মুসা হিজিকে নানা বিষয়ে সওয়াল করলেন, হিজি হার সওয়ালের জওয়াব দিল। সওয়াল-জওয়াবের মাধ্যমে মুসা তার সকল শক-সুবাহ্ দূর করে হিজিকে মেহমান খানায় পাঠিয়ে দিয়ে জুলিয়নকে তলব করলেন।
মুসা ইবনে নুসাইর; মেরে ভাই জুলিয়ন! আমি তোমার প্রতিটি কথা ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার আবেদনের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করেছি। সালার, হাকীম ও মুসিরদের সাথে সলাপরামর্শ করেছি। তোমাকে পূর্ণ মাত্রায় বিশ্বাস করছি তবে এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা গ্রহণের ব্যাপারে আমি স্বক্ৰীয় নই। স্পেন কোন ছোট-খাটো মুলুক নয় তেমনিভাবে তার ফৌজও কোন মামুলী ফৌজ নয়। আমি খলীফার থেকে ইয়াজত তলব করব, আজই খলীফার কাছে পয়গাম দিয়ে কাসেদ দামেস্কে পাঠাব। তোমাকে খলীফার জওয়াবের ইনতেজার করতে হবে। কাসেদ, অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন হবে আর যে দীর্ঘ সফর….. এক মাস তো। লাগবেই….. কাসেদ হয়তো দু’চার দিন আগেও ফিরে আসতে পারে। তুমি এখন ফিরে যাও, পঁচিশ-ছাব্বিশ দিন পরে এসো বা আমিই তোমাকে খবর দিয়ে তলব করব।
মুসা জুলিয়নকে রসুত করে কাতেবকে ডেকে খলীফার কাছে এক দীর্ঘ পয়গাম লেখালেন। জুলিয়নের অভিপ্রায়ের কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করলেন। সে সময় খেলাফতের মসনদে সমাসীন ছিলেন ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক যিনি যথার্থ অর্থে ছিলেন একজন মর্দে মুমিন। ইসলামের মায়াবী বাণী সমুদ্রের ওপারে পৌঁছানোর জন্যে তিনি ছিলেন পাগল পারা। সে সময়ই তিনি মুহাম্মদ ইবনে কাসেমকে হিন্দুস্থান পাঠিয়ে ছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছিলেন তার ডান হস্ত।
মুসা জুলিয়নের তামাম কথা উল্লেখ করার পর লেখলেন,
জুলিয়ন তো ঘটনাক্রমে আমাদের থলীতে এসেছে, আমি আমার অন্তরের কথা বলছি, আমার নয়নযুগল আজ দীর্ঘদিন স্পেনের প্রতি নিবদ্ধ রয়েছে। ইসলামের পয়গাম মিসর ও আফ্রিকার সীমান্তে এসে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি কয়েকবার সীমান্তে দাঁড়িয়ে স্পেনের দিকে লক্ষ্য করেছি এবং সমুদ্রের বুকচিরে তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছি…..।
ইদানিং এক খ্রীষ্টান গভর্নর সাহায্যের প্রস্তাব করেছে ফলে আপনি সবদিক বিবেচনা করে আমাকে স্পেন অভিমুখে অগ্রসর হবার অনুমতি দিবেন। আরেকটা বিষয়ে আপনি ফিকির করবেন, তাহলে আমার কাছে যে ফৌজ রয়েছে তারা। সকলেই প্রায় বর্বর। বর্বররা খুনখার কওম। তাদের ফৌজকে আমি নিয়ম-শৃংখলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছি কিন্তু তারা স্থিরভাবে বসার লোক নয়। তাদেরকে বেশীদিন নিয়ম-শৃংখলার রশিতে বেধে রাখা যায় না। তাদেরকে যদি বেশীদিন বেকার রাখা হয় তারা পরস্পরে লড়াই শুরু করবে অথবা নিয়ম কানুনের ব্যাপারে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে এমনকি ইসলামের ব্যাপারেও বিদ্রোহ করতে পারে।
খলীফাতুল মুসলিমীন! আমি তাদেরকে সিওয়াস্তার ওপর হামলা, অবরোধ ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত রেখেছিলাম কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো তাও বন্ধ। এখন জরুরী তাদেরকে কোন একটা যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া যাতে তারা যুদ্ধ বিগ্রহের নেশা মিটাতে পারে। তাছাড়া আরেকটা কারণ রয়েছে, তাদের পূর্ণ মুমিন ও মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে বড় প্রয়োজন স্পেন অভিমুখে রওনা করা, যাতে তারা কুফরস্থানে গিয়ে বিজয় অর্জন করে ইসলামের চির সুন্দর মহিমা প্রচার। প্রসার করবে, ফলে ক্রমে ইসলাম তাদের শিরা-উপশিরা ও অন্তরের গভীরতম প্রদেশে স্থান করে নিবে।
***
কাসেদ অনেকদিন পর খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেকের জওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। জওয়াব ইতিবাচক ছিল। তবে খলীফা খুব তাগিদ দিয়ে লেখেছেন সতর্কতাবলম্বন খুবই জরুরী। যেসব লোক ইসলামের গন্ডির বাইরে তাদের ওপর পূর্ণ ভরসা ও বিশ্বাস করা শংকা মুক্ত নয়। সতর্কতার ব্যাপারে খলীফা লৈখেছেন, জুলিয়নকে ভালভাবে ইমতেহান করার জন্যে, যদি সে ইমতেহানে কামিয়াব হয় তাহলে দামেস্কে খবর দিবে এখান থেকে প্রয়োজনীয় ফৌজ ও সামানাদি পাঠান হবে।
মুসা ইবনে নুসাইর খলীফার জওয়াব পরামর্শ সভাতে পড়ে শুনিয়ে সকলের থেকে মশওরা তলব করলেন। আরবদের মেধা-ধীশক্তি সর্বজন স্বীকৃত। কিছুক্ষণ আলোচনা-পর্যালোচনার পর জুলিয়নকে পরীক্ষা করার একটা পদ্ধতি তারা করলেন। জুলিয়নকে আসার পয়গাম দেয়ার জন্যে একজন দূত সিওয়াস্তা পাঠিয়ে দেয়া হল।
জুলিয়নতো এ পয়গামের অপেক্ষাতেই ছিল। পয়গাম পাওয়া মাত্র রওয়ানার জন্যে প্রস্তুত হল। সিওয়াস্তাতে অবস্থানরত ডেজার ভাই আওপাসকে সাথে নিল। তাদের সাথে সৈন্যবাহিনীর এক বড় অফিসার ও একশত জনের এক নিরাপত্তা বাহিনী ছিল।
এ শাহী কাফেলা সফর শেষে মুসার রাজধানী কায়রোতে পৌঁছার পর জুলিয়ন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মুসার সাথে সাক্ষাৎ করে। ইতিহাস প্রমাণ করে ঐ মুলাকাতে ডেজার ভাই আওপাস ও জুলিয়নের সৈন্য বাহিনীর সিনিয়র অফিসারও ছিল। এটা। একটা ঐতিহাসিক মুলাকাত ছিল। এ মুলাকাতের মাধ্যমেই মুসলমানদের জন্যে স্পেনের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
মুসা ইবনে নুসাইর : মেরে ভাই জুলিয়ন! দামেস্ক থেকে ইযাজত এসেছে তবে এ শর্তে যে, তোমাকে এটা প্রমাণ করতে হবে, বাদশাহ্ রডারিকের সাথে তোমার এমন দুশমনি রয়েছে, পরিবেশ যতই অনুকূলে আসুক সে দুশমনি খতম করে তাকে তুমি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না।