জুলিয়ন বললেন,এরা আমার বেটী। এই হলো ফ্লোরিডা আর ও হলো তার বোন মেরী। আমি এদেরকে জামানত হিসেবে তোমার কাছে অর্পণ করছি। এরা আমার ইযযত ও আব্রু। ফ্লোরিডা আমার সেই বেটী যার জন্যে আমি আমার এক শক্তিধর ও পুরাতন দোস্তকে দুশমন আর পুরাতন দুশমনকে দোস্ত হিসেবে গ্রহণ করেছি। নিশ্চয় তুমি লক্ষ্য করেছ আমি আমার আত্মসম্মানে উম্মাদ হয়ে এত বড় বিপদাশংকা সৃষ্টি করেছি এবং ক্ষমতাধর বাদশাহর মুলুকের ওপর হামলা করেছি তারপর তোমার ফৌজের সাথে আমার ফৌজ দ্বীপ কবজ করার জন্যে পাঠিয়েছি।….. মুসা ইবনে নুসাইর! আজ আমার এ ইযযত সম্মান তোমার হাতে সমর্পণ করছি। আমিরে মুগীছ তোমার ফৌজকে সামান্যতমও থোকা যদি দেই তাহলে আমার বেটীদেরকে দাসীতে পরিণত করবে বা হিংস্র বর্বরদের কাছে অর্পণ করবে।
জুলিয়নের এ আবেদন মুসা গ্রহণ করে ছিলেন কিনা বা তাদের মাঝে আরো কোন আলোচনা হয়েছিল কিনা এ ব্যাপারে কোন ঐতিহাসিকই বিস্তারিত তেমন কিছু লেখেননি। ইতিহাসে শুধু এতটুকু পাওয়া যায় যে জুলিয়ন তার দু’বেটীকে জামানত রেখে ছিলেন।
জুলিয়ন দ্বিতীয় আবেদন পেশ করেছিলেন তার তামাম ফৌজ মুসার ফৌজের সাথে স্পেন পাঠাবেন। মুসা এ আবেদন দুটো আপত্তিজনক শব্দে নাকচ করে দিয়ে ছিলেন। তবে এতটুকু মদদ ও সহয়েগিতা চেয়েছিলেন যে, সিওয়াস্তা হবে মুসলমান ফৌজের জন্যে রসদগাহ্ আর সময় সময় মুজাহিদরা স্পেন যাওয়া আসার পথে সিওয়াস্তার কেল্লায় খানা-পিনা, আরাম-আয়েশ ও অন্যান্য জরুরত মিটাবে।
স্পেন উপকূল পর্যন্ত পৌঁছার কিশতী ও সমুদ্র জাহাজ যেন জুলিয়ন দেন এ মদদ তার কাছে মাগা হয়েছিল।
জুলিয়ন সর্বোপরি সাহায্যের অঙ্গিকার করলেন এবং এটাও বললেন যে, তার ফৌজ ময়দানে মদদের জন্যে সদা প্রস্তুত থাকবে।
সে দিনই মুসা ইবনে নুসাইর একটা পয়গাম কাসেদের মাধ্যমে খলীফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। স্পেনের ওপর হামলার ইজত তো খলীফা পূর্বেই দিয়েছিলেন, কিন্তু মুসা ইবনে নুসাইর অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন তিনি অন্যান্য বিষয় ছাড়াও খলীফার কাছে লেখেছিলেন,
……স্পেনে ফৌজী অভিযান চালানোর ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ইজত তলব করে সময় নষ্ট করা আমার কাছে মুনাসিব মনে হলো না, তবে আপনি হিন্দুস্থানে যে লস্কর পাঠিয়েছেন, তার জরুরত এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে যাতে আমি স্পেন অভিযান মুলতবী করতে বাধ্য হতে পারি। একই সাথে দু’টো অভিযান আপনার জন্যে কষ্টসাধ্য বা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যাতে দু’টো অভিযানই বা কোন একটা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
খলীফা ওলীদ নেহায়েত আশাব্যঞ্জক জওয়াব দিয়ে ছিলেন, তিনি লেখেছিলেন, আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাবৃৎ প্রস্তুতি নিয়ে লস্কর রওনা করে দাও। সেনাপতি ইন্তেখাব খুব চিন্তা-ফিকির করে করবে।
