সালার তুরাইফ : তোমার বাবা যদিও তোমাকে যাবার ইযাজত দেন কিন্তু আমি তোমাকে ইযাজত দেব না। আমরা আওরতের ইযযত-আব্রুর হেফাজতের, জন্যে জীবন উৎসর্গ করি সেখানে আওরতকে কিভাবে দুশমনের সামনে ময়দানে পাঠাই?
***
অর্ধ রাত্র অতিবাহিত হয়ে গেছে। স্পেনের দক্ষিণ তীরে মিদান পল্লীর লোক গভীর ঘুমে অচেতন। তীরে ফৌজি চৌকীর ফৌজরাও নিদ্রাপুরীতে বিচরণ করছে। যে সকল সান্ত্রীদের পাহারা তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে। তাদের কোন আশংকা ছিল না। তারা জানত, সিওয়াস্তা স্পেনের প্রবেশ দ্বার আর সেখানে রয়েছে মজবুত কেল্লা ও জুলিয়নের ফৌজ।
আশংকা মুসলমানদের ছিল। তারা সিওয়াস্তার রাস্তা ছেড়ে কোন দূরবর্তী তীর ঘেষে আসতে পারত কিন্তু আরবদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ছিল তারা নৌযান সম্পর্কে ও সমুদ্র যুদ্ধে অভিজ্ঞ নয়। প্রকৃত ঘটনাও, এমনই ছিল। কারণ সে সময় ইসলামের প্রাথমিক যুগ। ৯২ হিজরী সন। সে সময় নাগাদ আরবরা সমুদ্র যুদ্ধের মওকা পায়নি।
স্পেনের সমুদ্রতীরবর্তী ফৌজ বেফিকির ছিল। জুলিয়নের কিশতীগুলো মিদান পল্লী থেকে কিছুটা দূরে আসল। হুকুম মুতাবেক ফৌজ অতি খামুশীর সাথে কিশতী থেকে অবতরন করল। তাদের কমান্ডার আওপাস জানত কোথায় কোথায় চৌকি রয়েছে। তিনি তার ফৌজকে বিভিন্ন দলে বিভিক্ত করে দ্রুত হামলার হুকুম দিলেন।
প্রহরীরা বুঝতে পারল তাদের দিকে ছায়া মুর্তি আসছে কিন্তু কারা আসছে তা বুঝে উঠার পূর্বেই মহাপ্রলয় তাদেরকে গ্রাস করল। চৌকিতে শায়িত ফৌজ নিদ্রা থেকে উঠার কোন মহলত পেল না, পরপারে পাড়ি জমাল। অনেকদূর পর্যন্ত চৌকি বিস্তৃত ছিল প্রভাত রবি উঁকি দেবার পূর্বেই তা বিলকুল সাফ করে ফেলা হল। তাদের একজনও পলায়ন করে খবর দেয়ার অবকাশ পেল না যে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে।
সকাল হতে না হতেই জুলিয়নের ফৌজ দুতিনটি বস্তিতে ঢুকে পড়ল। হুকুম মুতাবেক ফৌজ লুটতরাজ শুরু করে দিল। জুলিয়ন নির্দেশ দিয়ে ছিলেন কোন গির্জা যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। তার ফৌজরা কিছু গির্জাতে করল অগ্নি সংযোজন আর কিছু করল ভেঙ্গে চুরমার। বিকেল নাগাদ সিপাহীরা পুরোদমে লুটতরাজের কাজ চালিয়ে গেল। কোন সুন্দরী যুবতী রমণী চোখে পড়লে তাকেও তারা রেহায় দিল না এবং যেভাবে তারা কিশতীতে গিয়ে ছিল ঠিক তেমনি আবার কিশতীতেই নিরাপদে ফিরে এলো।
জুলিয়ন নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন এলান করে দেয়া হয় তারা সিওয়াস্তার ফৌজ, তাই ফৌজরা লুটতরাজের ফাঁকে ফাঁকে এ এলান করছিল। ফৌজ যখন ফিরে এলো তখন জুলিয়ন মুসা ইবনে নুসাইরের সালার তুরাইফকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যে রডারিককে দুশমন মনে করি এখন একীন এসেছে কিনা।
জুলিয়ন : আপনি সালার, বলুন দেখি, রডারিক এখন সিওয়াস্তার ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা করবে এ আশংকা কি আমি সৃষ্টি করিনি?
