সালার এলান করে দিলেন।
কেল্লার প্রাচীরের ওপর হতে জবাব এলো, “তোমরা যদি এখান থেকে ফিরে যাও তাহলে তোমাদের পশ্চাৎ ধাবন করা হবে না। এ কেল্লা কজা করার স্বপ্ন ত্যাগ করে ফিরে যাও।”
সালার! আমরা রক্তপাত করতে চাই না।
ওপর থেকে জবাব এলো, আমরা রক্তপাত করতে চাই। যে রডারিককে তোমরা পরাজিত করেছ সে মারা গেছে, এখানে কোন রডারিক নেই। একথা শেষ। হতেই প্রাচীরের ওপর হাসির রোল পড়ে গেল।
“ফিরে এসো!” মুসা গর্জে উঠে তার সালারকে চলে আসার হুকুম দিলেন।
শহর অবরোধ করা হলো। শহরের ফৌজ বাহিরে এসে যুদ্ধ করতে লাগল। তারা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়তে লাগল কিন্তু মুসলমানদেরকে পিছু হঠাতে পারল না। অন্যান্য জায়গার মত তারাও এ পন্থা অবলম্বন করল যে একবার অতর্কিত হামলা করে কেল্লাতে প্রবেশ করে আবার সুযোগমত হামলা করত। এতে মুসলমানদের বেশ ক্ষতি হতে লাগল।
পরিশেষে এভাবে লড়াই করেও তারা টিকতে পারলনা তবে কিছু সংখ্যক মুজাহিদকে জীবন দিতে হলো। তাদের সংখ্যা পঞ্চাশ বা একশত ছিল।
অষ্টম বা নবম দিন। কেল্লার ভেতর হতে এক দরজা দিয়ে সবে মাত্র চারশত সোয়ারী অপর দরজা দিয়ে তিনশর মত পায়দল সৈন্য বাহিরে এসেছে এমন সময় মুসলমান তীরন্দাজরা তাদের ওপর বৃষ্টির মত তীর নিক্ষেপ শুরু করে দিল। তীরন্দাজরা স্পেনী ফৌজের অনেককে আহত করল আর বাকীদেরকে কেল্লার ভেতর প্রবেশে বাধ্য করল। তারা ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে লাগল এরি মাঝে মুসলিম তীরন্দাজরা কেল্লার ভেতর প্রবেশ করল। তারা জীবনবাজী রেখে লড়াই করে দরজা বন্ধ হতে দিল না। তবে তারা সকলে শহীদ হয়ে গেল, বাকী মুসলমানরা অতর্কিত ভাবে একযোগে হামলা করে ভেতরে চলে গেল। শহুরী ফৌজ অত্যন্ত বীরদর্পে লড়ে গেল কিন্তু মুসলমানরা যে আক্রোশ নিয়ে গিয়েছিল তার সামনে তারা দাঁড়াতে পারল না। বেশ অনেক হতাহত হলো। পরিশেষে শহর মুসলমানদের হস্তগত হলো।
মুসা ইবনে নুসাইর শহরের কমান্ডারসহ বাকী ফৌজকে কয়েদ করে সর্ব প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিলেন। আর শহরবাসীর ওপর কর নির্ধারন করলেন।
মুসা ইবনে নুসাইর অতি তাড়াতাড়ি শহরের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিককাজে মুসলমানদের মাঝ হতে হাকেম বা গভর্নর ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ করলেন। কোন ইহুদী ও খ্রীস্টানকে কোন পদে আসীন করা হলো না। গভর্নর যাকে নিয়োগ করা হয়েছিল তার নাম ছিল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ। তিনি সেখানে এক বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ফলে তার নাম আজও ইতিহাসে রয়েছে লিপিবদ্ধ।
