মুসা : বস খাতুন! আমাদের কাছে তুমি অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী, আমরা তার উপযুক্ত প্রতি দান প্রদান করব।
মেরীনা অন্যমনস্ক ছিল যেন সে কোন কথা শুনছে না।
আওপাসকে লক্ষ্য করে মেরীনা বলল, তোমার আমীরকে বল তিনি যেন তার দেশে ফিরে না যান, এ সফর তার জন্যে কল্যাণকর নয়।
যদি আমি চলে যাই তাহলে কি হবে? মুসা মুদৃ হেসে জিজ্ঞেস করলেন।
মেরীনা : আপনার জন্যে খুবই অমঙ্গল হবে। লাঞ্ছনা-তিরস্কার ভোগ করতে হবে। আরো অন্য গুরুতর কিছুও হতে পারে। আপনি যাবেন না আমীর! আপনি যাবেন না… পরিণাম ভাল মনে হচ্ছে না। আপনার প্রতি লক্ষ্য করে মনে হচ্ছে আপনার আঁখি যুগল আর কোন দিন স্পেন দেখতে পারবে না।
মুসা মৃদু হাসলেন।
বেটী! মুসলমান তার আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আল্লাহর কাজের ব্যাপারে কোন মানুষ ভবিষ্যত্বাণী করতে পারে না। কোন মানুষ যদি কারো ভবিষ্যত্বাণী শুনে সে অনুপাতে কাজ করে তাহলে শিরকের গুনাহ হবে।
– আমি কোন ধর্মের কথা বলছি না। আমি হয়তো আপনার ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি এটাও জানিনা কেন যেন এ সফরের পরিণাম ভাল মনে হচ্ছে না। আমি যেন আপনার চারদিকে মৃত্যু ঘুরে বেড়াতে দেখতে পাচ্ছি।
– তুমি কি কোন উস্তাদের কাছে এ বিদ্যার্জন করেছ?
– না। তবে কেন যেন আমি নিজের থেকেই এমনটি অনুভব করছি। আমি কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় পৌঁছেছি তা আপনাকে বলছি।
– আওপাস তোমার ব্যাপারে সবকিছু বলেছে। তোমার উপর অত্যাচার নিপীড়ন হয়েছে তা আমি জানি।
.– এখন আমি দুনিয়ার এক অন্ধকার কোলে পড়ে রয়েছি। আমি নিপীড়িত ঠিক কিন্তু আমি নিজেকে অপরাধী মনে করি। আমি রডারিকের ছিলাম রক্ষিতা। রডারিককে হাতের মুঠে নেয়ার জন্যে করেছি কৌশল, করেছি ধোকাবাজি। নিজের উপকারের জন্যে করেছি প্রতারনা। এসব অমানবিক কাজের মাঝেই আমার যৌবন খতম করেছি। তার পর আমি স্বজাতি এক যাদুকরকে করেছি হত্যা। তাকে যদি আমি কতল না করতাম তাহলে তার হাতে একজন নিষ্পাপ মেয়ে হত্যা হত। সে রডারিকের বিজয়ের জন্যে সে মেয়েকে জবেহ্ করতে চেয়েছিল।
–এসব আমি শুনেছি। তুমি আমাদের বড় উপকার করেছ। আমি তার প্রতিদান তোমাকে দিতে চাই।
– না শ্রদ্ধেয় আমীর! আমি আপনার প্রতি কোন অনুগ্রহ-উপকার করিনি। যদি অনুগ্রহ করে থাকি তাহলে তা করেছি নিজের ওপর। রডারিক থেকে প্রতিশোধ নেয়া দরকার ছিল তা নিয়েছি। এখন আমার অন্তরে কোন প্রতিদান ও ইনয়ামের বিন্দুমাত্র লোভ নেই। এখন আমি আমার রুইকে পূত-পবিত্র করছি। পুরো স্পেন যদি আমার কদমতলে রেখে দেয়া হয় তবুও যেখানে আছি সেখান থেকে বের হবে না।