সেনাপতি তুরাইফ : সে তো হামলা করতেই পারে, সে কিভাবে সহ্য করে নিবে, তার এক জায়গীরদার তার মুলুকে গিয়ে আক্রমণ করে ব্যাপকভাবে ফৌজ হত্যা ও বাড়ী-ঘর লুট করে ফিরে আসে। এটা সহ্য করে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে নওয়াব জুলিয়ন আমরা আপনাকে ছাড়ব না। আমার এ সেনাদল এখানেই থাকবে এবং তারা সদা সমুদ্র তীরে থাকবে চৌকস। আপনি দ্রুত গিয়ে আমাদের আমীর মুসা ইবনে নুসাইরের কাছে মিত্রতার চুক্তি পূর্ণ মাত্রায় সম্পাদন করুন এবং এ সংবাদ স্পেনে রডারিককে পৌঁছে দিন।
***
মিত্রতার চুক্তি হয়ে গেল।
মুসার বিশ্বাস হয়ে ছিল জুলিয়ন তার সাথে প্রতারণা করছে না কিন্তু এ বিশ্বাস কে মুসা পরিপূর্ণভাবে পুজা করতে চাচ্ছিলেন। এজন্যে তিনি স্পেন সমুদ্র তীর হতে কিছুটা দূরে অবস্থিত “অগেসীরাস” নামে এক দ্বীপ নির্ধারণ করে তাতে হামলা করার প্লান তৈরি করলেন। এতে তিনি নিজস্ব ফৌজের সাথে জুলিয়নের ফৌজও শামিল করলেন। জুলিয়নের ফৌজ কি পরিমাণ নির্ভরযোগ্য এবং স্পেনের ফৌজ যুদ্ধে পারদর্শি কেমন আর তার কমান্ডারইবা কেমন যোগ্য এ যৌথ অভিজানের মাধ্যমে তা তিনি যাচায় করতে চাচ্ছিলেন।
এ যৌথ ফৌজী অভিযানের কামান মুসা দিয়েছিলেন সেনাপতি আবু জুরয়া তুরাইফ ইবনে মালেকের হাতে। সেনাপতি আবু তুরাইফকে আখিরী হিদায়েত দিয়ে মুসা বললেন,
ইবনে মালেক! তুমি নিজে তো লক্ষ্য রাখবেই তোমার নায়েবদেরকেও লক্ষ্য রাখতে বলরে জুলিয়নের কমান্ডাররা আমাদেরকে ধোকা দিচ্ছেকিনা। এটাও লক্ষ্য রাখবে তারা লড়ায়ে বাহাদুর না বুজদিল।
জুলিয়ন তার কমান্ডারদেরকে লক্ষ্য করে বলছিলেন, আবারও তোমাদেরকে বলছি, মুসলমানরা যেন বলতে না পারে জুলিয়নের ফৌজ বুঝদিল এবং এমন কোন কাজ করবে না যাতে তাদের সন্দেহ হয় আমরা তাদেরকে ধোকা দিচ্ছি। মুসলমানদের আমীর এখনো আমাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন নি। স্মরণ রাখবে! নিজের মান সম্মানের ওপর জীবন বিলিয়ে দেয় যে বাহাদুর সে কখনো থোকা দিতে পারে না। তোমরা এক ধোকাবাজ থেকে প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছ। সে ধধাকাবাজ স্পেনের বাদশাহ রডারিক। প্রথমেই তোমাদেরকে বলেছি রডারিক আমাদের দুশমন। তার ওপর তোমরা একবার আক্রমণ চালিয়েছ।….. আমি একটা কথা বার বার জোর দিয়ে বলছি মুসলমানরা যেন সামান্যও অনুভব না করতে পারে। তোমরা বুজদিল ও ধোকাবাজ।