জুলিয়ন : তা প্রমাণ করার জন্যে কোন তরীকা তুমিই বলে দাও। আমি তো প্রহর গুনছি। ঐ হতভাগা রডারিক থেকে আমার বেইযতির প্রতিশোধ কবে গ্রহণ করব।
আওপাস : আমীরে মুহতারাম! আমার ঐ ভাইয়ের রূহ আমাকে রাত্রে ঘুমাতে দেয় না যার বিরুদ্ধে রডারিক বিদ্রোহ করে তার বাদশাহী মসনদ তছনছ করে নিজে শাহী তখতে বসেছে আর আমার ভাইকে করিয়েছে হত্যা। এখন সে আবার আমাদের খান্দানের ওপর কালিমা লেপন করেছে। আমাদের পরিস্থিতির স্বীকার যদি আপনি হতেন তাহলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে একদিন অপেক্ষা করাও আপনার। পক্ষে সম্ভব হতো না। আর যদি আপনার মত বিপুল সংখ্যক ফৌজ আমাদের থাকত তাহলে মদদের ভিখ মাগার জন্যে আপনার দ্বারে আসতাম না।
মুসা : আর ইন্তেজার করব না। জুলিয়ন! এক কাজ কর, তোমার সৈন্য সামন্ত্র নিয়ে সমুদ্র পার হয়ে রাতের আঁধারে স্পেনের সীমান্তবর্তী কোন এলাকা আক্রমণ কর এবং স্পেনের ফৌজী বাহিনী আসার পূর্বেই ফিরে আস। এটা একটা প্রমাণ হবে যদ্বারা আমি বুঝতে পারব, সত্যিই তুমি রডারিককে দুশমন জ্ঞান কর। আমি তোমার প্রতিশোধ স্পৃহা দেখতে চাই।
জুলিয়ন : আর সেখানে যদি তাদের বিপুল সংখ্যক ফৌজের সাথে মুকাবালা হয় বা আমার ফৌজ যদি কোন বিপদে পড়ে তাহলে পরিস্থিতি কি হবে?
মুসা : তোমাকে বিপদের সম্মুখীন হতে দেব না, আমার ফৌজী বাহিনী সমুদ্র। পাড়ে অবস্থান করবে। আমি পয়গাম পৌঁছার এমন ইন্তেজাম করব যদি তোমার সৈন্য কোন বিপদের সম্মুখীন হয় তাহলে ফাওরান আমি সংবাদ পাব ফলে আমার ফৌজ তোমার মদদে পৌঁছে যাবে।
জুলিয়ন ও আওপাস ফাওরান রেজামন্দি জহের করল এবং মুসার সাথে পরামর্শ করে স্পেনের এক সীমান্তবর্তী এলাকার ওপর হামলার প্লান তৈরি করে তারা দুজন তখনই সিওয়াস্তা অভিমুখে রওনা হয়ে গেল।
মুসা ইবনে নুসাইর জেনারেল আবু জুরয়া তুরাইফ ইবনে মালেক আল-মুয়াফিরী এর নেতৃত্বে একদল ফৌজকে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, তারা যেন সিওয়াস্তার উপকণ্ঠে গিয়ে তাবু ফেলে অবস্থান করতে থাকে। তার পর জুলিয়ন যখন তার ফৌজ, স্পেনের দিকে প্রেরণ করবে তখন আবু তুরাইফ তার ফৌজ প্রস্তুত করে সিওয়াস্তার সীমানা পাড়ে গিয়ে পৌঁছুবে।
সালার তুরাইফ যখন তার ফৌজ সহ সিওয়াস্তার নিকটে পৌঁছুলেন তখন জুলিয়ন কেল্লা হতে বেরিয়ে এসে তাকে শাহী ইস্তেকবাল করে নিবেদন করল তিনি যেন কেল্লার অভ্যন্তরে তার কামরাতে একা অবস্থান করেন।
সালার তুরাইফ : নওয়াব জুলিয়ন! আমাদের একজন জেনারেল সে নিজেকে তার একজন মামুলী ফৌজের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান মনে করেনা, তাই তার পৃথক কামরাতে অবস্থান করার কোন প্রয়োজন নেই। যুদ্ধের ময়দানে সালার আর সিপাহী সমান। আমাদের ধর্ম উঁচু-নিচু মানে না। আপনি যদি আমাদেরকে নামাজ পড়তে দেখেন তাহলে নির্ণয় করতে পারবেন না, কাতার বন্দিভাবে দাঁড়ান সে মুসলমানদের মাঝে কে সেনাপতি আর কে সিপাহী। এমনও হয় যে আমাদের সিপাহীরা আগে আর আমরা থাকি পিছনে। তবে ইমামতি করার সৌভাগ্য লাভ করে সেনাপতি।