আপনাকে আরেকটা বিষয় সতর্ক করে দিচ্ছি, তা হলো আমার প্রতি দয়াপরশ হবেন না। আমাকে নিয়ে এসে শাহী মহলে সুখে শান্তিতে রাখবেন এমন চিন্তা করবেন না। আওপাস আমাকে ভালবেসেছে, তার পুরো বাদশাহী খান্দান মাটিতে মিশে গেছে। রডারিক আমাকে তার মহলে রেখেছে, তারও রাজত্ব হয়েছে ধূলি ধূসর আর সে বিদায় নিয়েছে চিরতরে।… আমি আরেকবার বলছি আপনি এ সফর। বাতিল করুন।
মেরীনা উঠে দরজার কাছে চলে গেল তারপর আবার ফিরে এসে বলল,
– আমীরে মুসলিম! স্পেন অত্যন্ত খারাপদেশ। এর ইতিহাস রক্তঝরা এবং সর্বদা রক্ত ঝরতে থাকবে। এদেশ বড় রহস্যময়। তারপর সে চলে গেল।
মুসা : এ মেয়ের প্রতি আমার আন্তরিত মমতা রয়েছে। সফরের জন্যে দ্রুত তৈরী হও। স্পেনের রাজধানী টলেডো নয় ইসাবালা হবে। দু’একদিনের মাঝে আমাদের ইসাবালার দিকে রওনা হতে হবে।
দু’দিন পরে এক বিশাল কাফেলা ইসাবালার দিকে রওনা হলো। মুসা, তারেকের আগমনের খবর আব্দুল আজিজকে পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে ইঞ্জেলা বড় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
ইঞ্জেলা আব্দুল আজীজকে বলল, আমীরকে ইস্তেকবাল গোটা শহরবাসী করবে। তারা শহরের বাহিরে গিয়ে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগতম। জানাবে।
– না ইঞ্জেলা। আমীরে মুসা এটা পছন্দ করবেন না। আমাদের ধর্ম এভাবে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ইন্তেকবাল করে শাহানশাহী প্রকাশের অনুমতি দেয় না।
— এখানকার লোক মুসলমান নয়। তারা আমীরে মুসা ও সিপাহ্ সালার তারেককে বাদশাহ্ মনে করে। এখন তোমরা যদি তাদের সাথে এমন কর যে তোমরা তাদের মত সাধারণ মানুষ তাহলে তারা তোমাদেরকে ভীতি শ্রদ্ধা করবে না। ফলে তারা বিদ্রোহ করে বসবে। তোমার মহান পিতা একজন সাধারণ মানুষের মত। আসবে। লোকজন তার প্রতি লক্ষ্য করবে না, এটা তার জন্যে অমর্যাদাকর। এ আমি হতে দেব না। ইস্তেকবালের ব্যবস্থা আমি করব।
পরিশেষে আব্দুল আজীজ ইঞ্জেলার কাছে পরাভূত হলো। ইঞ্জেলা পুরো, শহরের মাঝে মুসার আগমনের ঘোষণা করে দিল। লোকজন ইন্তেকবাল জানানোর জন্যে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করল। কর্মকর্তাদেরকে তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়া। হলো। ইঞ্জেলা পুরোদমে এর পিছনে লেগে গেল।
দু’জন ঘোড় সোয়ারকে শহর হতে টলেডোর দিকে পাঠিয়ে দেয়া হলো, মুসা ইবনে নুসাইরের কাফেলা আসতে দেখলে তারা দ্রুত শহরে সংবাদ নিয়ে আসবে।
মুসা ইবনে নুসাইরের আগমনের দিন সমাগত হলো। যে দু’সোয়ারীকে অর্থে পাঠান হয়েছিল, একদিন দ্বিপ্রহরে তারা দ্রুত বেগে ঘোড়া হাঁকিয়ে এসে সংবাদ দিল আমীরে আফ্রিকা ও উন্দুলুস প্রায় শহরের কাছে এসে গেছেন। ইঞ্জেলা খবর পাওয়া মাত্র বেরিয়ে এসে বার্তাবাহকদের ঘোড়া নিয়ে তাতে সোয়ার হয়ে ছুটে চললো। সে প্রথমেই যার যা দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিল।