দূত চলে গেল। মুসা নিরাশ হয়ে পড়লেন। তিনি খলীফার সাথে দ্রুত সাক্ষাৎ করার জন্যে উন্মুখ হয়ে ছিলেন।
আল্লাহ্ তায়ালা মুসার উদ্দেশ্য পূর্ণ করলেন, একজন এসে খবর দিল, ডাক্তার নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি জুময়ার নামাজ পড়াতে যাচ্ছেন। তার ধারণা তিনি বেশী দিন জীবিত থাকবেন না, ফলে তাঁর বাসনা শেষ বারের মত ইমামতি করে। সৌভাগ্যশালী হবেন।
তিনি মর্দে হক্ক ও সর্বদিক থেকে ছিলেন মর্দে মুমিন। ইসলামী খেলাফতের বিস্তৃতি ও ইসলামের প্রচার-প্রসারে তিনি ছিলেন সদা প্রচেষ্ট। সিন্ধু বিজয়ের জন্যে তিনিই মুহাম্মদ ইবনে কাসেমকে পাঠিয়ে ছিলেন এবং সর্বোপরি সাহায্য করে ছিলেন। এমনিভাবে তারেককে স্পেন আক্রমণের অনুমতি দিয়ে ছিলেন এবং তার প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে ছিলেন।
খলীফা মসজিদে আসছেন, এ সংবাদ পাওয়া মাত্র মুসা খলীফার জন্যে নির্ধারিত তুহফা মসজিদে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি মসজিদে চলে গেলেন। অত্যন্ত দুর্বলতা সত্ত্বেও খলীফা মসজিদে আসলেন। মুসা তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তারেক ও মুগীছও মিলিত হলেন, তাদের মিলনে খলীফা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন।
নামাজান্তে মসজিদেই মুসা খলীফাকৈ তুহফা ও মালে গণীমত পেশ করলেন। এত পরিমাণ অমূল্যবান সম্পদ দেখে খলীফার নয়ন বিস্ফোরিত হয়ে উঠল। অন্যান্য দর্শকরাও অভিভূত হয়ে পড়ল। তারা এত মূল্যবান জিনিস ইতিপূর্বে আর কোনদিন দেখেনি।
সেখানে খলীফার ভাই সুলায়মানও উপস্থিত ছিলেন। তার চেহারায় রাগ ও ক্ষোভের চিহ্ন ভেসে উঠেছিল। তিনি মুসাকে এমনভাবে দেখছিলেন যে সুযোগ। পেলে জীবিত কবর দেবেন। এসব ধন-দৌলত নিজে কজা করার জন্যেই তো তিনি কয়েকদিন অপেক্ষা করার জন্যে মুসার কাছে পয়গাম পাঠিয়ে ছিলেন।
এরপর মুসা এমন কাজ করলেন যা মুসার মত মহান ব্যক্তির জন্যে আদৌ সমীচীন ছিল না। সকল তুহফা পেশ করা হলে সব শেষে পেশ করলেন সেই আলোচিত টেবিল যাকে পাদ্রীরা সুলায়মান (আ)-এর বলে অভিহিত করেছিল।
মুসা : আমীরুল মু’মিনীন! এ টেবিল টলেডোতে বড় কষ্ট করে পাদ্রীদের থেকে উদ্ধার করেছি এবং আপনাকে বিশেষভাবে পেশ করার জন্যে নিয়ে এসেছি। এটা ছিল সুলায়মান (আ)-এর মালিকত্বে তারপর কিভাবে যেন এটা স্পেনে পৌঁছেছে। খলীফা ওয়ালীদ বিস্ময়াভিভূত হয়ে টেবিল দেখতে লাগলেন। তার চেহারায় মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। মুসার বর্ণনা মুতাবেক তিনি তাকে পবিত্র জিনিস জ্ঞান করলেন।
খলীফা ওয়ালীদ অকস্মাৎ বলে উঠলেন, ইবনে নুসাইর! তুমি আমার জন্যে যে তুহফা নিয়ে এসেছ তার কিমত কেউ পরিশোধ করতে পারবে না। তবে এ টেবিলের ব্যাপারে কি বলল, তুমি নিজেই চাও, কি পুরস্কার তোমাকে দেব।
তারেক ইবনে যিয়াদ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, বললেন,
আমীরুল মু’মিনীন! ইনয়ামের হকদার আমি। কারণ এ টেবিল মুসা নয় আমার ফৌজরা হস্তগত করেছে। আমীরে মুসা তা আমার থেকে আদেশ বলে সংগ্রহ। করেছেন।
খলীফার চেহারার রং পাল্টে গেল। তার চেহারাতে রাগের চিহ্ন দেখা দিল। খলীফা রাগান্বিত হয়ে ছিলেন কারণ তারেক তার আমীরের ওপর মিথ্যের অভিযোগ করে ছিলেন। মুসার মত ব্যক্তির ওপর মিথ্যের অভিযোগ কেউ বরদাস্ত করতে পারে না।
ইবনে যিয়াদ! খলীফা গম্ভীর আওয়াজে বললেন, তোমার কি অনুভূতি নেই তুমি কত বড় ব্যক্তির ওপর কত বড় অভিযোগ উত্থাপন করেছ? হয়তো তুমিএটাও জান না এ অপরাধের শাস্তি কি… তুমি কি প্রমাণ করতে পারবে যে এ টেবিল মুসা নয় বরং তুমি সংগ্রহ করেছে।
তারেক : হ আমীরুল মু’মিনীন! একটা নয়, কয়েকটা দলীল পেশ করতে পারব। আমি তাদেরকে ডাকতে পারি যারা এটা সংগ্রহ করেছে এবং ঐ সকল পাদ্রীদেরকেও আহ্বান করতে পারি যাদের থেকে এটা নেয়া হয়েছে।
খলীফা ওয়ালীদ : তোমাকে এত সময় দিতে পারব না। আমার জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই কত দিন জীবিত থাকব। ঐ সকল লোক আসতে আসতে কয়েক মাস লেগে যাবে। তোমার বীরত্ব ও সাহসীকতা দেখে আমি তোমার প্রতি এতটুকু অনুগ্রহ করতে পারি যে, তুমি আমীরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং নিজ বাড়ীতে চলে যাও। আর যদি এমন না কর তাহলে এ গুরুতর অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করার জন্যে প্রস্তুত হও।
তারেক : আমীরুল মু’মিনীন! এখানেই আমি একটি প্রমাণ পেশ করতে পারি। আপনি এ টেবিলের চারটি পায়া ভাল করে প্রত্যক্ষ করুন, তিনটি পায়া এর এক রকম আর একটা পায়া সাদাসিদা স্বর্ণের।
খলীফা টেবিলের পায়াগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে তা দেখতে পেলেন।
তারেক : এর চতুর্থ আসল পায়া আমার কাছে রয়েছে। যখন আমীরে মুসা টলেডোতে এসেছিলেন তখন সর্বপ্রথম তিনি আমাকে আমার ফৌজের সম্মুখে বেত্রাঘাত করেছেন এবং কয়েদ খানায় পাঠিয়ে ছিলেন, তারপর তারেক বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করলেন। তারেক বললেন, আমি এ টেবিলের কথা মুসার কাছে বললে তিনি তা তার কাছে পেশ করার নির্দেশ দিলেন। তখন আমার সন্দেহ হলো ফুলে এর একটা পায়া আমি খুলে রেখে দিলাম এবং বললাম এর পায়া তিনটিই। তখন আমার যে সন্দেহ হয়েছিল এখন তা আপনার কাছে প্রকাশ পেল। এর চতুর্থ পায়া আমীরে মুসা টলেডোতে পরে বানিয়ে লাগিয়েছেন। আমিএর আসল পায়া পেশ করছি।
খলীফার অনুমতি নিয়ে তারেক বাহিরে এসে কিছুক্ষণের মাঝেই আসল পায়া নিয়ে গিয়ে তার নকল পায়া খুলে টেবিলে লাগিয়ে দিলেন।