“আমরা তারেকের মুক্তি চাই।”
“আমরা তারেকের সাথে এসেছিলাম, তারেকের সাথেই ফিরে যাব।”
“তারেক যেখানে আমরা সেখানে যেতে চাই।”
“আমরা কিন্তী জ্বালিয়ে এসেছি, স্পেনে আগুন জ্বালিয়ে ফিরে যাব।”
“তারেক নেই তো আমরাও নেই।”
বর্বরদের এ শ্লোগান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করা হলো।’
পরের দিন সকালে পায়ে বেড়ি, হাতে শিকল পরা অবস্থায় তারেককে মুসার সামনে উপস্থিত করা হলো। মুসা আগে তার হাত-পায়ের বেড়ি খুলে দেয়ার হুকুম দিলেন।
বেড়ি খোলর পর মুসা তারেককে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমার হুকুম অমান কেন করেছিলো।
সেখানে চারজন জেনারেল, জুলিয়ন ও আওপাস উপস্থিত ছিল।
তারেক : আমার সাথীরা এখানে উপস্থিত রয়েছে তাই অন্য কোন সাক্ষীর প্রয়োজন হবে না। যে সময় আপনার হুকুম আমার হাতে পৌঁছে, তখন স্পেন ফৌজ আমাদের হাতে পরাজিত হয়ে পলায়ন করছিল। স্পেনের ফৌজের অর্ধেকের বেশী কতল হয়ে ময়দানে পড়েছিল। এখানের বাদশাহ্ রডারিক হয়েছিল নিহত। বাকী ফৌজরা আশ-পাশের শহর পল্লীতে আশ্রয় নিচ্ছিল। এ অবস্থায় আমি আমার সালারদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, এ পরিস্থিতিতে আমীরের হুকুম আমাদের জন্যে মানা উচিৎ কিনা? তারা সকলেই ফায়সালা দিল, এখন তাদের যদি পশ্চাৎ ধাবন না করা হয়, তাহলে তারা বিভিন্ন কেল্লাতে গিয়ে আবার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আমি তাদেরকে স্বস্তিতে একত্রিত হবার সুযোগ দিতে চাইনি। আমার সাথীরা সকলে এমন পরামর্শই দিয়েছে। জুলিয়ন এর প্রতিই বেশী তাগিদ দিয়েছেন, আমিও সামনে অগ্রসর হওয়াকেই ভাল মনে করেছি। তার দ্বারা যে ফায়দা হাসিল করেছি তাহলো, স্পেনের রাজধানী আমি আপনার সমীপে পেশ করছি। আপনি আমাকে মওকা দিলে এটাই প্রথমে করতাম কিন্তু আপনি আমাকে আগে চাবুক মারা জরুরী মনে, করেছেন।
মুসা : তুমি যে ফায়দা হাসিল করেছ তা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি তোমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তোমার ভুল, তুমি আমাকে অবগত করনি যে, এ জন্যে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। আমাকে অবহিত করলে তোমার জন্যে সাহায্য পাঠাতাম। কিন্তু পরিণামে নিজে আমাকে আসতে হয়েছে। আমি আশংকা করেছিলাম স্পৃহা উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হতে হতেএমন বিপদের সম্মুখীন হবে যে, তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া তোমার জন্যে অসম্ভব হবে।
জুলিয়ন : ইবনে নুসাইর! ইবনে যিয়াদ যে বক্তব্য পেশ করল তা পূর্ণ মাত্রায় সত্য। আমি তাকে বলেছিলাম যদি আমীরে আফ্রিকা নারাজ হয় তাহলে আমি তাকে বুঝিয়ে ঠিক করব। অবস্থা এমন দাঁড়িয়ে ছিল, যে আপনাকে অবগত করার কথা আমাদের কারো মনে আসেনি। আমরা সকলে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
মুসা : মার্জনাকারী আল্লাহ্! তাকে যে বেত্রাঘাত আমি করেছি তার অর্থই হচ্ছে, তাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি জানো জুলিয়ন। ইসলামের বিধান বড় কঠিন। তুমি হয়তো অবগত আছে যে খালেদ ইবনে ওয়ালিদ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বাদশাহী ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে চুর্মার করে দিয়েছিলেন। ইসলামী সালতানাতকে তিনি যে বিস্তৃতা দান করেছেন পৃথিবীর দ্বিতীয় আর কেউ এমনটি করেনি তার পরও সামান্যতম কারণে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর তাকে পদচ্যুত করেছিলেন। এমন বড় সিপাহ্ সালারদের বড় ভুল-ভ্রান্তিও রাজা-বাদশাহরা ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু ইসলামের ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এ ধরনের আরো কিছু কথা-বার্তা হলো, তারেক তার স্বপক্ষে আর কোন কথা বললেন না। মুসা তারেককে আরো কিছু বলে ক্ষমা করে দিলেন। তারেক তো মুসাকে কেবল আমীরই নয় বরং নিজের পিতা জ্ঞান করতেন এ কারণে তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। সম্মুখে অগ্রসর হয়ে মুসার হস্তদ্বয় ধারণ করে, চুমু খেলেন। নয়ন যুগল দিয়ে অজর ধারে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু ধারা।
মুসা : তারেক ইবনে যিয়াদ! একদিন আসবে যেদিন তোমার কবরে হাড় হাড়ি মাটিতে মিশে যাবে, তোমার কবরও হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, কিন্তু ধরাতলে যতদিন স্পেন থাকবে ততদিন তোমার নাম জিন্দা থাকবে।
এরপর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। মুসার ভেতর এমন পরিবর্তন এলো যেন তারেক তার ঔরসজাত সন্তান।
তারেককে ক্ষমার পর স্পেনের যেসব এলাকা তখনও বিজয় হয়নি সেদিকে অগ্রসর হবার প্লান তৈরী করতে লাগলেন।
তারেক : সম্মানিত আমীর! আমাকে সুযোগ দিলে এখানের গুরুত্বপূর্ণ হাদিয়া আপনার খেদমতে পেশ করতে পারি।– মুসার অনুমতিতে তারেক হাদিয়ার জিনিসপত্র উপস্থিত করতে বললেন। মূল্যবান জিনিসপত্র দেখে মুসার চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে গেল। অধিকাংশ জিনিস ছিল স্বর্ণের তার মাঝে ছিল মুক্তা খচিত। এমন মূল্যবান দুর্লভ জিনিস কেবল বাদশাহর দরবারেই থাকে।
তারেক জিনিস পত্র দেখিয়ে দেখিয়ে বলছিলেন এটা আপনার আর এটা আমীরুল মুমিনীনের জন্যে। পরিশেষে তারেক ঐ টেবিল পেশ করলেন যা নিয়ে পাদ্রীরা পলায়ন করছিল।
তারেক বললেন, এ টেবিলের ব্যাপারে কিছু আশ্চর্যজনক কথা শুনেছি, তার মাঝে এক নম্বর কথা হলো, কোন জামানায় এক বাদশাহ্ জেরুজালেমে হামলা করে ছিল সে এ টেবিল সেখানে প্রধান উপাসনালয়ে পেয়েছে। দ্বিতীয় কথা হলো, এটা হযরত সুলায়মান (আ.)-এর রাজত্বের তৃতীয় আশ্চর্য কথা হলো, পাদ্রীরা বলেছে, যে বাদশাহ্ এ টেবিলের মালিকত্বের দাবী করবে তার পতন হবে খুব ভয়াবহ। তার মৃত্যু হবে অত্যন্ত করুন ও লাঞ্ছনাদায়কভাবে।