“হে বাহাদুর যুবক ভায়েরা! এখন পিছু হটবার ও পলায়ন পদ হবার কোন সুযোগ নেই। তোমাদের সম্মুখে দুশমন আর পশ্চাতে সমুদ্র। না পিছনে পলায়ন করতে পারবে না সামনে। সুতরাং এখন ধৈৰ্য্য, হিম্মত ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে কাজ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। স্মরণ রেখ! এই মুলুকে তোমাদের দৃষ্টান্ত বখিলের দস্তরখানে এতিম যেমন। তোমাদের সামান্যতম বুজদেলী তোমাদের নাম ও নিশানা মিটিয়ে দিবে। তোমাদের দুশমনের কাছে লস্বর বহুত যিয়াদা হাতিয়ারও বহুত। দুশমনের কাছে রসদ পৌঁছবার মাধ্যম অনেক তোমাদের কাছে তার কিছুই নেই। যদি তোমরা বাহাদুরীর সাথে কাজ না কর তাহলে তোমাদের ইযযত মাটির সাথে মিশে যাবে। তোমাদের সম্মান হবে ভূলণ্ঠিত। অতএব নিজের ইযযত সম্মান রক্ষা কর আর দুশমনকে সংকুচিত হতে মজবুর কর। তাদের শক্তিকে খতম করে দাও। আমি তোমাদেরকে এমন কোন জিনিস হতে ভীতি প্রদর্শন করছিনা যার সম্মুখে আমি উপনীত হবো না। আমি তোমাদেরকে এমন জায়গাতে যুদ্ধ করতে বলছিনা যেখানে আমি নিজে যুদ্ধ করবো না। আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি যদি তোমরা দৃঢ় পদ থাক তাহলে এই মুলুকের দৌলত সম্মান তোমাদের পদ চুম্বন করবে। তোমরা যদি কষ্ট স্বীকার কর তাহলে এই মুলুকের তাবৎ জিনিসের মালিক তোমরাই হবে। আমীরুল মু’মিনীন ওলীদ ইবনে আব্দুল মালেক এই কাজের জন্যে তোমাদের মত বাহাদুরকে মুনতাখাব করেছেন যে তোমরা হবে এখানের শাহী মহলের জামাতা আর হবে এথাকার খুবসুরত আওরাতের খাবে। তোমরা যদি এই মুলুকের শাহ সোয়ারদের মোকাবেলা করে তাদেরকের, পরাজিত করতে পার তাহলে এখানে আল্লাহর দীন এবং রাসূল (স)-এর আহকাম মকবুল হবে এবং তার ব্যাপক প্রচার প্রসার ঘটবে। অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি যে পথে সে পথের যাত্রী সর্বপ্রথম আমিই হবো। লড়াইয়ের মাঝে সর্বপ্রথম আমার তুলোয়ারই কোষ মুক্ত হবে। আমি যদি নিহত হই তাহলে তোমরা তো বুদ্ধিমান ও ধীশক্তিসম্পন্ন, অন্য কাউকে সিপাহসালার বানিয়ে নেবে কিন্তু আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গে বিমুখ হবে না এবং এ মুলুক স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত প্রশান্তির শ্বাস ফেলবেনা।
৩. বিশাল চারটি জাহাজ
“আমাদেরকে অশ্বপদ তলে পৃষ্ঠ কর, এক মজবুর লাড়কীর চিফাটা আত্মচিৎকার শুনে নাও, তোমার শাহী মসনদও ঘোড়ার পদতলে পিষ্ট হবে, তোমার নাম নিশানাও যাবে চিরতরে মুছে।”
যার মাঝে সাত হাজার সৈন্য, রসদ পত্র ও ঘোড়া সংকুলান হয় এমন বিশাল বিশাল চারটি জাহাজ দাউ দাউ করে জ্বলছে আর তার লেলিহান শিখা দূর দূরান্ত থেকে দেখা যাবে না এমনটি হতে পারে না। তারেক ইবনে যিয়াদের নির্দেশে জাহাজ চারটিতে অগ্নি সংযোগ করার সাথে সাথে লেলিহান শিখা ক্রমেই বুলন্দ হচ্ছিল। ধোয়া মেঘের ন্যায় আসমানে পৌঁছুতে ছিল। কাছেই জেলে ও মাল্লাদের বস্তি ছিল।
