জুলিয়ন ও তার বিবি ফ্লোরিডাকে সাথে নিয়ে রেখে আসলেন স্পেনের রাজধানী টলেডোতে বাদশাহ্ রডারিকের শাহী মহলে। তারা ফ্লোরিডাকে রডারিকের সম্মুখে উপস্থিত করেছিলেন।
রডারিক ফ্লোরিডার রূপ লাবণ্য ও নব যৌবনে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “আহ্! এত সুন্দরী! জুলিয়ন! এ লাড়কীকে নামকাওয়াস্তে কোন শাহজাদার সাথে শাদী দিয়ে বিনষ্ট করবে না।
জুলিয়ন সহাস্যে উত্তর দিয়েছিলেন, এ বেটী নয় এ আমার বেটা।
ফ্লোরিডার বাবা-মা যখন সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসছিলেন দু’নয়ন আঁসুতে ভরে উঠেছিল।
***
আট-দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর হিজির বাপ জুলিয়নকে বললেন, তার ছেলে লাপাত্তা হয়ে গেছে। জুলিয়নের নির্দেশে তাকে সর্বত্র তালাশ করা হলো, মাঠে-ময়দানে, জঙ্গলে ঘোড় সোয়ার পাঠান হলো কিন্তু কোথাও হিজির নাম নিশানা পাওয়া গেলে না।
ওখানে সে থাকলে না পাওয়া যাবে। সে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে টলেডো পৌঁছে ছিল। সে ফ্লোরিডার বিরহ সহ্য করতে পারেনি। সেখানে পৌঁছে সোজা শাহী আস্তাবলে গিয়ে জিম্মাদার অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করে নওকরীর দরখাস্ত করেছিল। আস্তাবলের অফিসার তার ইমতেহান নেয়ার জন্যে বা তার সাথে মজাক করার জন্যে একটা অত্যন্ত অবাধ্য ও দুষ্ট অশ্বের দিকে ইশারা করে বলেছিল, এ অশ্বকে সোয়ারী বানিয়ে দেখাও।
ঐ ঘোড়া খুব কম লোকের বাগে আসত। হিজি সে ঘোড়ার ওপর জিন লাগিয়ে। সোয়ার হয়ে গেল। আস্তাবলের তাবৎ কর্মচারীরা হিজির ঘোড়ার পীঠ হতে পতিত হওয়ার দৃশ্য দেখার জন্যে একত্রিত হয়ে গেল। ঘোড়া তার অবাধ্যতা দেখান শুরু করল। সোয়ারীর কোন ইশারা-ইঙ্গিতই সে পাত্তা দিল না কিন্তু হিজি অল্প কিছুক্ষণ পরেই তাকেবাগে এনে ফেলল। অত্যন্ত দ্রুত দৌড়াল, সব ধরনের চাল-চালনা করল এবং ঘোড় দৌড়ের ময়দানে যে বাধা ছিল তা নির্দিধায় অতিক্রম করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল।
নেজাবাজী ও তলোয়ার চালনার অমূল্য কৌশল দেখাল যার ফলে ভাল পদে তার নওকরী হয়ে গেল। তার মাকসাদ কেবল নওকরী ছিল না, সে তো ফ্লোরিডার সাথে মিলন চাচ্ছিল। কিছু দিনের মাঝে সে জেনে গেল ফ্লোরিডা কোথায় থাকে, কিন্তু তাকে ফ্লোরিডার কাছে যাওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হলো না। একদিন পাঁচ ছয়জন শাহজাদী ঘোড় সোয়ারের জন্যে এলো। তাদের মাঝে ফ্লোরিডাও ছিল। এসব শাহজাদীরা ফ্লোরিডার মত অন্যান্য শহর হতে তালীম তরবিয়তের জন্যে এসেছে। তাদের তরবিয়তের মাঝে ঘোড় সোয়ারও শামিল ছিল।
ফ্লোরিডা হিজিকে দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ল। সে যেহেতু শাহজাদী ছিল এ কারণে যে কোন নওকরের সাথে তার কথা বলার অধিকার ছিল। সে সোজা হিজীর কাছে গিয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলতে লাগল যাতে কারো কোন সন্দেহ না হয়।
ফ্লোরিডা : তোমার নাম কি?
