দেড় দু’মাসে এ কাফেলা দামেস্কে পৌঁছল। মুসাকে কয়েদ খানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো।
দামেস্কে প্রথম রাতেই কুলসুম সুলায়মানকে স্মরণ করিয়ে দিল, স্পেনে মুসার ছেলে আমীর, সেখানে তার বাপের শাস্তির প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে যে কোন সময় বিদ্রোহ করে নিজেকে স্বাধীন শাসক দাবী করে বসতে পারে।
সুলায়মান বললেন, কুলসুম! মুসলমানদের খলীফা। মুসলমানরা একটা নতুন দেশ স্বাধীন করেছে। সে নতুন নতুন নিয়ম-নীতি চালু করা হচ্ছে, কিছু অঞ্চলে এখনো যুদ্ধ চলছে। খলীফা হিসেবে সেখানে যাওয়াটা আমার জন্যে কি জরুরী নয়? .. এ দ্বারা আমার গুরুত্ব ও গ্রহণীয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে।
কুলসুম বলল, না খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনি যাবেন না। আমি আপনার জীবনের আশংকা বোধ করছি। সম্ভবতঃ এমন হতে পারে, আপনার সাথে যারা যাচ্ছে তাদের কেউ সেখানে বলেদিল যে মুসা ইবনে নুসাইর জেল খানায় আর তার অবস্থা খুবই শোচনীয়, তাহলে সে অবস্থায় সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসা আপনার জন্যে খুবই দুস্কর।
সুলায়মান বললেন, সেখানের অবস্থা আমার পর্যবেক্ষণ করা খুবই জরুরী। যদি বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার সামান্যতমও ইঙ্গিত পাই তাহলে আব্দুল আজীজের ওপর পাবন্দী লাগিয়ে দেব।
পরের দিন খলিফা প্রথম কাজ এটাই করলেন যে, একজন দ্রুত গামী ঘোড় সোয়ারীকে এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন, সে যেন সেখানের অবস্থা জেনে আসে। খলীফা তাকে কোন্ কোন্ বিষয় অবগত হতে হবে তা বিস্তারিত বলে দিলেন আর তাগিদ দিলেন যেন সে দ্রুত ফিরে আসে।
সুলায়মান শেষ কথা কাসেদকে এটাই বললেন, কেউ যেন জানতে না পারে তুমি আমার প্রেরিত কাসেদ। তুমি নিজের ব্যাপারে বলবে, এ দেশে যদি বসবাস করি তাহলে ভাল হবে কিনা এটা দেখার জন্যে এসেছি।
***
অত্যন্ত দ্রুত যাতায়াত করার পরও কাসেদের ফিরে আসতে দেড় মাস সময় লেগে গেল। এরি মাঝে মুসাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল সে অতি সকালে কয়েদ খানা থেকে বের হয়ে শহরে ভিক্ষা করবে আর সারা দিনের ভিক্ষের পয়সা সন্ধ্যেবেলা কয়েদখানা প্রধানের কাছে জমা দেবে।
কাসেদ স্পেনের হালাবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, খলীফাতুল মুসলিমীন! এর চেয়ে সুন্দর ও এরূপ সবুজ শ্যামলে ঘেরা আর অন্য কোন দেশ মনে হয় নেই। সুলায়মান বললেন, আমি দেশের প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে শুনতে চাইনা তুমি শুধু আমাকে বল, আমীর আব্দুল আজীজ ইবনে সুলায়মান কি করছে এবং তার সৈন্য বাহিনী ও সাধারণ লোকদের মাঝে তার ব্যাপারে কি ধরনের মন্তব্য চলছে। কাসেদ বলল, ফৌজ ও সাধারণ জনগণের কাছে যদি কোন গ্রহণীয় ও নির্ভরযোগ্য লোক থেকে থাকে তাহলে সে শুধু স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজই আছে। সে আলেম, মুত্তাকী, পরহেজগার, আরব ও বর্বররা তো তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেই অধিকন্তু খৃষ্টানদের মাঝেও সে গ্রহণীয় ব্যক্তিত্ব ও তার সুনাম রয়েছে।
আব্দুল আজীজ স্পেন অধিবাসীদের জন্যে কি কি কল্যাণকর কাজ করেছে এবং করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করল কাসেদ।
কাসেদ বলল, স্পেনের আমীর সেখানের মানুষের অবস্থা পালটে দিয়েছেন, সেখানে গরীব খ্রীষ্টানের ওপর ধনী খ্রীষ্টানরা রাজত্ব চালাত, সেখানে ইনসাফ-ন্যায় বিচার সেই পেত যার কাছে টাকা ছিল, তাদের জীবনেই তাবৎ সর্বোপরি সুখ-শান্তি ছিল। আমীর আব্দুল আজীজ দরিদ্রদেরকে এমন জীবনদান করেছেন, তারা কেবল পেট ভরে ভাতই খেতে পায় না বরং তারা মান-মর্যাদা, ইজ্জত-সম্মান ফিরে পেয়েছে।
আব্দুল আজীজ ইবনে মুসা স্পেন বিজয়ের পর পরই সেখানের লোকদেরকে কি কল্যাণ কর কাজ করেছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা এ পুস্তিকার শেষভাবে পেশ করা হবে এখানে বলার বিষয় হলো খলীফা সুলায়মান বিন আব্দুল মালেক আব্দুল আজীজের ব্যাপারে অন্য কিছু শোনার আশা করছিলেন।
বর্বরা আব্দুল আজীজের ব্যাপারে কি বলে? সুলায়মান কাসেদকে জিজ্ঞেস করলেন। প্রতি উত্তরে কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীনের হয়তো জানা থেকে থাকবে, সেনাপতি তারেক ইবনে যিয়াদের সাথে যে সকল সৈন্য স্পেন সাগর পাড়ে পৌঁছে ছিল তারা সকলেই বর্বর ছিল। বর্বর সৈন্যরা যে মালে গণিমত পেয়েছিল তা তারা কোন দিন স্বপ্নেও দেখেনি। আমীর আব্দুল আজীজ তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান দান করেছে। মুসা ইবনে নুসাইর দীর্ঘদিন আফ্রিকার আমীর ছিলেন, তিনি বর্বর জাতির প্রতি এ অনুগ্রহ করেছেন যে, তারা মুসাকে মুর্শিদ মনে করে। এজন্যেই বর্বররা আমীর আব্দুল আজীজের জন্যে জান-মাল সর্বোপরি কুরবানী করতে প্রস্তুত রয়েছে।
খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, তাদের মাঝে কেউ আমাকেও কি স্মরণ করে?
কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন যদি বেয়াদবী মাফ করেন তাহলে বলি, খলিফার সাথেই কুলসুম বসা ছিল, খলীফার পরিবর্তে কুলসুম বলল, অনুমতি আছে, তুমি নির্ভয়ে সবকিছু খুলে বল।
কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন! আমি অনেক শহর-বন্দর, পল্লীতে গিয়েছি। মুসলমান, খ্রীষ্টান, বর্বর মুসলমান সকলের সাথে কথা হয়েছে। কেউ দামেস্কের খিলাফতের নাম নেয়নি। সেখানে যে নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে তাতে গিয়েছি সেখানেও কেউ খলীফার নাম স্মরণ করেনি। তারা যদি কাউকে স্মরণ করে তাহলে আব্দুল আজীজকেই স্মরণ করে।