আব্দুল আজীজ ছিলেন স্পেনের প্রথম আমীর। দীর্ঘ দিন যুদ্ধ বিগ্রহের দরুন দেশের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। মানুষজন ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আব্দুল আজীজ এমন ব্যবস্থা করলেন যাতে পালিয়ে যাওয়া লোক ঘর বাড়ীতে ফিরে এলো। আব্দুল আজীজ নওয়াব, জায়গীরদ্বারদের দৌরাত্ম্য খতম করে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য কায়-কারবারের সুব্যবস্থাপনা করার দরুন মানুষের অভাব অনটন বিদূরিত হলো।
আব্দুল আজীজ ছিলেন এক বিজ্ঞ ও আমলদার আলেম। তাবলীগের মাধ্যমে নয় বরং আমল-আখলাকের দ্বারা ইসলামকে সকলের কাছে করে তুলে ছিলেন, গ্রহণীয়। ইসলাম গ্রহণ করাকে মানুষ গৌরবের বিষয় মনে করতে লাগল। নিজে ফজর ও জুময়ার ইমামতি করতেন। কিন্তু তার স্ত্রী ইঞ্জেলা তার জন্যে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আব্দুল আজীজের মত দৃঢ়চেতা, সাহসী আলেম যখন ইঞ্জেলার কাছে যেতেন তখন চুপসে যেতেন। ইঞ্জেলা খ্রীস্টান হবার দরুন বেপর্দা ঘুরাফেরা করত এবং অধিনতদের ওপর কর্তৃত্ব চালাত। তার দীর্ঘ দিনের আশা ছিল রানী হবার তা সে হয়েছে ফলে রানীর মত হুকুম প্রয়োগ করত।
আব্দুল আজীজের দুর্বলতা ছিল তিনি ইঞ্জেলার প্রেমে ছিলেন পাগল। ইঞ্জেলা তার কথা মালার যাদু বলে, হৃদয় কাড়া আচরণে, আব্দুল আজীজের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত।
আব্দুল আজীজ ছিলেন সাদাসিধে। রাজা বাদশাহদের মত চলা-ফেরা পছন্দ করতেন না কিন্তু ইঞ্জেলা এমন সব পন্থা গ্রহণ করল যা আব্দুল আজীজের শাহী অবস্থা সৃষ্টি করল। তা এজবে যে কেউ যদি সাক্ষাৎ করতে আসত তাহলে ইঞ্জেলা খাদেম পাঠিয়ে বলে দিত আমীর এখন সাক্ষাৎ করতে পারবেন না পরে এসো। যদি, কোন সেনাপতি, বড় অফিসার আসতেন তাহলে ইঞ্জেলা নিজে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে আলাপ-আলোচনা করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইঞ্জেলা নিজে সিদ্ধান্ত দিত।
স্বামীর বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃত্ব খাটাবে, রাষ্ট্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে এ বিষয়টা মুসলমানদের কাছে ছিল নিন্দনীয়। মুসলমানদের মাঝে তো নিয়ম ছিল। যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তি গভর্নর, বড় অফিসার এমনকি আমীরুল মু’মিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারত। গভীর রাতেও তাদেরকে ঘুম থেকে উঠাতে পারত।
ইঞ্জেলা যে পন্থা অবলম্বন করেছিল তাতে সালার ও শহরের অফিসাররা অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। আব্দুল আজীজের কাছে তারা অভিযোগ করলে তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। একদিকে আব্দুল আজীজের কৃতিত্ব ছিল যে তিনিই ইসলামকে সরকারী ধর্ম বানানোর সাথে সাথে মানুষের অন্তরে বসিয়ে দিয়েছিলেন। দিবা-রজনী মেহনত করে এমন নিয়ম-কানুন চালু করে ছিলেন যাতে সর্ব সাধারণ ফিরে পেয়েছিল ইজ্জত সম্মান। অপর দিকে আব্দুল আজীজের অবস্থা ছিল একজন রমণীকে পিঠে সোয়ার করে সাথী-সঙ্গী, বন্ধু-বান্ধবের হয়ে ছিলেন বিরাগভাজন।
ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজের জন্যে নিয়মিত দরবারের ব্যবস্থা করে তাতে পূর্ণ পাহারার ব্যবস্থা করল, যা একজন বাদশাহর দরবারে হয়ে থাকে এ বিষয়টাও ছিল ইসলামী নীতির পরিপন্থি।
ইঞ্জেলা গভর্নরদের ওপরও কর্তৃত্ব খাটানো শুরু করল। গভর্নররা সকলে বসে আলোচনা করল বিষয়টা খলীফাকে অবহিত করা হবে কিন্তু কেউ কেউ এতে বাধা দিয়ে বললেন, সরাসরি আব্দুল আজীজের সাথে আলোচনা করলে ভাল হয়। পরিশেষে এটা সিদ্ধান্ত হয়। আব্দুল আজীজ ব্যস্ত থাকার দরুন গভর্নরদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারলেন না, বস্তুত ইঞ্জেলাই তাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়নি। সে সময় ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে আরেকটা পরামর্শ দিল তাহলো, ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে বলল, তুমি হলে মুলুকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বাদশাহ। আমি লক্ষ্য করছি, মুসলমান গভর্নররা তোমার সম মর্যাদার দাবীদার। তুমি তাদেরকে বল তারা যখন তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে তখন তারা যেন তোমাকে ঝুঁকে সালাম করে। যাতে তাদের অন্তরে তোমার ভীতি জাগরত থাকে। তানাহলে একদিন তারা তোমার আনুগত্য অস্বীকার করে বসতে পারে।
এটা হয় না ইঞ্জেলা। আমি এতদূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারব না। আমাদের আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ একমাত্র আল্লাহর সামনে ছাড়া মানুষ কারো সামনে নত হতে পারে না। একজন মানুষ অপর মানুষের সামনে ঝুকতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে নত হওয়া বড় গোনাহ্।
ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে তার কথা মানানোর জন্যে বহুত কোশেশ করল, আব্দুল আজীজ মানলেন না। কিন্তু ইঞ্জেলা এমন রমনী ছিল যে তার কথা মানিয়ে ছাড়ত। এজন্যে সে আব্দুল আজীজের সাক্ষাতে যারা আসত তাদের জন্যে পৃথক একটা ঘর তৈরী করে, সে ঘরের দরজা এমনভাবে তৈরী করল তাতে না ঝুঁকে ঘরে প্রবেশ সম্ভবপর হলো না। আব্দুল আজীজ সে ঘরে বসতে লাগলেন দর্শনার্থীরা এভাবে ঝুঁকে ঘরে প্রবেশ করতে লাগল।
সালার, বড় বড় অফিসার ও গভর্নররা যখন অবস্থা দেখলেন তখন তারা অনুধাবন করতে পারলেন এ দরজার উদ্দেশ্য কি, তাছাড়া দরবারের কর্মচারীরা বলে দিল আমীরের সম্মুখে বুকার জন্যে ইঞ্জেলা এভাবে দরজা তৈরী করেছে। তাদের অন্তরে এমন আঘাত লাগল কেউ তা সহ্য করতে পারলেন না। সকলে বললেন, এতে আমাদেরকে নয় বরং ইসলামের মর্যাদাহানীর জন্যে এ পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে।