আওপাস : আমাকে চার-পাঁচজন বর্বর দাও, আমি তাকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে যাচ্ছি।
মুগীছ : আমি আমার হেফাজত রক্ষীর চারজন তোমাকে দিচ্ছি।
আওপাস চারজন ঘোড় সোয়ারী নিয়ে বীর বিক্রমে ছুটে চলল, ঐদিকে তিতুমীরের এক নায়েব তাকে বলল, তিতুমীর! আপনি কি দুশমনের হাতে আত্মাহুতি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? আমাদের তো কিছুই বাকী নেই। সব খতম হয়ে গেছে।
তিতুমীর : তুমি কি এখান থেকে পলায়নের মশওয়ারা দিচ্ছ।
নায়েবঃ ঝান্ডা গুটিয়ে ফেলে গ্রুত পলায়ন করুন। অর্ধেক ফৌজ খতম হয়ে গেছে বাকীরা পলায়নপদ।
তিতুমীর সবকিছু প্রত্যক্ষ করছিল। মুসলমানদের শক্তিম, স্পৃহা ও লক্ষ্য করছিল। মুসলমানরা তাদের দ্বিগুণ ফৌজকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তাদেরকে হত্যা শুরু করেছে। খোদ তিতুমীরের মাঝেও ত্রাস সৃষ্টি হয়েছিল। এ অবস্থায় তার বাঁচার জন্যে পলায়ন ছাড়া কোন উপায় ছিল না। সে পলায়নের জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল এবং পতাকা বহনকারীকে গুটিয়ে ফেলার জন্যে নির্দেশ দিল।
ঝান্ডা অদৃশ্য হবার সাথে সাথে মুহূর্তের মাঝে ময়দান খালী হয়ে গেল। পড়ে রইল কেবল লাশ আর লাশ। কিছু জখমী ফৌজ পড়ে ছিল তারা উঠার চেষ্টা করছিল কিন্তু লাগামহীন স্পেন ঘোড়ার পদতলে পৃষ্ঠ হয়ে তারাও চিরতরে খতম হয়ে গেল।
তারেক ইবনে যিয়াদ : ঘোড়ার বাগডোর হাতে নেও আর মালে গণিমত জমা কর। দুশমনের জেনারেল পলায়ন করেছে।
***
কিছুদিন পর স্পেন বাদশাহ্ রডারিক জেনারেল তিতুমীরের পয়গাম পড়ে গোয় ফেটে পড়ছিলেন। সে সময় তিনি দারুল হুকুমত টলেডোতে ছিলেন না। টলেডো হতে কয়েক দিনের দূরত্ব পামপিলুনা নামক এক শহরে অবস্থান করছিলেন। সেথায় জার্মানের কিছু লোক বসবাস করত। তারা স্পেনের স্থানীয় লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিদ্রোহ করিয়ে দিয়ে ছিল। ইতিহাস যেমনিভাবে রডারিককে বিলাস প্রিয় ও অন্যায় প্রবণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঠিক তেমনিভাবে যুদ্ধের ময়দানে শক্তিশালী দুশমনের জন্যেও বাজ পাখি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার শাহী মর্যাদার ওপর সামান্যতম আঘাতও তার জন্যে ছিল অসহনীয়। বিদ্রোহীদের জন্যে তিনি ছিলেন মালাকুল মওত। পামপিলুনা এলাকাতে বিদ্রোহের খবর পেয়ে কোন জেনারেল না পঠিয়ে নিজে ফৌজ নিয়ে সেথা উপনীত হয়েছেন।
বিদ্রোহীরা মুকাবালা করল কিন্তু রডারিকের রোষ ও আক্রোশ তারা বর্দাশত করতে পারল না। ঐ যুদ্ধে রডারিক জীবিতদেরকে পলায়ন করার সুযোগ দিলেন না। বহিরাগত বিদ্রোহী সর্দারদেরকেও গ্রেফতার করলেন তাদের আরো কয়েকজন সাথীও ধৃত হল। তাদের ওপরই নয় তাদের আওরতদের উপরও চলল নির্যাতনের স্টীম রোলার। বিদ্রোহীদেরকে এমন অমানবিক শাস্তি দেয়া হতো যাতে তারা জীবিতও থাকতে পারত না আবার মৃত্যু বরণ করত না। রডারিক তাদেরকে মৃত প্রায় করে আবার জীবিত করার চেষ্টা করত। যখন তারা বেহুশ হয়ে যেত তখন তাদেরকে এক ময়দানে নিক্ষেপ করে শহরের লোকদেরকে একত্রিত করে একজনকে-এলান করার নির্দেশ দেয়া হত।
“এরা বিদ্রোহী, এরা গাদ্দার, এরা শাহান শাহে উন্দুলুসের ক্রোধ সম্পর্কে ওয়াকিফ ছিল না। প্রতিদিন এসে তার অবস্থা দেখে শিক্ষা গ্রহণ কর আর শাহানশাহর রোষানলকে ভয় কর।……এরা বিদ্রোহী….. এরা গাদ্দার…..।”
তাদের আওরতদের সাথে আরো ঘূণ্য আচরণ করা হত। রাতে তাদেরকে বিবস্ত্র করে রডারিকের আম দরবারে নাচতে বাধ্য করা হত। এর সাথে সাথে তাদেরকে করা হত বেত্রাঘাত। সে মজলিসে বাদশাহ, ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও ফৌজী অফিসাররা উপস্থিত থাকত। তারা এসব রমণীদের সাথে লজ্জা জনক আচরণ করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত। পরিশেষে শরাব পান করে উম্মাদ হয়ে তারা। আওরাতদেরকে নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।
সন্ধ্যেবেলা, দরবারে লোক থৈ থৈ করছে। বিদ্রোহীদের আওরতদেরকে উলঙ্গ করে নাচান হচ্ছে। পনের বছরের এক কিশোরীকে রডারিক তার উরুর ওপর বসিয়ে রেখেছেন, শরাব পানির মত প্রবাহিত হচ্ছে, এরি মাঝে রডারিককে খবর দেয়া হলো টলেডো হতে তিতুমীরের কাসেদ এসেছে সত্তর মুলাকাত করতে চায়।
রডারিকের নির্দেশে কাসেদ অন্দর মহলে গিয়ে বাদশাহর কাছে লিখিত পয়গাম পেশ করল। বাদশাহ সে পয়গাম তার এক মুশিরকে পড়ে শুনানোর জন্যে বললেন এবং তালি বাজালেন সকলে মুহূর্তের মাঝে নিশ্চুপ হয়ে গেল, পরিবেশ হয়ে গেল নিরব-নিস্তব্ধ।
মুশীর উচ্চস্বরে পয়গাম পাঠ করতে লাগল,
শাহান শাহে উন্দুলুসের খেদমতে সালাম ও আদাব। শাহানশাহর এ গোলাম শাহী খান্দানের ইজ্জত ও মুলুকের মর্যাদা রক্ষার্থে সব সময় জীবনবাজী রেখে লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছে। যেখানেই বিদ্রোহীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সেখানে শাহী খান্দানের এ গোলাম মৃত্যুদূত হিসেবে উপস্থিত হয়েছে এবং বিদ্ৰোইদেরকে মৃত্যুপথের যাত্রী বানিয়েছে, কেউ বলতে পারবেনা তিতুমীর কোন ময়দানে পরাজয় বরণ করেছে। কিন্তু এরা কোন জিন-ভূত যারা আমার অর্ধেক ফৌজ খতম করে দিয়েছে আর বাকী অর্ধেক হয়েছে পলায়নপদ।
রডারিক তার উরুর ওপর বসা কিশোরীকে সরিয়ে দিয়ে ইতস্ততঃ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ঠিকভাবে দেখে পড়ছ তো? নিহত হয়েছে আর বাকীরা পালিয়েছে। কোথায়…..? জিন-ভূত-ছিল মানে? তাড়াতাড়ি পাঠ কর।