টেবিলটা ভালভাবে পরখ করে মুসা বললেন,এর মাঝে আমিএকটা জিনিস আশ্চর্য দেখতে পারছি তাহলো এর পায়া তিনটি একটা পায়া নেই।
তারেক : তার পায়াগুলো খুলে লাগান যায় হয়তো কোন বাদশাহ্ তা খুলে বিনষ্ট করে ফেলেছেন।
সকলে দেখলেন যে টেবিলের একটা পায়া নেই। কিন্তু ইতিপূর্বে যারা দেখে ছিলেন তারা সকলেই তার চারটি পায়া দেখেছিলেন কিন্তু এ প্রশ্ন এখন কেউ করলেন না যে ইতিপূর্বে এর চারটি পায়াই ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে না কেন?
মুসা : এর সাথে আমি চতুর্থ পায়াটি সংযোজন করব। তার সাথে যে পাথর ও হিরামতি সংযোজিত রয়েছে তা তো আর পাওয়া যাবে না তাই স্বর্ণ দ্বারা তৈরী করা হবে চতুর্থ পায়। এটা আমি আমীরুল মুমিনীনের দরবারে পেশ করব। একজন স্বর্ণকারকে ডাক সে যেন অন্য পায়াগুলোর ন্যায় একটা পায়া বানিয়ে দেয়।
মালে গণীমতের মাঝে সোনা-রূপার কোন অভাব ছিল না। একজন স্বর্ণকারকে ডেকে তা দেখান হলে, কয়েকদিনের মাঝে চতুর্থ পায়া তৈরি করে লাগান হলো।
***
কয়েকদিন পর মুজাহিদ বাহিনী স্পেনের একটি শহর আরাগুনের দিকে রওনা হলো। এ বাহিনীর দু’জন কমান্ডার, মুসা ইবনে নুসাইর ও তারেক ইবনে যিয়াদ। মুসা জীবনের শেষ প্রান্তে আর তারেক যৌবনের আখিরী প্রান্তে। কিন্তু স্পৃহা উদ্দীপনায়, দুজনই ছিলেন টগবগে যুবা। তারা যে রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন তা ছিল অতি-সংকটময়। প্রকৃত অর্থে তা ছিল প্রশস্ত একটা উপত্যকা।
তারা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তা ছিল তারেক যে ভয়াবহ জলাভূমি দিয়ে মেরীদা গিয়েছিলেন তার মত কঠিন ও খুবই ভয়াবহ। তাতে ছিল উঁচু নিচু টিলা। সম্মুখে ছিল অসংখ্য নদী-নালা।
তারেক যেমন জলাভূমিতে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হয়ে ছিলেন এ মুজাহিদ বাহিনীও কঠিন বিপদের সম্মুখীন হলেন। নদী পার হতে গিয়ে কয়েকজন মুজাহিদ পানির নিচে তলিয়ে গেল। কয়েকজন মুজাহিদ কাদাতে কোমর পর্যন্ত পুঁতে গেল। রশির সাহায্যে তাদেরকে উদ্ধার করা হল। এসব প্রতিকুলতা তো ছিলই তার পর শুরু হয়েছিল পূর্ণ দিবা-রজনী প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়া। গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছিল। বৃক্ষরাজি উপড়ে পড়ছিল। এর সাথে ছিল বিকট বজ্র নিনাদ, যাতে ছিল মৃত্যুর প্রবল আশংকা। মুজাহিদরা পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে জীবন বাঁচাবার চেষ্টা করছিলেন। খচ্চর-ঘোড়া চিৎকার করে আওয়াজ করতে ছিল। কি পরিমাণ বিপদের সম্মুখীন তারা হয়েছিলেন স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যায়।
নদী-নালা ভরে টইটম্বুর হয়ে গেল। পাহাড়ের টিলা দিয়ে বর্শা বয়ে চলল, এ পরিস্থিতিতেও মুসা ও তারেক চুপ-চাপ বসেছিলেন না তারা ঘোড়াতে মোয়র হয়ে মুজাহিদদের খোঁজ-খবর নিতে ছিলেন। তাদের মাঝে উদ্দীপনা ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন।
