জুলিয়ন কেরায়া ও ইনয়াম দেয়ার হুকুম দিয়ে হিজিকে জিজ্ঞেস করল, তার বেটী কি পয়গাম পাঠিয়েছে।
হিজি পয়গাম শুনানোর সাথে সাথে জুলিয়ন উঠে দাঁড়িয়ে গেল। তার সারা শরীরের খুন যেন চেহারা ও চোখে জমা হয়ে গেল। সে ক্রোধ ও ক্ষোভে কামরার মাঝে দ্রুত পায়চারী করতে লাগল।
হিজি : শাহ্জাদীর সাথে ইত্তেফাঁকান আমার মুলাকাত হয়ে গিয়েছিল। সে আমাকে এ ঘটনা শুনানোর পর আমি বাদশাহ্ রডারিককে হত্যার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু শাহ্জাদী আমাকে এই বলে বাধা দিল যে, আমি তার কাছে পৌঁছতে পারব না গ্রেফতার হয়ে যাব। আমি সেখানের শাহী আস্তাবলের ঘোড়া চুরি করে এ নাগাদ এসেছি।
জুলিয়ন : শাহজাদী ঠিক বলেছিল, এ বাদশাহকে হত্যা করা মুশকিল নয়। আমি তার প্রতিশোধ নেব, তুমি যাও।
জুলিয়ন তার এলাকার বাদশাহ ছিল যদিও তার এলাকা ছোট ছিল এবং সে স্পেনের বাদশাহ্ রডারিকের জায়গীরদার ছিল তবুও তার অবস্থান বাদশাহর মত ছিল। ফলে সে একজন চাকরের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা-পর্যালোচনা সমীচীন মনে করছিল না। সে হিজির জন্যে কিছু ইনয়াম পেশ করল।
হিজি : না জনাব! ইনয়াম কোন কৃতিত্বের জন্যে? আমাকে অনুমতি দিন আমি স্পেন গিয়ে বাদশাহ রডারিকের হত্যার মওকা তালাশ করব। আমার খান্দান আপনার নিমক খেয়েছে। আমি সে নিমক হালাল করতে চাই। আপনার ইযযত আমাদের ইযযত।
জুলিয়ন : হিজি! তুমি যাও। আগে আমাকে চিন্তা করতে দাও। তুমি চিন্তা ফিকির না করে এবং আমাকে কিছু না বলে কিছুই করবে না।
ঐতিহাসিকরা লেখেন, জুলিয়নের মত জায়গীরদাররা রডারিকের মত শক্তিধর বাদশাহকে খুশী করার জন্যে স্বীয় ললনাদের দিয়ে দিত কিন্তু জুলিয়ন আত্মমর্যাদাশীল ছিল ফলে তার বেটীর সতীত্ব হরণ তাকে পাগল বানিয়ে দিল। সে সাথে সাথে টলেডো থেকে নিজ কন্যা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল।
সকল ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মুতাবেক জুলিয়ন কিছু তুহফা নিয়ে টলেডোতে গিয়ে বাদশাহ রডারিকের সাথে এমন নিষ্ঠা ও প্রীতির সাথে সাক্ষাৎ করল, যেন সে তার মেয়ের ইযযত হরণের ব্যাপারে কিছুই জ্ঞাত নয়। সে তার আচার-ব্যবহার ও কথাবার্তা এমনভাবে পেশ করল যে বাদশাহর মঙ্গলকামী হয়ে তার হাল অবস্থা জানার জন্যে সাক্ষাৎ করতে এসেছে।
বাদশাহ্ রডারিক যখন বুঝতে পারলেন, জুলিয়ন তার মেয়ের ব্যাপারে কিছুই অবগত নয় তখন সে জুলিয়নের মত ছোট ছোট জায়গীরদারদের সাথে যে ব্যবহার ও সম্মান করে তার চেয়ে অনেক বেশী সম্মান ও ইযযত জুলিয়নকে করলেন, তার সম্মানে বাদশাহ্ (অনেক বড়) বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন যাতে নৃত্য ও সংগীতের ব্যবস্থা ছিল। সে অনুষ্ঠানে ফ্লোরিডা তার বাবার সাথে বসে রডারিক তার সাথে কি আচরণ করেছেন এবং তাকে হুমকি দিয়েছেন তা বর্ণনা করল।
জুলিয়ন : আমাদের আস্তাবলের হাকীম ফৌরইয়াডরকের বেটা হিজি তোমার ঘটনা বিস্তারিতভাবে আমার কাছে বর্ণনা করেছে। রডারিকের সামনে আমি নাজানার ভান করেছি। তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি তার পর এমন প্রতিশোধ নেব যাতে তার শাহী মসনদ মাটির সাথে মিশে যাবে।
পরের দিন বাদশাহ রডারিক জুলিয়ন তার দরবারে আসার দরুন তাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করলেন এবং নিয়ান্তার প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আলোচনা করলেন।
রডারিক জুলিয়নকে জিজ্ঞেস করলেন, মুসলমানরা পরে মনে হয় সিওয়াস্তার ওপর হামলার হিম্মত করেনি?
