মুগীছে রূমী ওখানেই বসা ছিলেন, বললেন, আমিরুল মু’মিনীন! আতিরিক্ত সাক্ষী পেশ করার জন্যে বেশী সময়ের প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই সাক্ষী যে, এ টেবিল তারেকের কাছে ছিল আমীরে মুসা তা আদেশ বলে তার কাছে নিয়েছেন।, দু’জন অফিসারও সাথে এসেছে তারাও এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
ওয়ালীদ : মেনে নিলাম এ টেবিলের মালিক তারেক ইবনে যিয়াদ।
মুগীছ : আমীরুল মুমিনীন। আমীরে মুসার ব্যাপারে আরো কিছু আমি বলতে চাই, তার জন্যে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। এ অনুমতি ইসলাম পূর্বেই দিয়ে রেখেছে যে, খলীফা যদি ভুল করে তাহলে রাজ্যের একেবারে নিম্ন পর্যায়ের লোকও তা ধরতে পাররে এবং তার জবাব খলীফার কাছে সে তলব করতে পারে।
খলীফা : তোমার যা বলার তুমি বল, মুগীছ!
মুগীছ : আমীরুল মু’মিনীন! আমি কেবল মাত্র সাতশত সৈন্য নিয়ে কর্ডোভা এবং তার আশে-পাশের এলাকা জয় করেছি। এর ইনয়াম আমাকে আল্লাহ দেবেন। আর আমি জিহাদও তার সন্তুষ্টির জন্যে করেছি। কিন্তু আমীরে মুসা আমাকে বলেছেন, “তুমি প্রথমে ইহুদী ছিলে পরে গোথা কওমে শামিল হয়েছ এবং আরো, পরে ইসলাম গ্রহণ করেছ ফলে তুমি আরবী সালারদের সম মর্যাদার হতে পার না। আমি আপনার খেদমতে পেশ করার জন্যে কর্ডোভার গভর্নরকে আমার কাছে। বিশেষ কয়েদী হিসেবে রেখেছিলাম। কিন্তু দামেস্কের অদূরে এসে মুসা বললেন, সে কয়েদী তাকে অর্পণ করার জন্যে যাতে তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, সে কয়েদী আমার নয় তার। আমি কয়েদী তাকে দিতে অস্বীকার করলে তিনি তাকে কতল করেন।
হঠাৎ খলীফা ওয়ালীদের ভাই সুলায়মান চিৎকার করে বলে উঠলেন,
খোদার কসম! আমীরে মুসার এ অপরাধ অমার্জনীয়। তিনি তারেকের টেবিল আর মুগীছের কয়েদী নিজের দাবী করে এটা প্রমাণ করলেন যে, তিনি যে স্পেন বিজয় করেছেন তা আল্লাহকে রাজী করার জন্যে করেননি বরং আমীরুল মু’মিনীনকে খুশী করার জন্যে করেছেন।
মুগীছ : তার এ অন্যায়ও তো কম নয় যে তিনি স্পেনে তার ছেলে আব্দুল আজীজকে এবং আফ্রিকা তিন ভাগে ভাগ করে তার তিন ছেলেকে আমীর নিযুক্ত করেছেন।
খলীফা : আমার আর বেশী কিছু শোনার ক্ষমতা নেই। একদিকে তোমাদের এ বিজয় যা যুগ যুগ ধরে মানুষ স্মরণ রাখবে। আগামী প্রজন্ম তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করবে। তোমাদের কবরের ওপর ফুল দেবে। অপরদিকে তোমরা একে অপরকে ছোট করার কোশেশ করছ। আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে, মুসার মত মহান ব্যক্তি, বুদ্ধিমান-ধীসম্পন্ন আমীর এত নিচে যদি নামতে পারে তাহলে মিল্লাতে রাসূল (স) এর ভবিষ্যৎ কি হবে!
