৭১০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে এক প্রভাত রজনীর আলো আঁধারীতে মুসা ইবনে নুসাইরের ও জুলিয়নের ফৌজ বিশাল জঙ্গী কিশতীতে সোয়ার হয়েছিল। জুলিয়নের ফৌজ সংখ্যা ইতিহাসে উল্লেখ নেই। মুসলমান ফৌজ সংখ্যা ছিল চারশত পায়দল আর একশত ঘোড় সোয়ার।
অগেসীরাস তেমন বড় কোন দ্বীপ ছিল না আবার একেবারে ছোটও ছিল না। পূর্বেই গোয়ান্দা মাধ্যমে জেনে নেয়া হয়েছিল সেখানে স্পেনের ফৌজ কি পরিমাণ আছে এবং কোথায় কোথায় আছে। কিশতী এমন জায়গাতে ভিড়ান হলো যেখানে ঘন গাছ-পালা ও সবুজ শ্যামলীতে ঢাকা উঁচু টিলা ছিল। এ টিলা দ্বীপের ফৌজের চোখের অন্তরালে ছিল। কোন ফৌজ আসছে কিনা তা দেখা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না কিন্তু সালার তুরাইফ ও জুলিয়নের ফৌজ দুশমনের চোখের আড়ালে থাকতে পারল না। তাদের কিশতী যখন সমুদ্র পার হয়ে দ্বীপের দিকে যাচ্ছিল তখন। দ্বীপবাসী দূর থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছিল।
কিশতী কিনারে ভিড়ল। ফৌজ সবে মাত্র জমিনে অবতরন করেছে এখনও ঘোড় সোয়ার ঘোড়ায় আরোহন করেনি পায়দল ফৌজি সম্মুখে অগ্রসর হবার জন্যে শৃংখলাবদ্ধ হয়নি এরি মাঝে হঠাৎ করে টিলা থেকে তাদের ওপর তীরের বান বয়ে গেল। তীর আন্দাজরা ঘন গাছ-পালা, লতা গুলোর মাঝে লুকিয়েছিল। স্পেনের এক উপকূল এলাকায় জুলিয়নের ফৌজরা হামলা করার পর থেকে সীমান্তবর্তী উপকূল এলাকাও দ্বীপে ফৌজরা খুব চৌকান্না ও প্রস্তুত ছিল।
ঘোড় সোয়াররা তীরের আঘাত থেকে বাঁচার জন্যে এদিক সেদিক ছুটছিল, সেনাপতি তুরাইফ তাদেরকে নির্দেশ দিলেন তীরের নাগালের বাইরে গিয়ে চতুর দিক থেকে টিলাকে ঘিরে ফেলার জন্যে। পায়দল সৈন্যরা পূর্বেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। কিছু সমুদ্রের মাঝে আর কিছু কিশতিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সম্মুখে কেবল আহতরাছিল।
জুলিয়নের সৈন্য বাহিনীর কমান্ডার ছিল আওপাস তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার সিপাহীদেরকে একত্রিত করে হুকুম দিলেন টিলার পিছন দিক থেকে ওপরে যাওয়ার জন্যে, সিপাহীরা বিদ্যুৎ গতীতে ছুটে চলল। তীর আন্দাজরা সম্মুখে তথা সমুদ্রের দিকে তীর নিক্ষেপ করছিল। আওপাসের সিপাহীরা ডানবাম ও পিছন দিক থেকে টিলার ওপরে ঘন গাছ-পালা পত্র পল্লব ও ঘাসের মাঝে প্রবেশ করছিল ফলে তীর আন্দাজদের নিশানা পরিবর্তন হয়ে গেল। আওপাস স্বীয় সিপাহীদেরকে চিৎকার করে আহ্বান করছিল আর সিপাহীরা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে তীরবানকে উপেক্ষা করে টিলার ওপর আরোহণ করছিল।