জুলিয়ন : না। সিওয়স্তার কেল্লার মজবুত দেয়ালে মাথা টুকে টুকে মস্তকচূর্ণ করে ফেলেছে। তারা অনুধাবন করতে পেরেছে যে সিওয়াস্তার ওপর স্পেনের মহারাজের অপাজেয় যুদ্ধ শক্তির ছায়া রয়েছে। এখন তারা সিওয়াস্তার দিকে ফিরে তাকাতেও সাহস পায় না।
রডারিক : তোমার বেটী ফ্লোরিডা কেবল খুবসুরতই নয় দানেশমন্দ ও বাহাদুরও বটে। তাকে কোন সাধারণ ব্যক্তির কাছে অর্পণ করো না। আমি তার তরবিয়তে খুবই মুগ্ধ।
এটা আমার বড়ই সৌভাগ্য। জুলিয়ন গোলামের মত বলল, কিছু দিনের জন্যে ফ্লোরিডাকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি।
রডারিক : না নিয়ে যাওয়াই ভাল।
জুলিয়ন মিথ্যে বলল, তার মা ভীষণ বিমার হয়ে পড়েছে। সেই আমাকে পাঠিয়েছে। বলছিল, দু’তিন দিনের জন্যে ফ্লোরিডাকে নিয়ে আস, মায়ের স্নেহ মহব্বত আমি লুকিয়ে রাখতে পারছিনে। দু’তিন পরে আবার বেটীকে পাঠিয়ে দেব।
রডারিক শান্তনার শ্বাস নিয়ে বললেন, পাঠিয়ে দেবে! তাহলে নিয়ে যাও।
স্বয়ং ফ্লোরিডা বলছিল সে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে চায়। জুলিয়ন আবার মিথ্যে বলল।
রডারিক : তোমার বেটী অবশ্যই ফিরে আসতে চাবে।
ঐতিহাসিকরা জুলিয়ন ও রডারিকের এক মজাদার আলোচনার কথা উল্লেখ করেছেন।
রডারিক : আচ্ছা জুলিয়ন! তোমাদের এলাকায়তত ভাল বাজ পাখি পাওয়া যায়, শিকারের জন্যে আমার বাজ পাখী দরকার।
জুলিয়ন : হ্যাঁ শাহানশাহে উন্দুলুস! আমি আপনার জন্যে এমন বাজ পাঠাব যা ইতিপূর্বে আপনি দেখেননি। তা শিকারের প্রতি এমনভাবে ধাবিত হয় যে তাকে বাঁচার কোন অবকাশ দেয় না।
জুলিয়নের একথা যে ঐতিহাসিকরা লেখেছেন, তারা বলেন, এ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে জুলিয়ন সে সময়ই স্থির করেছিল যে, রডারিকের প্রতিশোধের জন্যে স্পেনের উপর হামলার ব্যাপারে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে।