আওপাস : আমি কয়েক দিনের মাঝেই তোমার কাছে আসছি। একথা বলে আওপাস সেখান থেকে চলে গেল।
***
স্পেনের ইতিহাস বেত্তারা এমন কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছে যা আশ্চর্যজনকই কেবল নয় অবিশ্বাস্যও বটে কিন্তু যখন দেখি, সে সব বর্ণনা ইউরোপের ঐতিহাসিকরা তৎকালীন লেখকদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন তখন বিশ্বাস করতে হয়। খ্রীস্টান ঐতিহাসিকদের জন্যে মুসলমানদের বিপক্ষে লেখার দরকার ছিল কারণ স্পেনের বিজয় খ্রীস্টান নয় বরং গোটা খ্রীস্টবাদের ছিল পরাজয়।
তিনজন নির্ভরযোগ্য খ্রীস্টান ঐতিহাসিক তারেক ইবনে যিয়াদ ও রডারিকের ব্যাপারে কয়েকটা ঘটনা উল্লেখ করেছেন। স্পেন ফৌজী বাহিনীর জেনারেল তিতুমীরকে পরাজিত করার কয়েক দিন পর তারেক ইবনে যিয়াদ ঘোড়ায় সোয়ার হয়ে তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে যেদিকে যাবেন সেদিকে যাচ্ছিলেন। কেন্দ্র থেকে সাহায্য আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রথম যুদ্ধ ময়দানের কাছেই তাবু স্থাপন করে ছিলেন। যুদ্ধ ময়দান হতে মরদেহ তো সরিয়ে ফেলা হয়েছিল কিন্তু জমাট বাঁধা রক্তের পাহাড় জমে ছিল ফলে রাতদিন সর্বদা নানা ধরনের জানোয়ার ও সরিসৃপ রক্তপানে ভীড় জমিয়ে ছিল। সাপ-বিচ্ছুতে পুরো এলাকা ভরে গিয়েছিল।
তারেক ইবনে যিয়াদ সম্মুখ এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে ছিলেন। পথপ্রদর্শক হিসেবে ছিলেন জুলিয়ন। তার সাথে মুগীছে রূমী ও আবু জুরয়া তুরাইফও ছিল।
তারেক ইবনে যিয়াদ : আওপাস কবে নাগাদ ফিরে আসবে? ধরা পড়ে যাবে নাতো?
জুলিয়ন : সে তো এমন আনাড়ী নয় যে ধরা পড়বে। অবশ্যই কিছু একটা করে আসবে। এমন ছদ্দবেশে গেছে কেউ তাকে চিনতে পারবেনা ফলে তার গ্রেফতার হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া কয়েদীদের থেকে আপনিতো শুনতে পেয়েছেন রডারিক টলেডোতে নেই। তামাম আমীর-ওমারা, উজীর-নাজীররাও তার সাথে গিয়েছে এ অবস্থায় আওপাসের জন্যে কাজ করা সহজ হবে।
তারা কথা-বার্তায়, আলাপ-আলোচনার মাঝ দিয়ে জেলে ও মাল্লাদের বস্তি অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হয়েছিল। তারেক ইবনে যিয়াদকে বলা হয়েছিল। বহুদূর পর্যন্ত কোন শহর, পল্লী নেই এ কারণে এখানে ফৌজও নেই। তারা আরো অগ্রসর হলো। চতুর্দিক সবুজ শ্যামলে ঘেরা সৌন্দর্য মণ্ডিত পরিবেশ। কুদরতের সে সৌন্দর্যের লীলাতে ছোট একটা বস্তি ছিল যার আশে-পাশে লোক ঘোরা-ফেরা করছিল। তারেক তার সাথীদের সাথে যখন ঐ ব্যক্তির কাছে পৌঁছল তখন লোকগুলো তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেল।
তারেক : জুলিয়ন! তারা হয়তো জেনে গেছে যে, আমরা তাদের ফৌজ বাহিনীকে পরাস্ত করেছি। তাদেরকে বুঝাবে যে আমরা ঐ বিজয়ী বাদশাহদের মত নই যারা বিজয়ার্জন করার পর তাদের ফৌজরা মানুষের বাড়ী-ঘরে প্রবেশ করে লুটপাট করে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং লাড়কীদেরকে বে আক্র করে।
জুলিয়ন : ইবনে যিয়াদ! তাদের বুঝানোর প্রয়োজন কি? তোমাদের পক্ষ থেকে এমন কোন কান্ড না ঘটলে তারা এমনিতেই বুঝে যাবে।
তারা এ ধরনের আলাপ-আলোচনা করছিল এরি মাঝে এক বুড়ি আাত বস্তি থেকে বেরিয়ে এসে তারেকের সম্মুখে দাঁড়িয়ে গেল। তারেক তার ঘোড়ী থামালেন সাথীদের ঘোড়াও দাঁড়িয়ে গেল।
বুড়ি : আমাদের ফৌজ বাহিনীকে যে ফৌজ শেকান্ত দিয়েছে সে ফৌজের কমান্ডার কি তোমাদের মাঝে রয়েছে?
