জুলিয়ন : আমাদের প্রথমে মুকাবালা হবে উপকূলবর্তী ফৌজের সাথে। সময়ের পূর্বেই যদি সব ফৌজ একত্রি হয়ে যায় তাহলে আমাদের জন্যে মুশকিল হবে। তাদের এ ফৌজের সংখ্যা আমাদের চেয়ে বেশি অধিকন্তু তাদের হাতিয়ারও বেশ উমদা, কিন্তু তারা আমাদের আগমন সংবাদ পায়নি, আমরা এদেরকে পৃথক পৃথকভাবে খতম করব।
মুসলমান ফৌজ জাহাজ থেকে নেমে সামান পত্র গুছিয়ে সামনে অগ্রসর হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারেক ইবনে যিয়াদ নির্দেশ দিয়ে ছিলেন এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা হবে তবে তার স্থাপন করা হবে না।
এক ঘোড়া সোয়ার অত্যন্ত দ্রুত ঘোড়া হাঁকিয়ে তারেক ইবনে যিয়াদ, জুলিয়ন ও আওপাসের কাছে থেমে ঘোড়া থেকে নেমে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও। স্পেন ফৌজ আমাদের আগমন সংবাদ পেয়ে গেছে, তাবৎ চৌকির ফৌজ একত্রিত হয়েছে। তারা বেশী দূরে নয়, কিছুক্ষণের মাঝেই এসে যাবে।
তারেক ইবনে যিয়াদ : এ ব্যক্তি কে? বর্বর নয়তো?
জুলিয়ন : সে আমাদের লোক। তার নাম হিজি। জুলিয়ন হিজিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে কিভাবে এলে?
হিজি : ঘোড়া ও ফৌজ যখন জাহাজে সোয়ার হচ্ছিল তখন আমি মুসলমানদের পোশাক পরে এসে ঘোড়ার হাজাজে সোয়ার হয়ে গেলাম। এখানে এসে দেখলাম ফৌজ জাহাজ থেকে অবতরণ করে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু এখানের ফৌজ যে আমাদের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে বা তারা কোথায় আছে তার দিকে কারো কোন লক্ষ্য নেই। আমিএ এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিফ তাই আগে চলে গেলাম। তারপর ঘোড়া পিছে রেখে চুপি-চুপি সামনে অগ্রসর হয়ে এখানের ফৌজ দেখতে পেলাম। এখানের ফৌজ আমাদের আগমন খবর জানে কিনা এটা জানার জন্যেই আমি গিয়ে ছিলাম।
তারেক ইবনে যিয়াদের মত একজন বিচক্ষণ সিপাহ্ সালার এ বিষয়টা ভুলে যাবেন এটা অসম্ভব ছিল কিন্তু তিনি সমেমাত্র প্রতিরক্ষা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন আর সেখানের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হচ্ছিলেন তাই সম্মুখে নজর দেয়ার ফুরসত তার হয়নি।
তারেক ইবনে যিয়াদ প্রাণ খুলে হিজিকে মুবারকবাদ জানালেন। এ হলো সেই হিজি যাকে ফ্লোরিডা প্রাণ দিয়ে ভালবাসত এবং নিজের কাছে পাবার জন্যে ছিল পাগল পারা। ফ্লোরিডার বিরহে উম্মাদ হয়ে তার পিছে পিছে টলেডোতে গিয়ে পৌঁছেছিল। শাহ্ রডারিক ফ্লোরিডাকে বে আব্রু করলে হিজি শাহী আস্তাবল থেকে ঘোড়া চুরি করে পালিয়ে সিওয়াস্তা পৌঁছে ফ্লোরিডার বাবাকে অবহিত করেছিল।
কিছুদিন পূর্বে মুসা ইবনে নুসাইরের আস্থাভাজন হবার জন্যে জুলিয়ন যখন স্পেনের তীরবর্তী এলাকাতে হামলা করেছিলেন তখন ফ্লোরিডা তাদের সাথে যাবার জন্যে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে রওনা দিয়েছিল কিন্তু তার বাবা জুলিয়ন তাকে যেতে দেননি।
তারপর তারেক ইবনে যিয়াদের ফৌজ যখন রওনা হচ্ছিল তখন জুলিয়ন ও আওপাস তাদের সাথে ছিলেন। ফ্লোরিড়া ভাল করে জানত তার বাবা তাকে যেতে দেবে না তাই সে হিজিকে বলেছিল, সে মুসলমান ফৌজের সাথে যেতে চাই। হিজিকে এ ফৌজের সাথে নেয়া হচ্ছিল না। মুসলমান ফৌজের সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিল না। যদি জুলিয়নের সিপাহী বাহিনী যেত তাহলে হিজি যেতে পারত কারণ তার বাপ ছিল শাহী আস্তাবলের বড় অফিসার।
“তুমি আমাকে মুসলমান ফৌজের লেবাস এনে দাও, তা পরে আমি জাহাজে সোয়ার হয়ে যাব। আমি আমার নিজের হাতে রডারিক থেকে প্রতিশোধ নেব” ফ্লোরিডা হিজিকে লক্ষ্য করে বলেছিল।
হিজি বুঝাচ্ছিল কিন্তু সে উম্মাদের ন্যায় হয়ে গিয়েছিল, হিজি আশংকা করছিল এ লাড়কী যা বলছে তা হয়তো করেই দেখাবে।
হিজি : ফ্লোরা! আমি তোমার যন্ত্রণা অনুভব করছি কিন্তু তুমি কি একটা বিষয় ভেবে দেখেছ, রডারিক পর্যন্ত পৌঁছে, তাকে যে তুমি হত্যা করতে পারবে তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে?
ফ্লোরিডা : আমি মুসলমানদের পুরুষের লেবাসে আসব।
হিজি : আবেগে নয়, গভীরভাবে চিন্তে কর ফ্লোরা! তুমি জখম হতে পার, কতলও হতে পার….. আর যদি তুমি জিন্দা ধরা পড় তাহলে তুমি নিজেই চিন্তে করে দেখ রডারিকের ফৌজরা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করবে? হয়তো তুমি এমন পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হবে। তখন তুমি কিভাবে কার থেকে তোমার ইযযত হরনের প্রতিশোধ নেবে?
ফ্লোরিডা নিশ্চুপ হয়ে গেল, যেন সে কথা অনুধাবন করতে পেরেছে।
ফ্লোরিডা : তাহলে এটা কর হিজি! তুমি যাও এবং নিজ হাতে পাপিষ্ঠ রডারিককে হত্যা কর। আমি তোমার আমানত ছিলাম, সে তার মাঝে খেয়ানত করেছে। আমার ইযযত, আমার অন্তরের মালিক তুমি। ঐ শয়তান রডারিক অন্তর মন পর্যন্ত অপবিত্র করে দিয়েছে….. বল হিজি! আমার অন্তরে যে আগুন লেগেছে তা কি তুমি পারবে নির্বাপন করতে?
হিজি : হ্যাঁ পারব। আমি তোমার বে আব্রুর প্রতিশোধ নেব। হিজি ফ্লোরিডার নরম-মাংসল হস্ত যুগল নিজ হস্তে নিয়ে চুম্বন করে বুকের ওপর রেখে বলল, তোমার ভালবাসার কসম! তোমার প্রীতি মহব্বতের শপথ! রডারিক আমার হাতেই মরবে।
ফ্লোরিডা হিজির হাত ধরে বলল, তুমি আরো একটা ওয়াদা কর হিজি! রডারিকের মাথা কেটে তুমি নিয়ে আসবে, আমি তার মাথা রাস্তার কুকুরকে দিয়ে খাওয়াব।
হিজি : আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ফ্লোরা। তার মাথা তোমার কাছে, উপস্থিত করব।