানুষের মাঝে আমি বিন্দুমাত্র ভয় ও ভীতির ছাপ দেখিনি।
***
মেরীদার দিকে রওনা হবার পূর্বে মুসা ফৌজদের উদ্দেশ্যে এক তেজস্বী বক্তৃতা দিলেন, যাতে সৈন্যরা স্পৃহা-উদ্দীপনায় নতুন প্রাণ ফিরে পেল। পথিমধ্যে তিন সন্তানকে লক্ষ্য করে বললেন,
“আমার প্রিয় বৎস! আমার প্রতিটি কথা ওসীয়ত মনে করে গুরুত্ব দিয়ে শ্রবণ কর। আমার শরীরের দিকে লক্ষ্য কর, তা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। কেবল আত্মিক শক্তি আমাকে এখানে নিয়ে এসে লড়াই করাচ্ছে। জীবনের অর্ধেকের চেয়ে বেশী সময় কেটেছে যুদ্ধের ময়দানে। মনে কর আমার শারীরিক শক্তি তোমাদের তিনজনের মাঝে স্থানান্তরিত হয়েছে। এখন আমি যে কোন সময় ইন্তেকাল করতে পারি। তোমরা আমাকে দাফন করার পর আমার নাম জিন্দা রাখবে। আমি তোমাদেরকে এক মুলক বিজয় করে দিয়ে যাচ্ছি। এ যুদ্ধই আমার জীবনের শেষ যুদ্ধ। হতে পারে এ যুদ্ধেই আমি ইন্তেকাল করতে পারি। এ উত্তরাধিকারীকে তোমরা ধরে রাখবে। আব্দুল আজীজ! তোমাকে আমি এখনই বলছি, তুমিই হবে স্পেনের প্রথম আমীর। তোমার ব্যাপারে আমি খলীফার থেকে অনুমোদন নিয়ে নেব।
আব্দুল আজীজ : শ্রদ্ধেয় বাবা! স্পেনের আমীর হবার হকদার কি ইবনে যিয়াদ নয়? সেই তো স্পেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে এবং এখন সে স্পেনের প্রাণকেন্দ্র টলেডোতে অবস্থান করছে।
মুসা : বৎস! যা আমি জানি তা তোমরা জান না। আমি যা চিন্তে করি তা তোমরা কর না। এখন আমার এ উপদেশ হৃদয়ংগম কর, কোন অবস্থাতেই পশ্চাৎ পদ হবে না। এ রাজ্যে এত পরিমাণ প্রাচুর্য, ধন-দৌলত ও সৌন্দর্য রয়েছে যা তোমরা ইতিপূর্বে কখনো দেখনি। তুমি এখন যুবক আর যৌবন হয় অন্ধ। তুমি যদি বিচ্যুত হও তাহলে সব হারাবে। স্পেন বিজয়ের জন্যে যেসব শহীদ জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের অভিশাপ তোমার ধ্বংস ডেকে আনবে।
আব্দুল আজীজ : এমনটি হবে না আব্বাজী! এমনটি হবে না।
মুসা : এখন খুব ভাল করে ফিকির কর, মেরীদা সহজে হাতে আসবে না। তা হাতে আনতে বহু জান-মাল কুরবানী করতে হবে।
“আমরা কুরবানী দিতে প্রস্তুত আছি” তিন সন্তান দৃপ্তভাবে জবাব দিল।
মেরীদাতে একটা মহল ছিল, তাতে বাদশাহর প্রতিনিধি অবস্থান করত। এখন সেখানে অবস্থান করছে রাজিলী নামে বাদশাহর এক নিকট আত্মীয়। রাজিলী তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে রডারিকের মৃত্যুর পর ইঞ্জেলা নামে তার এক যুবতী স্ত্রীকে মেরীদাতে নিয়ে গিয়েছিল।