***
মুসা ইবনে নুসাইর তারেক ইবনে যিয়াদের বীরত্ব, সাহসীকতা ও যুদ্ধ পরিচালনা কৌশল দেখে তাকে সিপাহ্ সালার নিযুক্ত করলেন, তারপর সম্মুখে অগ্রসর হলেন। সামনে গিয়ে দু’টো শহর বিজয় করলেন। গালিশিয়া ও আলিতরয়াস দুটো বিভাগ রয়ে গিয়েছিল। গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিল, সেখানকার খ্রীস্টান গভর্নররা স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপে নিয়োজিত রয়েছে। আর সেখানে কার্যত পাদ্রীরা হাকেম, তারা মানুষকে ধর্মের নামে গোঁড়ামীতে ডুবিয়ে রেখেছে। পথ বড় সংকটময়। নদী-নালা, খাল-বিল, বন বাদাড়ে পুরো এলাকা ঢাকা। ঝড়-তুফান, কাদা-মাটি ইত্যাদি প্রতিকুল অবস্থা মুজাহিদদের গতিরোধ করার চেষ্টা করল কিন্তু আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বনীতে, সকল বাধার প্রাচীর হয়ে গেল চৌচির। এ আল্লাহর সৈনিকরা যেথায় গিয়েছে সেথায় শহীদ ও গাজীর রক্তে জমিন হয়েছে রঞ্জিত আর ইসলামের পতাকা উড়েছে পতপত করে।
মুজাহিদরা অতি সহজে গালিশিয়া ও আলিতরয়াস শহরদ্বয়ও জয় করলেন।
মুসা ইবনে নুসাইর তারেক ইবনে যিয়াদকে সম্বোধন করে বললেন, প্রিয় বৎস! স্পেনের কি এমন কোন শহর, এলাকা বা কেল্লা রয়েছে যা আমরা বিজয় করিনি।
– না, আমীরে মুহতারাম! স্পেনের এমন কোন শহর, এমন কোন কেল্লা নেই, যেখানে ইসলামী সালতানাতের ঝান্ডা উড়ছে না।
– খোদার কসম ইবনে যিয়াদ! তুমি আমাকে সাহায্য করবে, আমরা ফ্রান্স সীমান্তে পৌঁছতে চাই।
– ইসলামী সালতানাতের তো কোন সীমানা নেই, আমীরে মুহতারাম! আমাদেরকে ফ্রান্সের শেষ সীমান্তপর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
– মুসা ইবনে নুসাইর ফ্রান্স সীমান্তের কাছে কয়েকদিন অবস্থান করলেন, যাতে ফৌজ বিশ্রাম করে লড়াই এর পূর্ণ শক্তি ফিরে পায়। সে সময় মুসা ও তারেক পুরো ইউরোপ বিজয়ের প্লান তৈরী করলেন এবং একদিন সকালে ফ্রান্স সীমান্তে পৌঁছে গেলেন। যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়াই ফ্রান্সের দু’টো বড় শহর তারা দখল করে নিলেন।
ঐতিহাসিক গিবন লেখেছেন, মুসা ইবনে নুসাইর একদা ফ্রান্সের এক পাহাড়ের চূড়ায় চড়ে পুরো ফ্রান্স পর্যবেক্ষণ করে বললেন, তিনি আরব সৈন্য তার বাহিনীতে শামিল করে ইউরোপকে বিজয় করে কনস্টান্টিনেপল পৌঁছবেন এবং সেথা হতে নিজ দেশ সিরিয়াতে প্রবেশ করবেন।
গিবন আরো লেখেছেন, “যদি ঐ মুসলমান জেনারেল সম্মুখে অগ্রসর হবার সুযোগ পেতেন, তাহলে ইউরোপের স্কুলে ইঞ্জিলের পরিবর্তে কুরআন পড়ান হতো এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মদের রেসালাতের সবক দেয়া হতো। আর আজকে রোমে পোপের পরিবর্তে শায়খুল ইসলামের হুকুম কার্যকর হতো।”
মুসা ইবনে নুসাইর ফ্রান্সের মাত্র দু’তিনটি শহর বিজয় করে ফিরে এলেন সম্মুখে অগ্রসর হলেন না কেন?