***
সালার ইন্তেখাব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কোন একটা অজুহাতে মুসা সালার তুরাইফকে সালারে আলা বানাতে চাচ্ছিলেন না। একটা কারণ তো ফৌজের প্রায় শতভাগই ছিল বর্বর। মুসা চাচ্ছিলেন, সালারে আলা বর্বর হবে আর আরবী সালার হবে তার অধিনে। সে সময় বর্বরদের মাঝে এমন কিছু ব্যক্তি তৈরি হয়ে গিয়েছিল যাদের যুদ্ধ পরিচালনা করার যোগ্যতাছিল। তারা ফৌজের কমান্ডার পদার্জন করে ছিল।
তাদের মাঝে একজন ছিলেন তারেক ইবনে যিয়াদ। মুসা অতীতের পাতা উল্টাচ্ছিলেন। যখন বর্বরদের অধিকাংশ গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং আরবদের মুকাবালায় যুদ্ধ জিহাদে ছিল ব্যস্ত। মুসা সে সময় সেখানে অনেক যুদ্ধ করেছেন। এবং পেয়ার-মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ব সুলভ আচরণও করেছেন। সে সময় অনেক বর্বর গ্রেফতার হয়েছিল তাদেরকে উপবোস্থ কর্মকর্তারা নওকর বা গোলাম বানিয়ে রেখেছিলেন। মুসার কাছে এক বর্বর যুবক এতো ভাল লেগেছিল তাকে তিনি নিজের কাছে রেখে ছিলেন। সে তার কাছে গোলামের মতই ছিল। মুসা তার কথা বার্তা শুনে ও কাজকর্ম দেখে অনুভব করতে পারলেন এ নওজোয়ান কোন সাধারণ। বংশের নয়। সে ছিল স্বর্ণকেশী আর চেহারা ছিল যেন সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ। একদিন মুসা তাকে তার বাপ-দাদার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে প্রতি উত্তরে সে বলেছিল ডেন্ডাল বংশে তার জন্ম। বর্বরদের অন্যান্য কবিলার চেয়ে ডেভাল কবিলা সর্বেদিক থেকে উত্তম ও সম্ভ্রান্ত ছিল।
মুসার এ গোলাম চিন্তা-চেতনার দিক থেকে উঁচু মানসিকতার ছিল আর তার মনযোগ ছিল যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে। ঘোড় সোয়ারীতে ছিল মাহের আর তীর আন্দাজ ও তলোয়ার চালনে ছিল পূর্ণ পারদর্শী। বর্বরদের বিদ্রোহী কবিলাকে দমানোর জন্যে মুসা যখন ফৌজী অভিযান চালাতেন তখন এ গোলামও তার সাথে থাকত। সিওয়াস্তা অবরোধেও সে মুসার সাথে গিয়েছিল। মুসা লক্ষ্য করলেন এ গোলাম কেবল খেদমতগারই নয় সে অনেক সময় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তাকে যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে পরামর্শও দান করে। সে আরবী জবান মাতৃভাষার ন্যায় আয়ত্ত করে নিয়েছিল।
মুসা তাকে ফৌজের মাঝে একটা পদে আসীন করার পর দেখলেন সুন্দর পরিচালনা দক্ষতা ও দলকে বিজয়ী বেশে সম্মুখে অগ্রসর করার যোগ্যতা তার মাঝে বিদ্যমান। মুসা তাকে যুদ্ধ ময়দানে ইমতেহান নিয়ে এক দলের কমান্ডার বানিয়ে দিলেন। তারপর কিছুদিন পরেই সে তার যোগ্যতা বলে নায়েবে সালারের পদে আসনাসীন হয়। ইতিপূর্বেই সে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিল তখন মুসা ইবনে নুসাইর তার নাম তারেক আর বাবার নাম রেখে ছিলেন যিয়াদ।