মেরীনা আওপাসকে বলেছিল, এই মরিচিকাকে কেন ভালবাসা বলছ? আমি ইহুদী বেটী হবার পরও এখনও কেন যে শাহী খান্দানের থাবা থেকে বেঁচে আছি তা জানি না। তুমি তোমার গোলামদেরকে হুকুম দাও তারা আমাকে জোর পূর্বক তোমাদের বিলাস বহুল স্বপ্নীল মহলে পৌঁছে দেবে। তুমিতো শাহ্জাদা। বাদশাহর ভাই।
আওপাস : তুমি কি জান না কেন তুমি শাহী খান্দানের হাত থেকে বেঁছে আছ? তোমার কি জানা নেই যে, আমার ভাই মসনদে বসার পর ফরমান জারী করেছেন, কোন ইহুদী লাড়কীকে জোর পূর্বক কোন গির্জায় বা শাহী খান্দানের কারো কাছে সোপর্দ করা গুরুতর অপরাধ। এর বিরুদ্ধাচরণকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। হবে।
আমি বাদশাহর ভাই আর তুমি প্রজা এ কারণে তোমাকে আমি শাহী মহলে নিয়ে যাব না। যেদিন আমি তোমাকে পরিনয় সূত্রে আবদ্ধ করব সেদিন তোমাকে মহলে নিয়ে যাব।….. মেরীনা! আমি তোমাকে পেয়ার করি। মহল থেকে দূরে কোথাও তোমার সাথে আমি সাক্ষাৎ করব।
মেরীনার অন্তরেও আওপাসের মহব্বত জায়গা করে নিয়ে ছিল। তারপর থেকে তারা মহলের বাহিরে কোথাও একত্রে মধুর মিলনে লিপ্ত হতে থাকে। একদিন তাদের মুলাকাতের খবর আপাসের ভাই ডেজার কাছে পৌঁছে।
ডেজা : তুমি যে শাহী খান্দানের সন্তান এ অনুভূতি কি হারিয়ে ফেলেছ? ঐ লাড়কী কে? যার সাথে তুমি মেলা-মেশা কর।
আওপাস : ইহুদী, আমাদের পরস্পরের সম্পর্ক শারীরিক নয় আর আমি তার সাথে বাদশাহর ভাই হিসেবে সাক্ষাৎ করি না।
ডেজা : তুমি কেবল সেই লাড়কীর সাথেই মিলতে পারবে যার সাথে তোমার শাদী দেব। আর সে লাড়কী কে তুমি তো জানই।
আওপাস : আপনি যার সাথে আমার শাদী দেবেন তার সাথে আমি মিলব না। আমি তো ঐ ইহুদী লাড়কীকেই শাদী করব।
ডেজা : তাহলে তুমি এ মুলকের মসনদ ও তাজ থেকে বঞ্চিত হবে। তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমার পর এ মসনদে তুমি বসবে। তোমার রাণী গোখা খান্দানের হবে। সে সাধারণ প্রজা ও ইহুদী হবেনা।
আওপাসঃ মসনদ ও মুকুট থেকে বঞ্চিত হব তবুও মেরীনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।
বড় ভাই এর সাথে আওপাসের বাদানুবাদ হলো। ডেজা একদিকে বড় ভাই অপরদিকে বাদশাহ। সে এ দু অধিকারে মেরীনার সাথে সাক্ষাৎ না করার নির্দেশ দিল।
যদি সাক্ষাৎ করে তাহলে তাকে কয়েদ খানায় পাঠান হবে। আওপাস এ ধমকীকেও ভয় করল না এবং ভাইকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিল, সে মেরীনার সাথে বেওফায়ী করতে পারবে না।
কিছু দিন পর এক সাক্ষাতে মেরীনা আওপাসকে বলল, ডেজার এক রাজদূত তার বাবাকে বলেছে, সে যেন তার বেটীকে শাহী খান্দানের কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে না দেয় আর মেরীনাকে যেন তাড়াতাড়ি শাদী দিয়ে দেয়।
ডেজা যেহেতু বাদশাহ ছিল তাই মেরীনা নামক ঐ ইহুদী লাড়কীকে ইচ্ছে করলে সরিয়ে দিতে পারত কিন্তু সে ছিল দয়াপ্রবণ ও জনগণের অধিকার সচেতন এ কারণে সে তা করা ভাল মনে করেনি। মেরীনাকে তার বাবা গৃহবন্দি করে রেখেছিল কিন্তু আওপাস রাতের আঁধারে তার সাথে সাক্ষাৎ করত। মেরীনার বাবা তার শাদী ঠিক করেছিল কিন্তু মেরীনা তাতে সম্মত হয়নি।
ডেজা মেরীনাকে তো কোন শাস্তি দেয়নি এমনিভাবে তার বাবাকে কোন প্রকার হুমকি-ধমকি দেয়নি তবে আওপাসকে দিয়েছে কঠিন শাস্তি তারপরও সে মেরীনার সাথে মিলন বন্ধ করেনি, তাইতো বলে প্রেম মানে না কোন বাধা। একদা রাতের আঁধারে তারা পলায়ন করছিল কিন্তু পখিমাঝেই ধরা পড়ে যায়। তারপর থেকে ডেজা আওপাসকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল।
আওপাস তার বাদশাহ ভাই এর জন্যে আর মেরীনা তার বাবার জন্যে এক বড় মসীবত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের প্রেম সাগরে ডুব দেয়া দু’বছর অতি বাহিত হয়েছিল। তাদের প্রেম কাহিনী টলেডো শহরে মানুষের মুখে মুখে অনুরিত হচ্ছিল। এরি মাঝে একদিন হঠাৎ করে শাহী মহলে শোরগোল শুরু হয়ে গেল। খবর এলো ফৌজ বিদ্রোহ করেছে আর এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফৌজী কমান্ডার রডারিক। ডেজা তার দেহরক্ষী দল ও টলেডোতে আরো যে ফৌজ ছিল তাদেরকে নিয়ে বিদ্রোহীদের বিদ্রোহ দমনের জন্যে রওনা হলো। সে ধারণা করেছিল গিয়েই বিদ্রোহীদেরকে খতম করে ফেলবে কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল এর বিপরীত। তার জানা ছিল না তার বিরুদ্ধে ফৌজী বাহিনী ও গির্জায় প্রোপাগান্ডা ছড়ান হয়েছিল যে সে নিজ মুলুকের ওফাদার নয় বরং অন্যদেশের বাদশাহর সাথে নিজ মুলুকের ব্যাপারে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
পূর্বেই বলা হয়েছে ডেজা ছিল একজন মানব প্রেমিক বাদশাহ্ আর সে ইহুদীদেরকে স্বসম্মানে বসবাসের ব্যবস্থা করে ছিল এ কারণে ফৌজী অফিসার, জায়গীরদার, আমীর ওমারারা হয়েছিল তার প্রতি অখুশী। পাদ্রীরা তো তার প্রতি হয়েছিল চরম ক্ষীপ্ত। তারা ভোগের জন্যে বেছে নিত ইহুদের নব যৌবনা সুন্দরী ললনা। ডেজা এ রাস্তা করে দিয়েছিল বন্ধ। জায়গীরদার ও ধর্মগুরুরা তার বিরোধী হয়ে যায় ফলে ক্ষমতার মসনদে থাকা হয়ে যায় দুস্কর। ডেজার অবস্থাও এমনটিই হয়েছিল। ডেজা যে ফৌজ টলেডো হতে নিয়ে গিয়েছিল তার দরুন নিজের প্রতি বিশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু ময়দানে গিয়ে সে তার ভুল বুঝতে পারলতাবৎ ফৌজ তার পক্ষ ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের সাথে মিলে গেল।
ডেজা রডারিকের হাতে ধৃত হয়ে নিহত হলে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য পলায়ন করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সিওস্তাতে গিয়ে উঠলে জুলিয়ন তাদেরকে আশ্রয় দিল কারণ জুলিয়ন ছিল ডেজার জামাতা। তা নাহলে সেও তাদেরকে আশ্রয় দিত না। কারণ সে ছিল স্পেনের জায়গীরদার।