আগস্টস। হিজি তার নাম ভুল বলল, অন্যদের কাছেও সে এনামই বলেছে।
ফ্লোরিডা : তোমাকে মনে হচ্ছে ইতিপূর্বে কোথাও দেখেছি।
হিজি : হয়তো দেখতে পারেন শাহজাদী! আমি বেশ অনেক জায়গায় অবস্থান করেছি।
অন্যান্য শাহজাদীরাও তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা বেশ হাসি খুশীতেই এসেছিল।
ফ্লোরিডা : আস্তাবলে তোমার কি কাজ?
আস্তাবলে অফিসার যিনি পাশেই দাঁড়ান ছিলেন, বললেন, সে খুব ভাল শাহ্ সোয়ার শাহ্জাদী!
ফ্লোরিডা : শাহ্ সোয়ার! আজই তাহলে তাকে আমাদের সাথে পাঠাও দেখব কত বড় শাহ্ সোয়ার।
ঐ দিনই হিজিকে শাহজাদীদের সাথে পাঠান হলো। কেল্লার বাহিরে গিয়ে ফ্লোরিডা তার সাথী শাহ্জাদীদের বলল, সে এই শাহ্ সোয়ারের সাথে ঘোড়া দৌড়িয়ে দেখবে এ ঘোড় সোয়ার কতটুকু মাহের।
কিছুক্ষণ পরেই ফ্লোরিডা ও হিজির ঘোড়া সমন্তরালে চলতে লাগল, তারা ঘোড়া দৌড়াতে দৌড়াতে পাহাড়ের সবুজ-শ্যামল চুড়াতে গিয়ে পৌঁছুল, বেশ কিছুক্ষণ পর তারা পাহাড় হতে বের হলো, এর মাঝে তারা তাদের অন্তরে জমে থাকা কথা সেরে নিয়েছিল। হিজি ফ্লোরিডাকে বলেছিল সে কাউকে কিছু না বলেই সিওয়াস্তা থেকে চলে এসেছে।
ফ্লোরিডা : তাড়াতাড়ি ফিরে যাও। আমার বাবা যদি জানতে পারেন যে, তুমি এখানে তাহলে প্রথমে এ শক হবে যে তুমি আমার জন্যে এখানে চলে এসেছ। সিওয়াস্তার শাহী নওকরী ছেড়ে এখানে নওকরী করতে আসার এ ছাড়া আর কোন কারণ নেই। থাকলেও তুমি কাউকে বুঝাতে পারবে না।
হিজি : ফ্লোরিডা! আর কিছু দিন থাকতে দাও। দু’ একদিন আরো মুলাকাতের মওকা দাও তাহলে আমি চলে যাব। আমার বাবাকে বলব, সিওয়াস্তাতে থাকতে থাকতে এক ঘেয়েমী হয়ে উঠেছিলাম তাই কিছুদিন স্পেন ঘুরে এলাম।
শাহী মহলের চতুর্পাশ্বে ঘন গাছ পালা ও পত্র পল্লবে ঘেরা বাগিচা ছিল, তার কোন এলাকা ঘন গাছ-গাছালি ও লতা-গুল্মে একেবারে ঢেকে নিয়েছিল, ফ্লোরিডা হিজিকে এমনই একটা কোনের কথা বলে রাস্তা বাতিয়ে দিল এবং অর্ধেক রাতের পরে যাওয়ার হেদায়েত দিল। কারণ এর পূর্বে বা দিনের বেলা গেলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল।
***
বিপদ আশংকা পিছে ফেলে হিজি দ্বিতীয়বার রাতের আঁধারে বাগানের নিঝুম কোণে ফ্লোরিডার সাথে সাক্ষাৎ করল। ফ্লোরিডারও বিপদের শংকা ছিল। বাহিরে থেকে যে সব শাহজাদীরা এসেছিল তাদের প্রতি কড়া নজর রাখা হতো। তারপরও ফ্লোরিডা দু’রাত্র তার কামরা হতে খালী পায়ে বেরিয়ে চোরের মত বাগানে পৌঁছে ছিল। দ্বিতীয় মুলাকাতে ফ্লোরিডা হিজিকে তিন রাত পরে আসতে বলেছিল।