***
অন্তত বিশ বছর পর তাদের মিলন ঘটল। মেরীনার নির্দেশ মুতাবেক কোচ ওয়ানরা তাদের গাড়ীর কাছে চলে গেল আর মেরীনা আওপাসকে নিয়ে টিলার ওঁতে গেল। তাদের মিলন ছিল অত্যন্ত আবেগঘণ। দীর্ঘক্ষণ তারা উভয়ে চোখের আঁসুতে আপন আপন হৃদয়ের কথা ব্যক্ত করছিল। একে যেন অপরের ভেতর প্রবেশ করেছিল।
মেরীনা : তুমি কিভাবে জানতে পারলে আমি টলেডোতে রয়েছি।
আওপাস : এ খবর তো আমি কয়েক বছর আগে থেকেই জানি। জুলিয়নের লোকজন সব সময়ই এখানে আসা যাওয়া করত। তাদের কে যেন আমাকে বলেছিল, যে মেরীনার জন্যে তুমি তোমার ভাইকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলে এবং সিংহাসন হতে বিমুখ হয়ে পড়েছিলে সে মেরীনা রডারিকের হেরেমে রয়েছে। এরপরও তোমার খবরা খবর আমার কাছে পৌঁছত। মেরীনা! এখানে বেশী কথা বর্ণা আমাদের জন্যে সমীচীন নয়, উভয়ের জন্যেই খতা রয়েছে।
মেরীনা : ঠিক বলেছ আওপাস! তাড়াতাড়ি এখান থেকে আমাদের চলে যাওয়া দরকার। তুমি অত্যন্ত বিজ্ঞ গোয়েন্দা বলে মালুম হচ্ছে। এখন আমি ঝিলপাড়ে থাকব এটাও তুমি জেনে গেছ।
আওপাস : আমি গোয়েন্দা নই বরং এখানে আমি অভিজ্ঞ গোয়েন্দার সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। আমাদের গোথা গোত্রের দুজনের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারা আমাকে প্রথমতঃ বলেছিল যে তুমি এখনও বাদশাহর মহলে রয়েছ। দ্বিতীয়ত: তারা বলেছিল পড়ন্ত বিকেলে মহলের অন্যান্য আওতদের সাথে ঝিলপাড়ে আসা তোমার মামুল। আমি গত পরশুদিন হতে এই বেশে তোমার খোঁজে বনের মাঝে উভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। আজকে আমাকে গোয়েন্দা খবর দিল তুমি আওরতদের সাথে ঝিল পাড়ে আছ…..। মেরীনা! প্রতিশোধ নেয়ার সময় এসেছে। রডারিকের থেকে আমি যে প্রতিশোধ নেব তাতো তুমিজান, তোমারও তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া উচিৎ। তোমার যৌবনে সে তোমাকে তার উপপত্নী বানিয়ে তোমার জীবন নাশ করেছে। আমিতো বিয়ে শাদী করেছি। বিবি বাচ্চাও রয়েছে।
মেরীনা অত্যন্ত দুঃখ ভরা কণ্ঠে বলল, ঠিকই বলেছ আওপাস! আমার প্রতিশোধ নেয়া প্রয়োজন। আমি যখন তোমার হতে পারিনি তখন অন্য কারো আর বিবি হতে পারিনি। মাতাও হতে পারিনি। তার পরিবর্তে আমি শয়তানে পরিণত হয়েছি। আমার মাঝে শয়তানের বদঅভ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। আর আমি পুরুষদেরকে এবং হেরেমের আওরাতদেরকে আংগুলের ইশারায় নাচান শুরু করেছি। মহলের অফিসার আমীর-ওমারা, উজির-নাজীর আমাকে মুকুট বিহীন ম্রাজ্ঞী বলতে শুরু করেছে।
আওপাস : কথা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে মেরীনা! তোমার মত আমিও আবেগে ডুবে যাচ্ছি। বিশ বছর পূর্বের সে সব স্মৃতি চারণ করতে ইচ্ছে করছে। কাংখা হচ্ছে জামানা যদি বিশ বছর পিছিয়ে যেত।
মেরীনা : তোমার বিরহের পরে তোমার বিচ্ছেদ বেদনা যে স্বপ্ন আমাকে দেখাচ্ছিল সে কথা আমি তোমাকে বলব, তোমাকে দেখে আমার হৃদয়, সাগরে আবেগের বাধ-ভাংগা ঢেউ উঠেছে।
আওপাস : আপাতত: এখন আবেগ দমিয়ে রাখ মেরীনা! প্রতিশোধের সময় এসেছে।
মেরীনা : আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আক্রমণকারীদের সাথে এসেছ। আক্রমণ কারীরা কারা?
আওপাস : বর্বর। বর্বর মুসলমান। তারপর আওপাস বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিল জুলিয়ন মুসলশানদেরকে আক্রমণের জন্যে কিভাবে তৈরি করল। আওপাস বলল, মেরীনা। স্পেন ফৌজী বাহিনীতে গোথা ফৌজ যেমনি রয়েছে তেমনিভাবে ইহুদীও রয়েছে। তুমি কি এমন কৌশল অবলম্বন করতে পার, যখন রডারিক ও মুসলমান ফৌজ সামনাসামনি হবে তখন গোথা ও ইহুদীরা মুসলমানদের সাথে গিয়ে মিলে যাবে।
মেরীনা এমনটি আমি করতে পারি এবং বাস্তব এমনই হবে। এ ব্যাপারে বেশী কথা বলার প্রয়োজন নেই।
আওপাস : আর কোন খবর দিতে পার?
মেরীনা : হ্যাঁ। রডারিক পামপিলুনাতে রয়েছে এবং সৈন্য একত্রিত করছে। সাধারণ জনসাধারণকে ফৌজে শামিল হবার জন্যে বলা হচ্ছে। মুসলমান ফৌজ সংখ্যা কত।
আওপাস : সাত হাজার। তবে এখন কিছু কম রয়েছে কারণ প্রথম লড়াই-এ কিছু মারা গেছে।
মেরীনা! আহা! তারা তো সংখ্যায় খুবই কম। মুসলমানতে সব খতম হয়ে যাবে।
আওপাস মৃদু হেসে বলল, তোমাদের জেনারেল তিতুমীরকে জিজ্ঞেস কর। তুমি যদি মুসলমানদের যুদ্ধ করতে দেখ তাহলে পেরেশান হয়ে যাবে। তারা কুফরের বিরুদ্ধে লড়াই করা জিহাদ বলে। যার অর্থ হচ্ছে পবিত্র যুদ্ধ। মুসলমানরা জিহাদকে ইবাদত মনে করে। আর সে ইবাদতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে তারা আত্মতৃপ্তি হাসিল করে তবে তারা অহেতুক জীবন দান করে না। যেহেতু তাদের মনে বিন্দুমাত্র মৃত্যুর ভয় থাকে না তাই তারা দুশমনের ফৌজী দলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে দুশমনের জন্যে মৃত্যুদূত হয়ে উঠে। তাদের সেনাপতি এমন কৌশল জানে দুশমনের কোমর ভাঙ্গার পরে তারা তার সে কৌশল বুঝতে পারে। আমার চোখের সামনে মুসলমানদের সাত হাজার ফৌজ তিতুমীরের পনের হাজার ফৌজের যে দুর্দশা করেছে সে সম্পর্কে তুমি তো শুনেছই।
মেরীনা : ভাল করে শুনে রাখ আওপাস! রডারিক যে ফৌজ সংগ্রহ করছে তা এক লাখের কম হবে না।
আওপাস : সে ব্যাপারে তুমি আমাদেরকে ভাবতে দাও। তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালবেসে থাক এবং সে ভালবাসা যদি এখনও তোমার হৃদয়ে থেকে থাকে তাহলে আমি তোমাকে যে কাজ করতে বলেছি তা কর।
মেরীনা : তা অবশ্যই হবে, তুমি চিন্তে করনা। পাগল বেশে তুমি এখান থেকে চলে যাও।