মুশীর পাঠ করতে লাগল, তারা চারটি জাহাজে এসেছে এবং জাহাজ থেকে অবতরণ করে জাহাজগুলোতে অগ্নি সংযোগ করেছে। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাবৎ ফৌজ নিয়ে পৌঁছে ছিলাম। তাদের সংখ্যা আমার ফৌজের অর্ধেক ছিল। তাদেরকে চিরতরে খতম করার জন্যে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু তারা এমনভাবে লড়াই করল যার ফলে আমার ফৌজের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি হল। বৃক্ষ হতে তীর, টিলা হতে তীর আর আশ্চর্যের বিষয় হলো কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছিল না। তাদের কোন ঘোড় সোয়ার দেখা যাচ্ছিল না কিন্তু না জানি আমাদের পশ্চাদ দিক থেকে কোথা হতে এসে পড়ল। তাদের সোয়াররা আমার ফৌজের ওপর এমন
হামলা করল যে তা শামাল দিয়ে পিছনে ফিরার সুযোগই দিল না।
ঐ পয়গামে তিতুমীর যুদ্ধ ও তার ফৌজের করুণ অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করে ছিল তারপর সে যা লেখেছিল তা আজও ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত।
তারা কারা এবং কোথা থেকে আসল তা বুঝা গেল না। তবে যারাই হোক এবং যেখান থেকেই আসুক তারা যে অত্যন্ত যুদ্ধবাজ ও ভয়ঙ্কর এতে কোন সন্দেহ নেই। হতে পারে তারা দম্য দল, লুটতরাজ করে ফিরে যাবে তবে তাদেরকে সেখানে খতম করা জরুরী। আমার ফৌজ পনের হাজার আর তাদের ফৌজ ছিল এর অর্ধেক এখন আমার এর চেয়ে আরো বেশী ফৌজের প্রয়োজন। সর্বশেষ এবং জরুরী কথা হলো তাদের সাথে আমাদের জায়গীরদার জুলিয়ন এবং ডেজার ভাই আওপাসও রয়েছে।
রডারিক পেরেশাসন ও আশ্চর্য হয়ে বললেন, জুলিয়ন? আওপাস! তাদেরকে মৃত্যু এখানে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি বুঝেছি। তিতুমীর বুজদিল প্রমাণিতহয়েছে, আমি তাকে জীবিত থাকার সাধ মিটিয়ে দেব। হামলা করেছে কারা,এতটুকু দেখার সুযোগ সে পায়নি…..
জুলিয়ন-আওপাস আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছে। তার নিজস্ব ফৌজের সাথে বর্বরদের হয়তো নিয়ে এসেছে। তিতুমীরকে ফৌজ দেব না, আমি নিজেই যাব। জুলিয়নের বেটী ফ্লোরিডাকে আমার মহলে নিয়ে আসব। ঐ বদবখতদের জানা নেই আমি গাদ্দারীর কি শাস্তি দেই।
রডারিক হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন এবং বিদ্রোহীদের বিবস্ত্র আওরাতদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা এখন চলে যাও, তারপর সিপাহীদেরকে রডারিক নির্দেশ দিলেন, কাল সকালে বিদ্রোহীদেরকে ময়দানে নিয়ে ঘোড়ার পদতলে পৃষ্ঠ করে হত্যা করবে আর তাদের আওরতদেরকে রেখে দিয়ে এখানের গির্জার পাদ্রীদের কাছে সমর্পণ করবে।
মহিলারা বুক ফাটা চিৎকার শুরু করল, দুতিন জন বাদশাহর পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল, একজন মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,আপনি আমাদেরকে অনেক শাস্তি দিয়েছেন আর শাস্তি দিয়েন না মাফ করেদেন।