জুলিয়ন অত্যন্ত আবেগের সাথে বলল, আপনি স্পেন বিজয় করবেন, আপনি যা বর্ণনা করলেন সেটাই ইসলামের মৌল শক্তি। আমাদের সেনাপতি সিপাহীকে নিজের গোলাম মনে করে….. তারপরও আমার মহলের দরজা আপনার জন্যে উন্মুক্ত।
অতঃপর একদিন সে রজনী সমাগত হলো যে রজনীতে জুলিয়নের ফৌজ সিওয়াস্তার সমুদ্র তীর হতে পাল তোলা কাশতীতে সোয়ার হচ্ছিল অপর দিকে সালার তুরাইফের সৈন্যদল সমুদ্রকুলে পৌঁছে গিয়ে ছিল।
***
সমুদ্র সফর মাত্র বার মাইল ছিল। জুলিয়নের যুদ্ধ নৌকার মাল্লারা ছিল অত্যন্ত অভিজ্ঞ। সমুদ্র পূর্ণ শান্ত, বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল অনুকূলে। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই জুলিয়নের সৈন্যবাহিনী স্পেন তীরে পৌঁছে গিয়ে ছিল। কামান ছিল আওপাসের হাতে।
জুলিয়ন ছিল সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে। তার সাথে ছিল বিবি ও দুই বেটী ফ্লোরিডা ও মেরী। ফৌজ রওনা হওয়া পর্যন্ত ফ্লোরিডা বাবার কাছে একটা বিষয় বারবার উত্থাপন করছিল। সে পুরুষের লেবাস পরে ফৌজের সাথে স্পেন যাবার জন্যে জিদ ধরেছিল। সে তার বাবার লেবাস বের করে এনেছিল। ঢাল-তলোয়ার নিয়ে পূর্ণ। প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু জুলিয়ন তাকে যাবার অনুমতি দিচ্ছিল না, মা-ও বাধা দিচ্ছিলেন।
ফ্লোরিডা চিৎকার করে বলছিল, “আমি কি শাহ্ সোয়ার নই? বর্শা-তলোয়ার আমি কি চালাতে পারি না? আমার নিক্ষিপ্ত তীর কি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়?”
বাবা-মা তাকে বলছিলেন, তুমি সবকিছু ঠিকমত জান কিন্তু দুশমন যখন তলোয়ার-বর্শা নিয়ে সম্মুখে আসে তখন নিজের তলোয়ার বর্শা ঠিকমত চালনা করা মুশকিল হয়ে যায় এবং নিক্ষিপ্ত তীর তখন লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে থাকে। লড়না আওর মরনা এ দু’ননা মর্দোকা কাম হায়।
ফ্লোরিডা : বেআব্রু আমি হয়েছি, তাই স্পেনের ওপর প্রথম আক্রমণে অন্তত আমাকে শরীক হতে দিন।
বাবা তাকে এ ওয়াদা দিয়ে বিরত রাখলেন যে, মুসলমানরা স্পেন আক্রমণ করে যখন রডারিককে পরাজিত করবে তখন সে মুসা ইবনে নুসাইরের কাছে আবেদন করবেন রডারিককে জীবিত গ্রেফতার করে ফ্লোরিডার কাছে ন্যাস্ত করার জন্যে যাতে সে তাকে হত্যা করতে পারে।
ফ্লোরিডা শান্ত হয়েছিল এবং ফৌজকে বিদায় সম্ভাষণ জানানোর জন্যে বাবার। সাথে সমুদ্র কুলে পৌঁছে ছিল, যেখানে সে মুসলমান সালার আবু জুরয়া তুরাইফকে দেখতে পেল। বাবা তাকে সে সালারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তারপর, ফ্লোরিডা তুরাইফের পিছনে লাগল সে যেন তার বাবার থেকে ফৌজের সাথে যাবার অনুমতি নিয়ে দেন।