মুসা জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে বলতে ছিলেন, সমুদ্র তোমাদেরকে রুখতে পারেনি, স্পেনের নদী-নালাও তোমাদের গতিরোধ করতে পারবে না।
স্পেনের ফৌজী প্রাচীর তোমাদেরকে থামাতে পারেনি, শিলাখণ্ডের ন্যায় কেল্লাকে তোমরা ভেদ করেছ, ফলে এ তুফানও তোমাদের গতিরোধ করতে পারবে না।
প্রতিটি সালার মুজাহিদদেরকে হিম্মত বাড়াবার চেষ্টা করছিলেন। মুসা প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে বলছিলেন, আমার প্রতি লক্ষ্য কর, আমার বয়স দেখ। এ বয়সে বার্ধক্যের দরুন কাঁপতে থাকি, কিন্তু এ কঠিন তুফানের মাঝেও আমার শরীরকে স্থির রেখেছি।
সকলে শারীরিকভাবে নানা কষ্ট স্বীকারের দরুন ভেঙ্গে পড়েছিল কিন্তু তাদের মনোবল ছিল পূর্ণ মাত্রায় অটল-অবিচল। বরং এ তুফানে তাদের রুহানী শক্তি আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বর্ষণ থেমে গেল। পানিও নেমে গেল। কাল বৈশাখী যেমন সবকিছু চুরমার করে লন্ড-ভন্ড করে রেখে যায় ঠিক মুজাহিদ বাহিনীর হাল তেমন ছিল। সামনে অগ্রসর হবার ক্ষমতা মুজাহিদদের ছিলনা। অনেকে পড়েছিলেন অসুস্থ হয়ে। মেয়র
একদিন বিশ্রাম করতে দিয়ে মুজাহিদ বাহিনীকে রওনা করা হলো। ফজরের পর ফৌজ রওনা হয়। নামাজান্তে মুসা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করলেন যা আজও ইতিহাস ধারন করে রেখেছে।, “আল্লাহ তুফান থেকে তাদেরকে নিস্কৃতি দেন যাদের প্রতি তিনি রাজী-খুশী হন। তুফানে নুহ হতে কেবল তাদেরকেই নিস্কৃতি দিয়েছেন যারা তাঁর অনুসারী ছিল এবং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেছিল। আল্লাহ্ তাঁর আনুগত্যশীলদেরকে প্রতিদান দেন দুনিয়া ও আখিরাতে। তোমরা এ কুফুরে পূর্ণ ভূমিতে নিয়ে এসেছ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পয়গাম। নিশ্চয় এ জমিনকে তোমাদের কদম, তোমাদের সেজদা ও শহীদের রক্ত করেছে পূত-পবিত্র। তোমাদের আযান ধ্বনি এখানের পরিবেশকে করে সুশোভিত। এটা আল্লাহর ওয়াদা যে তোমরা যদি ঈমানদার হও তাহলে দশজন মু’মিন একশ ও একশজন এক হাজার-কাফেরের মুকাবালা করতে পারবে। স্মরণ রেখ! তোমাদের পরিচয় বর্বর নয়, আরবীও নয়। বরং তোমাদের পরিচয় তোমরা মুসলমান। তোমরা সকলে সমান। সে উত্তম আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান-মাল উৎসর্গ করার বাসনা যার রয়েছে। আমার বন্ধুগণ! আল্লাহ্ তোমাদের সাথে রয়েছেন।”
***
মুজাহিদ বাহিনী নব উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে আরাগুণ পৌঁছে গেল। শহরের আশ-পাশ ছিল সৌন্দর্য মন্ডিত। শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল খুবই শক্ত। মুসা শহর অবরোধ করার পূর্বে এক সালারকে পাঠালেন যে, গিয়ে কেল্লাবাসীকে বল, তারা রক্তপাত ছাড়াই যেন ফটক খুলে দেয়। মুকাবালা যদি করে আর আমরা যদি কেল্লা আয়ত্ব করতে পারি তাহলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। নিজে খুলে দিলে সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করা হবে।