এক কিশোরী বলল, বাদশাহ সালামত! আমার বাবার অপরাধের শাস্তি কেন আমাকে দিচ্ছেন? আমি তো কিছুই জানি না আমার বাবা পর্দার আড়ালে কি করেছে। অন্য আরেকজন মহিলা বলল, আমাকে ঘোড়ার পদতলে পৃষ্ঠ করেন; আমার ভাইকে ছেড়েদিন।
রডারিক ধাক্কা দিয়ে তিনজনকেই সরিয়ে দিল।
সর্বকনিষ্ট কিশোরী বলল, শাহে উলুস! যত পার আমাদের ওপর জুলুম কর, আমাদের অশ্বতলে পৃষ্ঠ কর, একজন নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় লাড়কীর চিত্ত ফাটা আহ্….. শুনে রাখ। তোমার বাদশাহী মসনদ ও ঘোড়ার পদাঘাতে চুর্মার হবে, মিটে যাবে চির তরে তোমার নাম নিশানা, তোমার ও তোমার বাদশাহীর দিন ঘনিয়ে এসেছে।
রডারিক তিরস্কারের হাসি হেসে বলল, সাবাস! আমি তোমার সাহসীকতার তারীফ করছি, তুমি এত বড় মুলুকের বাদশাহকে ভয় করনি….. এখানে এসো লাড়কী! আমি তোমাকে ইনয়াম দেব।
লাড়কি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
রডারিক : সবার দিকে ফিরে দাঁড়াও। সকলে দেখ এ লাড়কী কত বড় সাহসীনী বীরঙ্গনা। লাড়কী রডারিকের দিকে পশ্চাদ ফিরে দাঁড়াল। দরবারীরা তাকে দেখতে লাগল। রডারিকের তলোয়ার তার শাহী কুরসীর সাথে রাখা ছিল। বাদশাহ ক্ষীপ্ততার সাথে দ্রুত বেগে তলোয়ার কোষমুক্ত করে পশ্চাদ দিক হতে কিশোরীর মস্তকে এমন জোরে আঘাত হানল, এক কোপে মাথা শরীর থেকে পৃথক হয়ে গেল এবং সে কিছুক্ষণ ছটফট করে চিরতরে নিথর হয়ে গেল।
পরের দিন সকালে বিদ্রোহীদেরকে এক ময়দানে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া হল। অপর প্রান্তে পঞ্চাশ-ষাটজন ঘোড় সোয়ারী অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্ব নিয়ে অপেক্ষমান ছিল। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা বিদ্রোহীদের দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। বিদ্রোহীরা তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে এদিক-সেদিক ছুটতে লাগল, সোয়ারীরা ঘোড়া ছুটিয়ে অশ্ব পদতলে তাদেরকে চিরতরে খতম করে দিল।
***
এদিকে উত্তর আফ্রিকার দারুল ইমারত কায়রোতে আমীরে মিশর ও আফ্রিকা মুসা ইবনে নুসাইর তারেক ইবনে যিয়াদের পয়গাম পড়ে আহাম ব্যক্তিদেরকে শুনাচ্ছিলেন।
…. আল-হামুদুলিল্লাহ্, আমরা আমাদের দ্বিগুণ দুশমনের ওপর বিজয়ার্জন করেছি। আমাদের তিনশত ঘোড় সোয়ারের মুকাবালায় এক হাজার ঘেড়. সোয়ার ছিল। স্পেনের প্রতিটি সৈন্যের ছিল লৌহ শিরোস্ত্রান। তাদের হাতিয়ার ছিল আমাদের হাতিয়ারের চেয়ে অনেকগুণ ভাল। আল্লাহ্ তায়ালা ফাতাহ্ হাসিলের তরিকা আমাকে বাতলিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ হতে আমি মদুদ প্রাপ্ত হয়েছি। তীরন্দাজদেরকে বৃক্ষে আর ঘোড় সোয়ার দেরকে টিলার পাশে লুকিয়ে রেখে ছিলাম। তারপর পশ্চাদে হটার থোকা দিয়ে তাদেরকে সম্মুখে অগ্রসর করেছি, তারা এগুতে এগুতে আমার তীর আন্দাজের নাগালে এলে তারা বৃক্ষ হতে দুশমনের ওপর অবিরাম তীর বর্ষণ শুরু করলে তারা পেরেশান হয়ে পড়ে এরি মাঝে পশ্চাদ হতে আমার ঘোড় সোয়ার তাদের ওপর আক্রমণ করে বসে। এভাবে সাত হাজার আল্লাহর পথের মুজাহিদ পনের হাজার কাফেরের ওপর বিজয়ার্জন করে।