জুলিয়নঃ হ্যাঁ বুড়ি মা! ইনি হলেন সে ফৌজী বাহিনীর কমান্ডার। জুলিয়ন তারেকের দিকে ইশারা করে বুড়ির ভাষায় কথাগুলো বলল।
বুড়ি কোন প্রকার ভয়-ভীতি ছাড়াই তারেককে বলল, ঘোড়া থেকে নেমে তোমার মাথা উম্মুক্ত কর।
মুগীছে রূমী স্পেনের ভাষা বুঝতেন, তিনি তারেককে বুঝিয়ে বললেন, বুড়ি কি বলছে।
তারেক অশ্ব হতে অবতরণ করে মাথা আবরণ মুক্ত করলেন।
বুড়ি তারেকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, সাবাস! তুমি এসেগেছ…..। আমার স্বামী গণক ছিল, তার ভবিষ্যৎ বাণী দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে মরে গেছে। আমাকে বহুবার বলেছে, বাহিরে থেকে একটা কওম আসবে, স্পেন জয় করে তারা দেশ শাসন করবে। তাদের কামান্ডারের আলামত হবে তার মাথা-দাড়ির কেশ হবে স্বর্ণালী আর তার ললাট হবে প্রশস্ত সে ব্যক্তিই হলে তুমি। স্বর্ণকেশী এবং তোমার কপালও চওড়া। আরও একটা নিশানা রয়েছে তোমার কাঁধ আবরণ মুক্ত কর, সেখানে একটা বড় তিলক এবং তার আশে-পাশে কেশ থাকবে।
মুগীছে রূমী তাকে বুঝিয়ে দিলেন বুড়ি কি বলছে তারপর তাকে স্কহ্মদ্বয় উন্মুক্ত করার জন্যে বললেন।
তারেক ইবনে যিয়াদ তার কাঁধ আবরণ মুক্ত করতে করতে বললেন, বুড়ি ঠিকই বলেছে, আমার বাম স্কন্ধে তিলক রয়েছে।
তারেক ইবনে যিয়াদের তিলক ও তার আশপাশের কেশ দেখে বুড়ি বলল, স্পেনকে তুমিই জয় করবে। তুমিই হলে সে ব্যক্তি যে এদেশের জনসাধারণকে বাদশাহ্ ও তার কর্মচারীদের নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।
এ ঘটনা তিনজন নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক লেখেছেন।
তারেক ইবনে যেয়াদ তার সাথীদেরকে বললেন, বন্ধুগণ! আমি তোমাদেরকে এবং পুরো সৈন্যবাহিনীকে আমার স্বপ্নের কথা বলেছি, যার মাঝে রাসূল (স) আমাকে বিজয়ের বাসারত দিয়েছেন। এখন এ বুড়ি সুসংবাদ শুনাল স্পেন বিজেতা আমিই হব। তবে স্মরণ রেখ! আমাদেরকে কিন্তু জীবন বাজী রেখে লড়তে হবে।