সেনাপতি তুরাইফ যখন আওপাসের সিপাহীদের এ সাহসীকতা লক্ষ্য করলেন তখন তিনি তার তীর আন্দাজ সৈন্যদেরকে টিলার নিচের বৃক্ষে উঠে দুশমনের তীর আন্দাজকে নিশানা বানানার নির্দেশ দিলেন। মুসলমান তীর আন্দাজরা গাছে উঠার সময় দুশমনের তীরের আঘাতে জখম হয়ে কয়েকজন ভূলণ্ঠিত হলো। বাকি তীর আন্দাজরা বৃক্ষে আরোহণ করে অবিরাম গতিতে টিলার ওপর তীর নিক্ষেপ করতে লাগল।
দ্বীপের তীর আন্দাজরা পলায়ন পদ হতে লাগলো কিন্তু টিলা ঘোড়সোয়ারীদের বেষ্টনীতে ছিল ফলে তারা কেউ পলায়ন করতে পারলনা। দ্বীপের বাকী ফৌজরা আক্রমণকারীদের মুকাবালা করার জন্যে আসছিল। সেনাপতি তুরাইফ তার ঘোড় সোয়ারদেরকে টিলার নিচে লুকিয়ে রেখে কমান্ডাদেরকে কৌশল বাতিয়ে দিয়েছিলেন।
উভয় পক্ষের ফৌজ এর মাঝে সংঘর্ষ বেধে গেল। স্পেন ফৌজ দ্রুত পিছু হটতে লাগলো, সেনাপতি তুরাইফ তার লুক্কায়িত ফৌজদেরকে বেরিয়ে আসার জন্যে ইশারা করলেন। ঘোড় সোয়াররা অতি দ্রুত গতিতে টিলার পাদদেশ থেকে বেরিয়ে হাওয়ার তালে ঘোড়া ছুটিয়ে দুশমনের পিছনে চলে গেল। দুশমনের জন্যে এ কৌশল আশাতীত ছিল। ঘোড় সোয়াররা পিছন দিক থেকে অতর্কিত হামলা চালাল, ফলে দ্বীপের ফৌজরা ব্যাপক হারে কতল হতে লাগল।
স্বল্পসময়ে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল। এ দ্বীপের নাম পরিবর্তন করে জাজীরাতুল খাজরা (সবুজ শ্যামল দ্বীপ) নাম রাখা হলো।
***
সালার তুরাইফ ফিরে এসে মুসা ইবনে নুসাইরকে বললেন, জুলিয়ন প্রতারণা করছেনা। আর তার ফৌজ জীবনবাজী রেখে লড়াই করেছে। তিনি আরো বললেন, স্পেনের ফৌজের মাঝে যুদ্ধের স্পৃহা ক্ষীণ। তাদের পরিচালনার মাঝেও এমন কোন কৌশল নেই যা আমাদেরকে পেরেশান করতে পারে।
মুসা ইবনে নুসাইর স্পেনের ওপর হামলার প্রান তৈরি করতে লাগলেন। জুলিয়ন মুগীছে রূমী নামক এক নও মুসলিমকে সাথে নিয়ে মুসার কাছে আসলেন। মুগীছে রূমী গোথা ছিল। জুলিয়ন মুসলমান ফৌজদের সাথে স্পেন যাবার ইরাদায় এসে ছিলেন। তিনি মুগীছকে সাথে নিতে চাচ্ছিলেন। মুসা ইবনে নুসাইর ইতস্তত করতে লাগলেন।
জুলিয়ন কিছুটা অভিযোগ ও গোর স্বরে বললেন, মুসা! এখনও কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?….. আমার এমনই কিছুটা আশংকা ছিল। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস আরো পুখতা করার জন্যে আরো একটা পদ্ধতি সাথে নিয়ে এসেছি।
জুলিয়ন মুসার কাছ থেকে উঠে বাহিরে গেল। সিওয়াস্তা থেকে তার সাথে বেশ বড় কাফেলা এসেছিল। যার মাঝে তার চাকর-নওকর মুহাফেজ, মুশীর এবং মহিলারাও ছিল।
পরে জুলিয়ন যখন মুসার কামরায় প্রবেশ করলেন তখন তার সাথে দু’জন খুব সুরত লাড়কী ছিল। তাদের সৌন্দর্য ছিল অসাধারণ। শরীরের কাঠামো যাদুময়ী, মনোহরী, চিত্তাকর্ষক।