উত্তর আফ্রিকাতে বর্বরদের সাথে সর্বশেষ যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে মুগীছ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ইতিহাসু সে বিজয়ের মুকুট মুগীছের মাথাতেই রাখে। মুগীছ স্পেনের অধিবাসী ছিলেন বলে ইতিহাসে জানা যায়।
মুগীছ অবরুদ্ধ জনতা দলের কাছে গেলেন।
একজন বৃদ্ধ মাল্লা বলল, হে ফৌজের সর্দার! তোমরা যারাই হও এবং যেখান থেকেই আসনাকেন, বল তোমরাও কি গরীবের ইযযতকে এতো তুচ্ছ মনে কর? আমার মনে হচ্ছে তুমি এখনই আদেশ দেবে আমাদেরকে গ্রেফতার করার আর যুবতী রমণীদেরকে পৃথক করার জন্যে। তুমি কি আমাদের ব্যাপারে এ নির্দেশ দেবে? আমরা তোমাদের কাছে এ জন্যে এসেছিলাম যে তোমাদের একটা জাহাজে আগুন লেগেছে বাকী জাহাজে আগুন না লাগে এ জন্যে তোমাদের সাহায্য করতে পারব।
মুগীছ : আমাদের ব্যাপারে তোমাদের কোন ভয় নাই। আমাদের জাহাজে আমরা নিজেরাই অগ্নি সংযোজন করেছি।
বুড়ো মাঝি : তাহলে তো তোমাদের ব্যাপারে আমাদের ভয় আরো বেশী, তোমরা দস্যু। অন্যের জাহাজ ছিনতাই করে এনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছ, নিজের জাহাজে কেউ কি আগুন লাগায়।
মুগীছ : তুমি আমাদের দস্যু বল বা আরো কিছু বল না কেন, তবে জেনে রাখ তোমাদের কোন লাড়কী ও কোন আওরতকে আমাদের কেউ স্পর্শ করবে না।
বুড়ো মাল্লা : আচ্ছা মেনে নিলাম। তবে একটা কথা তোমাকে বলি হয়তো তা শুনে আমাদের ওপর তোমাদের দয়ার উদ্রেগ হবে, এখানের ফৌজরা আমাদের ইযযতের উপর সবচেয়ে বড় হামলাকারী। আমাদের ফৌজরা যখন এদিকে আসে তখন তারা জোরপূর্বক দু’তিন জওয়ান লাড়কীকে নিয়ে যায় তারপর পরের দিন তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়।
মুগীছ : এখন তোমাদের ইযযত নিরাপদ হয়ে গেল।
মাল্লা : তাহলে আমাদেরকে ঘোড় সোয়ার দ্বারা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছ কেন?
মুগীছ : যাতে তোমরা আগেই আমাদের আগমন বার্তা তোমাদের ফৌজের কাছে পৌঁছাতে না পার এ জন্যে। আমরা এখান থেকে চলে গেলে তোমরা নিজ ঘরে ফিরে যাবে। তোমাদের ফৌজকি এখানে আশে-পাশেই কোথাও রয়েছে?