খলীফা ওয়ালীদ অত্যন্ত আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তার ছিল আল্লাহর ভয় এবং সর্ব কাজ তার সন্তুষ্টির জন্যে করতেন। তিনি ভীষণ অসুস্থ ছিলেন ডাক্তার তাকে বিছানায় বিশ্রামে থাকতে বলেছিলেন কিন্তু স্পেন বিজেতাদের আগমন বার্তা তাকে মসজিদে নিয়ে এসেছিল। তিনি কেবল মসজিদেই আসেননি বরং জুময়ার ইমামতিও করেছিলেন। তিনি বেশ হাসিখুশী ছিলেন। কিন্তু মুসার হীনতা,ও তারেক-মুগীছের কথা-বার্তায় অত্যন্ত কষ্ট পেলেন ফলে মুহূর্তের মাঝে তার অসুস্থতা বেড়ে গেল।
খলীফা খুব কষ্টে বললেন, এদের সকলকে পঞ্চাশ হাজার করে স্বর্ণ মুদ্রা ইনয়াম দিয়ে দাও। কাউকে বাদ দেবে না।
খলীফার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেল। তাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ডাক্তার তলব করা হলো। ডাক্তার এসে দেখে রাগান্বিত হয়ে বললেন, তোমরা আমীরুল মু’মিনীনকে মেরে ফেলেছ।
তারপর খলীফা ওয়ালীদ আর সেরে উঠলেন না, কয়েক দিনের মাঝেই এ ধরাধাম ত্যাগ করে পরলোকে পাড়িজমালেন।
খলীফা ওয়ালীদ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর বড় ছেলেকে নিজ স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন কিন্তু লিখিতভাবে ফরমান জারি করার অবকাশ মৃত্যু তাকে দেয়নি। এর থেকে সুলায়মান উপকৃত হলেন, তিনি খলীফার পদে আসীন হলেন। খুৎবাতে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হলো। খলীফার মসনদে সুলায়মান আসীন হয়েই তার দরবারে মুসাকে তলব করলেন।
সুলায়মানের কথা অমান্য করাতে এমনিতেই মুসার ওপর রাগান্বিত ছিলেন কিন্তু বিপুল পরিমাণ হাদিয়া-তুহফা ওয়ালীদকে পেশ করতে দেখে সুলায়মানের সে রাগ দুশমনিতে পরিণত হলো।
সুলায়মান : মুসা ইবনে নুসাইর! আজ থেকে তুমি কোন দেশের আমীর নও। তুমি মিথ্যেবাদী ও খেয়ানতকারী। তারপর সুলায়মান দরবার ভর্তি জনসম্মুখে টেবিলের ঘটনা, মুগীছে রূমীর অভিযোগ ও নিজের পক্ষ হতে আরো কিছু অভিযোগ পেশ করে, তাকে কয়েদ খানাতে প্রেরণের নির্দেশ দিলেন।
কৃতকর্মের দিক থেকে সুলায়মান পূর্ণমাত্রায় তার বড় ভ্রাতা ওয়ালীদের বিপরীত। ছিলেন। ওয়ালীদকে যদি দিবালোকের সূর্যের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে তাকে তুলনা করতে হয় নিকষ কালো রাতের সাথে। তিনিই প্রথম খলীফা যিনি আমীরের রূপ ধারণ করেছিলেন। শরীয়তের বিধান মুতাবেক মুসাকে কাজী (বিচারক) এর দরবারে পেশ করা দরকার ছিল তারপর শাস্তি বা ক্ষমা যা করার কাজ করতেন। কিন্তু সুলায়মান বিচার নিজের হাতে নিয়ে তাকে কয়েদখানায় পাঠিয়ে দিলেন। তাকে কেবল কয়েক খানাতে পাঠিয়ে সুলায়মান ক্ষান্ত হলেন না বরং কয়েদখানাতে নির্দেশ পাঠালেন তাকে যেন এমন কঠোর শাস্তি দেয়া হয় যাতে মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে যায় তবে জীবিত থাকে।