দারোয়ান : কয়েকজন ব্যক্তি সিপাহু সালারের সাথে মুলাকাত করতে চায়। সম্মতি ফিরে পেয়ে তারেক জবাব দিলেন, এ মহলে যে বাদশাহ্ ছিল সে মৃত্যু বরণ করেছে, এখন কোন বাদশাহ্ নেই যে, মুলাকাতের জন্যে ইযাযতের প্রয়োজন হবে। তাদেরকে আসতে দাও।
দারোয়ান দরজা খুলে দিলে তিনজন একটা টেবিল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল, তিনজনই তারেকের ফৌজী লোক।
তারেক : এটা কি?
ফৌজ : সিপাহ্ সালার! এটা টেবিল। শহরের পশ্চাৎ দরজা দিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ী বের হলো। আমরা গাড়ী থামানোর নির্দেশ দিলে গাড়োওয়ান দ্রুত ঘোড়া হাকাল, এতে আমাদের সন্দেহ হলো। আমরা তাদের পিছু ছোঁড়া নিয়ে ছুটলাম। কিছুদূর গিয়ে গাড়ী থামালাম। তাতে তিন পাদ্রী ছিল। তাদের কাছে ছিল এ টেবিল। এটা স্বর্ণের তৈরী। পাদ্রীদেরকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা গাড়ী থামাতে বলার পরেও কেন তারা তা থামাল না? তারা অনুনয় বিনয় করে বলল, এটা অত্যন্ত পূত-পবিত্র ও বরকতময় এ জন্যে অন্য মাযহাবের লোকের হাতে পড়ুক এটা তারা চাচ্ছিল না। আমরা তাদেরকে আমাদের সাথে নিয়ে এসেছি।
তারেক : তাদেরকে ভেতরে আসতে বল।
তিন পাদ্রী ভেতরে প্রবেশ করল।
তারেক : এটা যদি স্বর্ণের হয় তাহলে তো এর কিমত অনেক। তোমরা ধর্ম গুরু এ অনন্য তোমাদেরকে সম্মান করি, তবে এ টেবিল তোমরা ফেরত পাবে না।
পাত্রী : এটা পূর্ণ স্বর্ণের তৈরী। তার চতুর্পাশে খচিত রয়েছে হিরা, মনি-মুক্তা মতি। মূল্যবান এ জন্যে আমরা এটা নিয়ে পলায়ন করছিলাম না, এটা একটা পবিত্র স্মৃতি। এটা হযরত সুলায়মান (আ.)-এর টেবিল। স্পেনের পূর্বেকার কোন বাদশা। জেরুজালেম আক্রমণ করলে তিনি এটা সেথাকার প্রধান উপাসনালয়ে পেয়েছেন। তারপর হতে এটা ধারাবাহিকভাবে স্পেনের বাদশাত্মদের কাছে বিদ্যমান রয়েছে সর্বশেষ রডারিকের কাছে ছিল। একে ক্ষমতার উৎস ধারা জ্ঞান করা হয়।
তারেক : এখন তো স্পেনের মুকুট ও সিংহাসন আমাদের কজায় ফলে এ টেবিলও আমাদের দায়িত্বে থাকবে।
তারেক পাদ্রীদেরকে তা ফেরত না দিয়ে মালে গণিমত হিসেবে নিজের কাছে। রেখে দিলেন।
তারেক ইবনে যিয়াদের আশে-পাশে যেসব সালার ছিল তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমীরুল মু’মিনের জন্যে এর চেয়ে চিত্তাকর্ষক হাদিয়া আর কি হতে পারে। আমি নিজে গিয়ে এ টেবিল খলীফাতুল মুসলিমীনের খেদমতে পেশ করব।
পাদ্রী : আমরা সিপাহ্ সালারকে সতর্ক করা ভাল মনে করছি। এ পর্যন্ত কোন বাদশাহ এর মালিক দাবী করেনি। সকলেই বলেছে এর মালিক হযরত সুলায়মান। আর হযরত সুলায়মান ছিলেন জিনেরও নবী তাই এর হেফাজতকারী হলো জিন। যদি সিপাহসালার বা অন্য কেউ এর মালিকত্বের দাবী করে তাহলে সে হবে লাঞ্চিত ও তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
তারেক ইবনে যিয়াদ : এতে সুলায়মান (আ)-এরই মালিকত্ব থাকবে। আমরা মুসলমান আর মুসলমানরা সোনা-হিরা-মতিকে নিজের মালিকানায় রাখে না। তোমরা এখন যেতে পার। শহর থেকে পলায়ন করার কোন প্রয়োজন নেই। তোমাদের গীর্জা-উপাসনালয়ে যাও। তোমাদেরকে এবং তোমাদের গীর্জার কোন অসম্মানি করা হবে না।
পরের দিন সকালে তারেক ইবনে যিয়াদ ফজরের নামাজ সমাপন করে শাহী মহলের দিকে ফিরে যাচ্ছেন এরি মাঝে ইদ্রীস আবুল কাসেম নামে এক ফৌজী কমান্ডার দৌড়ে এসে বলল,
ইবনে যিয়াদ! আপনি কি জানেন, মুসা ইবনে নুসাইর আমীরে আফ্রিকা আঠার হাজার ফৌজ নিয়ে স্পেনে এসেছেন?
তারেক জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কবে এসেছেন? তিনি কোথায়? আমার প্রত্যাশা ছিল তিনি আমার সাহায্যে অবশ্যই আসবেন।
আবুল কাসেম : স্পেনে আসা তার প্রায় এক বছর হয়ে গেল। কয়েকটি শহর যা আপনি ছেড়ে দিয়েছিলেন তা তিনি কজা করেছেন।
তারেক খুশীতে আটখানা হয়ে ধ্বণী দিলেন, মুসা ইবনে নুসাইর জিন্দাবাদ! তিনি আমার কাজ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন তাকে আমি আমীর নয় আমার বাবা মনে করি।
আবুল কাসেম : আপনি যে সব শহর বিজয় করে রেখে গিয়েছিলেন তাতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠতে ছিল তিনি খবর পেয়ে তা খতম করে শহর নিজ হেফাজতে রেখেছেন।
তারেক ইবনে যিয়াদ মুসার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। বললেন, মুসা ইবনে নুসাইরকে স্বয়ং আল্লাহ্ এখানে পাঠিয়েছেন। তিনি আমার মদদে এসেছেন, এখন আমি চিন্তামুক্ত। অল্প কিছু দিনের মাঝেই পুরো স্পেন ইসলামী পতাকা তলে এসে যাবে।
আবুল কাসেম ও তারেক যখন মুসার তা’রীফে লিপ্ত সে সময় মুসা মেরীদা শহরের অদূরে তাবুতে বসে সর্বশেষ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার তাবুতে কুরাইশ গোত্রের দু’জন সম্মানিত ব্যক্তি রয়েছেন একজন আলী ইবনে উবাই অপরজন হায়াত ইবনে তামিমী।
মুসা ইবনে নুসাইর : আমি এমন অবাধ্যকে ক্ষমা করতে পারি? আমি তার কাছে নির্দেশ পাঠিয়ে ছিলাম, সে যেখানে আছে সেখানেই যেন থাকে, সামনে যেন অগ্রসর না হয়। কিন্তু সে আমার নির্দেশ অমান্য করে তার ফৌজকে তিন ভাবে ভাগ করে বড় বড় শহরগুলো বিজয় করে নিজে টলেডোতে গিয়ে বসে আছে।
হায়াত ইবনে তামিমী : অন্তত: টলেডো আপনার বিজয় করা দরকার ছিল। এখন তো খবর ছড়িয়ে যাবে যে, বর্বররা স্পেন বিজয় করেছে।
মুসা : আমি আরবদেরকে স্পেন বিজয়ী হিসেবে অবহিত করতে চাই। আমি তারেক ইবনে যিয়াদকে সিপাহ্ সালার পদ হতে অপসারণ করব।