ঐ বুড়োর কাছে আরো কয়েকজন জেলে ও মাঝি এসে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মাঝে থেকে একজন বয়স্ক সামনে অগস্রর হয়ে বলল,
তোমাকে এ ফৌজের সর্দার বলে মনে হচ্ছে….. তুমি যেহেতু আমাদের ইযতের জামানত দিয়েছ, সেহেতু আমরাও তোমাদেরকে এখানের ফৌজের হাত থেকে বাঁচানোর জামানত দিচ্ছি। আমাদের ফৌজ এখান থেকে বেশী দূরে নয়।
বুড়ো মাল্লা মুগীছে রুমিকে বলল, এ এলাকাতে কয়েক জায়গায় ফৌজী চৌকি রয়েছে। সবচেয়ে কাছে চৌকি রয়েছে ছয় মাইল দূরে আর তা এ এলাকার জেনারেলের হেড কোয়ার্টার। এ সকল চৌকিতে যে ফৌজ রয়েছে তার সংখ্যা আট থেকে দশ হাজার।
জেনারেলের নাম ছিল তিতুমীর, ইতিহাসে যাকে প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ জেনারেল হিসেবে অবহিত করা হয়েছে।
***
তারেক ইবনে যিয়াদ ধারণা করেছিলেন, অতর্কিতভাবে উপকূলীয় ফৌজের ওপর আক্রমণ করে তাদেরকে পাকড়াও করবেন, তার এ ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়নি। যে সময় মুগীছে রূমী মাল্লা ও জেলেদেরকে শান্তনা দিচ্ছিলেন সে সময় স্পেনের ফৌজের এক সদস্য তাদের জেনারেলকে বহিরাগত ফৌজের আগমন সংবাদ শুনাচ্ছিল। ঐ ব্যক্তি জাবালুত্ তারেকে উপস্থিত ছিল।
সে ফৌজ তার জেনারেলকে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলছিল, আমি চারটি জাহাজ সিওয়াস্তার দিক থেকে আসতে দেখলাম, তারপর তারা সে জাহাজের তাবৎ মাল-সামানা নামিয়ে নিয়ে তাতে অগ্নি সংযোজন করেছে।
জেনারেল আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আগুন লাগিয়ে দিয়েছে?
ফৌজ : আমি নিজ চোখে জাহাজ জ্বলতে দেখে এসেছি। যে ফৌজ এসেছে তা দশ হাজারের কম হবে বলে মনে হলো না।
জেনারেল : তারা যদি ফৌজ হয় তাহলে কোন বিপদ জনক ফৌজ বলে মনে হচ্ছে। তারা নিশ্চয় উম্মাদ ফৌজ কারণ উম্মাদরাই কেবল নিজেদের জাহাজে অগ্নি সংযোজন করতে পারে।
জেনারেল তিতুমীর ঘোড় সোয়ার-পায়দল তাবৎ ফৌজ যেন যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি : নিয়ে অতিসত্তর জেনারেলের চৌকির কাছে এসে জমা হয় এ ফরমান দিয়ে সব চৌকিতে কাসেদ পাঠিয়ে দিল।
তার কাছে তাৎক্ষণিক ভাবে যে ফৌজ একত্রিত হল তার পরিমাণ ছিল বার হাজার। তার মাঝে এক হাজার ছিল ঘোড় সোয়ার। আসবাব-পত্র ও অস্ত্র-শস্ত্রের দিক থেকে তারা তারেক ইবনে যিয়াদের ফৌজের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। তাদের সবচেয়ে বড় যে ফায়দা ছিল তা হলো তারা তাদের নিজ দেশে ছিল। সেখানে তাদের অতিসত্তর রসদ ও সাহায্য পাবার সম্ভাবনা ছিল। তারা ছিল বর্ম পরিহিত।
তারেক ইবনে যিয়াদের ফৌজের সংখ্যা ছিল সাত হাজার তার মাঝে মাত্র তিনশত ছিল ঘোড় সোয়ার। বর্ম পরিহিত একজনও ছিল না। তাদের সবচেয়ে বড় কমজোরী তারা ছিল অপরিচিত স্থানে ও বিদেশে, যেখানের আকাশ-বাতাস, মাটি, আগুন-পানি তাবৎ কিছু ছিল তাদের দুশমন। তাদের সাহায্য ও রসদ-পত্র আসার পথও ছিল অনেক দূরবর্তী। আর মাঝখানে ছিল প্রাচীর হিসেবে বার মাইলের এক বিশাল সমুদ্র।
জাহাজ চারটি জ্বলেই যাচ্ছিল। তারেক ইবনে যিয়াদের সাথে আওপাস, জুলিয়নও এসেছিলেন। এরা দু’জন ছিলেন রাহুবর; তারা স্পেনের সর্ব বিষয়ে ওয়াকিফ ছিলেন। তারেক ইবনে যিয়াদ তাদেরকে কাছে বসিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন, স্পেনের কোথায় কি রয়েছে, কেল্লা বন্দ শহর কোথায় এবং তার দূরত্ব কতদূর ইত্যাদি। আওপাস ও জুলিয়ন সবকিছু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছিলেন।