পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, মুগীছে রূমী অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়াই করে কর্ডোভা জয় করেছিলেন এবং সেখানকার গভর্নরকে বন্দি করে মুসার কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন সে কয়েদীকে খলীফার দরবারে নিজে মুগীছে রূমী পেশ। করবে বলে। দামেস্কের কাছে এসে মুসার মত পরিবর্তন হলো, তিনি মুগীছকে ডেকে বললেন,
“তোমার সে কয়েদীকে আমার কাছে অর্পণ কর মুগীছ! তাকে আমি নজে খলীফার সম্মুখে পেশ করব।”
-সে তো আমার কয়েদী, “আপনি তো আমাকে অনুমতি দিয়ে ছিলেন, আমি তাকে…”
“আমি বলছি কয়েদী আমাকে সোপর্দ কর। মুসা গর্জে উঠে বললেন, তবে আমি আমীরুল মু’মিনীনকে বলব, কয়েদীকে আমি বন্দী করেছি এবং বহু কষ্টে আমি কর্ডোভা জয় করেছি।
– আমি তোমাদেরকে আমিরুল মু’মিনীনের কাছে যেতে দেব না।
– কেন? আমি কোথাও পরাজিত হয়েছি। পলায়ন করেছি? আপনি যে বিজয় অর্জন করেছেন আঠার হাজার ফৌজের সাহায্যে আমি তা করেছি মাত্র এক হাজারের মাধ্যমে। খলীফার সাথে সাক্ষাৎ করার অধিকারটুকু কি আপনি আমাদেরকে দেবেন না।
– না তা আমি দিতে পারি না। তোমার মনে রাখা উচি, তুমি যে পরিমাণ মর্যাদার অধিকারী তার চেয়ে অনেক বেশী সম্মান আমি তোমাকে দিয়েছি। তুমি ছিলে ইহুদী কিন্তু আমি তোমাকে আরবী সালারের সম্মান প্রদান করেছি।
– ইসলাম মর্যাদার ক্ষেত্রে শ্রেণী ভেদ করে না। এ কারণেই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। আপনি যত পারেন আমাকে অসম্মান করেন আমি মুসলমান আছি এবং থাকব তবে আমার কয়েদী আপনার কাছে সোপর্দ করব না।
মুসা একজন সিপাহী ডেকে মুগীছে রূমীর কয়েদীকে হাজির করার নির্দেশ দিলেন। সিপাহী তাৎক্ষণিকভাবে কর্ডোভার গভর্নর কয়েদীকে উপস্থিত করল।
মুসা মুগীছকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি তোমার কয়েদী?
হ্যাঁ এটাই। মুগীছ জবাব দিলেন।
মুসা কয়েদীর পিছনে গিয়ে হঠাৎ তরবারী বের করে প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতার সাথে সজোরে আঘাত হেনে কয়েদীর শরীর হতে মাথা পৃথক করে ফেললেন।
এ দৃশ্য দেখে তারেক ও মুগীছ দূরে সরে গেলেন।
কাফেলা দামেস্কের দিকে রওনা হলো। তারেক এবং মুগীছ মুসা হতে পৃথক হয়ে পিছনে দু’জন একাকী যাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনের অন্তরের ওপর কষ্টের পাথর। চেপে ছিল তা চেহারাতে ফুটে উঠেছিল।
তারেক : ইসলাম এ কারণেই আমীর উমারা ও বাদশাহী ঢংকে চলতে নিষেধ, করেছে। দেখলে! কি পরিমাণ বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ আমীরের মেজাজে কত পরিবর্তন এসেছে।
মুগীছ : আমার আরেকটা বিষয় সন্দেহ হচ্ছে, তাহলে আমার হনে হয়, এ বৃদ্ধের মস্তিষ্ক বিকৃত করার জন্যেই হয়তো এমন শাহী ইস্তেকবালের আয়োজন ইঞ্জেলা করেছিল।
মুসা স্পেনে তার বড় ছেলে আব্দুল আজীজকে আমীর নিযুক্ত করে এসেছিলেন। আর কায়রোতে আফ্রিকার গভর্নর তার অপর ছেলে আব্দুল্লাহকে মনোনিত করেন। পশ্চিম প্রান্তের আমীর অপর ছেলে আব্দুল মালেককে এবং বাকী এলাকার গভর্নর তার ছোট ছেলে মারওয়ানকে নিযুক্ত করেন।
তারেক : মুসা স্পেন ও আফ্রিকাতে তার পারিবারিক বাদশাহী কায়েম করেছে, যদি একজন বর্বরকেও গভর্নর নিযুক্ত করত তাহলেও কিছুটা শান্তি পেতাম।
***
দামেস্কে পূর্বেই সংবাদ পৌঁছে ছিল, স্পেন বিজয়ীরা বিপুল পরিমাণ মালে গণীমত ও বহু সংখ্যক যুদ্ধ বন্দী নিয়ে আসছেন। শহরবাসীরা তাদের ইন্তেকবালের জন্যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে শহরের অদূরে ধ্বনি দিয়ে তাদেরকে ইস্তেকবাল করল। শহরের রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তাদেরকে সম্ভাষণ জানাল।
একটি প্রশস্ত ময়দানে গিয়ে কাফেলা থামল। উটের পিঠ হতে মাল-পত্র নামান হচ্ছিল। এরি মাঝে এক ঘোড় সোয়ার ঘোড়া হাঁকিয়ে এসে পৌঁছল। সে মুসাকে পৃথকভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে গোপনে এক সংবাদ দিল যাতে কেউ সে সংবাদ না জানে, কিন্তু তা আজ পর্যন্ত ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পয়গাম ছিল খলীফার ভ্রাতা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের পক্ষ হতে। বার্তাবাহক ছিল তার বিশেষ দূত।
সোয়ারী বলল, সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক আপনার কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, খলীফা এমন রোগে আক্রান্ত যে কোন সময় তার ইন্তেকাল হতে পারে। তার সাথে আপনি সাক্ষাৎ করতে যাবেন না এবং তাকে কোন মালে গণীমতও দেবেন না। কিছু দিন অপেক্ষা করুন তার ইন্তেকালের পর সুলায়মান হবেন খলীফা। তখন মালে গণীমত ও দাসী, কয়েদী তার সম্মুখে পেশ করবেন।
মুসা : এটা কি হুকুম আবেদন না পরামর্শ?
দূত : আপনি যা মনে করেন। আমি পয়গাম আপনাকে পৌঁছে দিয়েছি।
মুসা : সুলায়মানকে আমার সালাম দিয়ে বলবে, আমি এ পাপ করতে পারব না যে, সুলায়মানের ভাই এর মৃত্যুর অপেক্ষা করব। আমিরুল মু’মিনীনের নির্দেশে এসেছি তাঁর কাছেই যাব।
আল্লাহ না করুন যদি খলীফার ইন্তেকাল হয়েই যায় তাহলে তার বড় ছেলেও তো তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে সুলায়মান খলীফা নাও হতে পারে। কিন্তু এখন তো খলীফা ওয়ালীদ, আমি তার কাছেই দায়বদ্ধ। যা দেয়ার তাঁকেই দেব আর যা নেয়ার ভার থেকেই নেব। ফলে প্রথমে তার সাথেই সাক্ষাৎ করব।
বার্তাবাহক : না আমীর! আপনি খলীফার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। সুলায়মান তার ভাই, তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। খলীফা অসুস্থ, তাঁর সাথে কেউ যেন মুলাকাত না করে এ ব্যাপারে ডাক্তার হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।