বস্তিবাসীরা একে অপরকে চিৎকার করে বলতে লাগল, ঐ দেখো, কোন তাজেরের জাহাজে আগুন লেগে গেছে।
“মনে হচ্ছে যেন সমুদ্রে আগুন লেগেছে, এক বৃদ্ধ জেলে বলল,
একজন জওয়ান মাল্লা বলল, তাড়াতাড়ি চল, বাহিরের কোন তাজেরের মাল জ্বলছে, চল আমরাও কিছু মাল হয়তো সংগ্রহ করতে পারব।
বস্তির-মর্দ, আওরত, বাচ্ছা সকলেই সাগর তীর অভিমুখে ছুটল।
সে সময় তারেক ইবনে যিয়াদ ফৌজের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। মানুষ কাছে এসে ফৌজ দেখে থমকে দাঁড়াল। বস্তিবাসীদের সাথে আগুন দেখে আরো কিছু লোকও এসেছিল। যেদিক থেকে লোক তামাশা দেখার জন্যে, আসছিল সেদিকে মুগীছে রূমী ছিলেন। মুগীছ তার অধিনস্থ ঘোড় সোয়ারদেরকে নির্দেশ দিলেন আগত জনতা দলকে ঘিরে ফেলোর জন্যে যাতে একটা বাচ্চাও পলায়ন করতে না পারে।
হুকুম দেয়ার সাথে সাথে ঘোড় সোয়াররা হুকুম তামিল করল। আগত জনতার মাঝে নওজোয়ান লাড়কী ও জওয়ান আওরতও ছিল। তারা চিৎকার করে পলাতে উদ্যত হল। পুরুষরা রমণী ও বাচ্চাদের বেষ্টনীতে রাখল অপর ঘোড় সোয়ার ফৌজরা তাদের সকলকে ঘিরে রাখল। তারপর তাদের সকলকে হাঁকিয়ে এক পাশে নিয়ে যাওয়া হল।
ততক্ষণে তারেক ইবনে যিয়াদের ভাষণ সমাপ্ত হয়ে ছিল। মুগীছে রূমী ঘোড়া দোঁড়িয়ে এসে তারেকের সামনে থামলেন।
তারেক : তুমি কেন তাদেরকে রুখেছ তা আমি জানি। তাদেরকে ছেড়ে দিলে তাদের মাধ্যমে স্পেনে আমাদের আগমন বার্তা পৌঁছে যেত। আমরা তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করতে চাই। তাদেরকে এখানেই রুখে রাখ আমরা সামনে চলে যাবার পর, তাদেরকে ছাড়বে…..
আর মুগীছ! বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখবে, আওরতের সাথে যেন কোন রকম অসৌজন্যমূলক আচরণ না হয়।
মুগীছ : হা ইবনে যিয়াদ! আমিএ হত দরিদ্র লোকদের অন্তর হতে এখনি ভয় দূর করে দিচ্ছি। তুমি হয়তো জান,এরা হলো স্পেনের মাজলুম মাখলুক। আমি তাদের সাথে এমন আচরণ করব যে তারা আমাদের মদদগার হয়ে যাবে। আমি তাদের থেকে জেনে নেব এখানের ফৌজ কোথায় রয়েছে।
মুগীছে রূমী ছিলেন গোথা কওমের ইহুদী পরিবারের সন্তান। কিছুদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার মাঝে ইহুদীর কোন বৈশিষ্ট্য ছিল না। ইহুদী মানেই ফেত্নাবাজ, চক্রান্তকারী, শয়তান। মুগীছে রূমীর অন্তর ইহুদীদের সিফত গ্রহণ, করেনি হয়তো একারণেই তিনি ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। তিনি মুসা ইবনে নুসাইরের জামানার পূর্বেই মুসলমানদের ফৌজে শামিল হয়েছিলেন। তার মাঝে পরিচালনার যোগ্যতা ছিল। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি ফৌজের উচ্চপদ এবং কিছুদিন পরেই সেনাপতি পদে আসীন হয়ে ছিলেন।