হিজি ফ্লোরিডাকে পরম আবেগে বুকে জুড়িয়ে ধরে ফ্লোরিডার যৌবন সুরায় ভরা ওষ্ঠ ধরে ঠোঁট মিলিয়ে নিল। ফ্লোরিডার মসৃণ কপোল বেয়ে কয়েক ফোঁটা তপ্ত অশ্রু হিজির হাতে পড়ল। হিজিরও নয়ন যুগল আঁসুতে ভরে উঠল।
সুন্দরী-সৌষ্ঠব নওজোয়ান ফ্লোরিডা স্পেনের মত এত বড় মুলকের বাদশাহকে প্রত্যাখান করে শাহী আস্তাবলের এক সামান্য, নওকরকে তার সবকিছু সমর্পণ করেছিল।
তারেক ইবনে যিয়াদের সৈন্য রওনা হয়ে যাবার পর থেকে প্রতিদিন সকাল সাঁঝে ফ্লোরিডা ইবাদত খানাতে গিয়ে ইবাদত করে কেবল দুটো প্রার্থনা করত। এক. মুসলমানদের যেন বিজয় হয় দুই, হিজি যেন পাপিষ্ঠের মাথা নিয়ে জীবিত ফিরে আসে।
স্পেন ফৌজ একত্রিত হয়েছে এ সংবাদ পাবার সাথে সাথে তারেক ইবনে যিয়াদ তার নিজ ফৌজকে প্রস্তুত হবার হুকুম দিলেন আর তিনি দ্রুতগতিতে জাবালুত তারেকে গিয়ে আরোহন করে চতুর্দিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তার সাথে মুগীছে রূমী ছাড়াও সেনাপতি তুরাইফ ইবনে মালেক ছিলেন। তিনি আগেই পছন্দ মত ময়দান যুদ্ধের জন্যে নির্বাচন করে রেখেছিলেন। তিনি এমন এলাকার দিকে ইশারা করলেন যা ছিল সবুজ-শ্যামল বৃক্ষ লতাতে ঢাকা উঁচু টিলা।
তারেক ইবনে যিয়াদ তার সালারদেরকে বললেন, তামাম সোয়ারীকে ঐ টিলার উপর পাটিয়ে দাও, আর কমান্ডারদেরকে বল তারা যেন প্রতিটি সোয়ারীকে অশ্বে। প্রস্তুত রাখে এবং নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে।
তারেক ইবনে যিয়াদ সালারদেরকে ফৌজের নিয়ম শৃংখলা বুঝিয়ে হিদায়াত দিলেন তারপর পর্বত হতে অবতরণ করলেন। যেসব জেলে ও মাল্লাকে আটক করা হয়েছিল তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে বলা হলো তারা যেন ঘর থেকে না বের হয়। তীর আন্দাজ কমান্ডারদেরকে বিশেষ হুকুম দিলেন। এরি মাঝে খবর এলো স্পেন ফৌজ চলে এসেছে। তারেক ইবনে যিয়াদ তার সাথে কিছু সেনাদল নিয়ে সম্মুখে চলে গেলেন। অপর দিক থেকে তিতুমীর সম্মুখে এলো, সে হিফাজত রক্ষীর বেষ্টনীতে ছিল। রক্ষীরা উমদা জংগী ঘোড়ায় সোয়ার ছিল।
তিতুমীর উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কারা? কোথা থেকে এসেছ? এখানে কি জন্যে এসেছ?
তারেক জিজ্ঞেস করলেন, সে কি বলছে?
তিতুমীরের কথার তর্জমা করে তারেককে বুঝান হল।
জুরিয়ন : দাঁড়াও ইবনে যিয়াদ! তাকে জওয়াব আমি দিচ্ছি।
জুলিয়ন সামনে অগ্রসর হয়ে তিতুমীরের জবাবে উচ্চস্বরে বললেন, জিজ্ঞেস করছ আমরা কি নিতে এসেছি। আমরা স্পেন নিতে এসেছি।
তিতুমীর রোষে ফেটে পড়ে চিৎকার করে বলল, হে নিমক হারাম! তুই আমাদের জায়গীরদার আর তুই এসেছিস আমাদের মুলুকের উপর হামলা করতে কাদেরকে সাথে নিয়ে এসেছিস? এতে তার নিজস্ব ফৌজ নয়। তুই ইতিপূর্বে এখান থেকে লুটতরাজ করে নিয়ে গেছিস এজন্য তুই মনে করেছিস এখনো সহী সালামতে জিন্দা অপেই যাবি। পরিণাম চিন্তা করে এই বর্বর লসকরকে ফিরিয়ে নিয়ে যা, আমার ফৌজের প্রতি লক্ষ্য কর, তোর ফৌজের চেয়ে দ্বিগুণ। তোর কাছে তো ঘোড় সোয়ার নেই।
জুলিয়ন ও তিতুমীরের মাঝে কি কথা বার্তা হল তা তারেক ইবনে যিয়াদকে, তার ভাষায় বুঝিয়ে বলা হল, তারেক ইবনে যিয়াদ যুদ্ধের দামামা বাজাবার হুকুম দিলেন। দামামা বেজে উঠল, তারেক তার সৈন্যদেরকে হামলা করতে ইশারা করলেন।
তিতুমীরের কাছে রয়েছে মুসলমানদের দ্বিগুণ ফৌজ এবং এক হাজার ঘোড় সোয়ার। এতে সে ছিল আত্বম্ভরী। পায়দল মুসলমান ফৌজ তাকবীর ধ্বনি দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগল। তিতুমীর তার মুহাফিজদের সাথে পশ্চাতে চলে গেল। তার নিজে যুদ্ধ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। বিজয়ের ব্যাপারে তার আত্মবিশ্বাস ছিল। অপরদিকে তারেক ইবনে যিয়াদ স্বীয় হামলাকারী সৈন্যদলের অগ্রভাগে ছিলেন। তিতুমীর তার এক হাজার ঘোড় সোয়ারকে পায়দল বাহিনীর পিছনে রেখেছিল।
উভয় পক্ষের মাঝে মুকাবিলা শুরু হল। মুসলমানদের ভাল করেই জানা ছিল এটা তাদের জীবন মরনের বিষয়। ফিরে আসার কোন মাধ্যম ছিল না। জাহাজ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের সিপাহসালার তারেক ইবনে যিয়াদের ভাষণে তারা নতুন জীবন লাভ করেছিল। তারেক বিপক্ষের সম্মুখ সৈন্যদলের ওপর বীরবিক্রমে আক্রমণ চালিয়ে পিছু হটছিলেন। তার অধিনস্থ কমান্ডাররা পশ্চাদপদ হচ্ছিল। প্রলয়ংকরী যুদ্ধের মাঝে তিতুমীর চিৎকার করে বলছিল, তাদেরকে জিন্দা ফিরে যেতে দিবে না। তারা পলায়ন করছে, পলায়ন করতে যেন না পারে। সবাইকে খতম করে দাও….. তাদের পশ্চাদধাবন কর।
তারেক ইবনে যিয়াদ তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে আরও দ্রুত পিছু হটতে লাগলেন আর দুশমন সৈন্যদল তাদের পিছু পিছু আসল। তারেক ইবনে যিয়াদ তার ফৌজকে তিন ভাগে বিভক্ত করে রেখে ছিলেন। মধ্যেবর্তী দলকে তিনি তার নিজের কমান্ডে রেখে ছিলেন। এদের দ্বারাই তিনি হামলা চালিয়ে পিছু হটে আসছিলেন। তাকবীরধ্বনি থেমে গেল এবং মুসলমানরা এমন জায়গায় এসে পৌঁছল যেখানে ঘনগাছ পালা এবং একদিকে লম্বাটিলা।
স্পেন সৈন্য যখন ঐ গাছের নিচে আসল তখন গাছের প্রতিটি শাখা থেকে তাদের উপর অবিরাম তীর বন্যা বয়ে গেল। মুসলমান তীর আন্দাজরা টিলার উপর লুকিয়ে ছিল তারাও দুশমনের ওপর তীর বর্ষণ শুরু করল। তীর আন্দাজ খুবই কাছে থেকে তীর নিক্ষেপ করছিল এজন্য একটা তীরও লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে দুশমন সৈন্যের শরীর ক্ষত-বিক্ষত করছিল।