তৎক্ষণাৎ দু’জন সালার তাকে ধরে নিয়ে চলল
রাস্তাতে এক সালার বলল, “আমাদেরকে ক্ষমা কর ইবনে যিয়াদ। আমরা তো হুকুমের দাস।”
দ্বিতীয় সালার : এমনটি করা আমীরে মুসার ঠিক হয়নি।
পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করে তারেক বললেন, আমার বন্ধুরা! আমি আল্লাহর হুকুমের পাবন্দ। আমীরের অনুগত থাকার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে, তানাহলে আমি যদি বর্বরদেরকে ইশারা করি তাহলে আরবীদের নাম নিশানা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার আশংকা হচ্ছে, বর্বররা আমার এত বড় অপমান মেনে নেবে না। আমি যদি কয়েদখানাতে বন্দী থাকি তাহলে আমীরে মুসা এবং তোমাদের কেউ বর্বরদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
***
তারেক ইবনে যিয়াদ কেবল আশংকা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু প্রকৃত অর্থে বাস্তবে তা হতে যাচ্ছিল।
স্পেনে সকল ফৌজের মাঝে এ খবর মুহূর্তের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল, স্পেন। বিজেতা তারেক ইবনে যিয়াদকে আমীরে মুসা প্রকাশ্য জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করেছেন।
কেন? সিপাহ্ সালার কি অন্যায় করেছে?
এ সওয়ালের জওয়াব কারো কাছে ছিল না। নানা ধরনের গুঞ্জন ফৌজের মাঝে হচ্ছিল। টলেডোর ফৌজের মাঝে প্রায় নব্বই ভাগ বর্বর ছিল। গোস্বায় ফেটে পড়ছিল। একে অপরকে বলতে লাগল যারা তালবিয়া চলে গেছে তাদের কাছে এ খবর পাঠান হোক।
অন্যান্য জেনারেলরা তারেককে কয়েদী অবস্থায় দেখতে পেলেন, তারা মূক হয়ে গেলেন। ভেবে পেলেন না কি করবেন।
তারেক ইবনে যিয়াদ পরে কিভাবে মুক্তি পেলেন এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, স্পেনের সার্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে মুসা খলীফার কাছে দূত পাঠিয়ে ছিলেন। খলীফা সে দূতের মাধ্যমে তারেককে মুক্ত করে পুনরায় সিপাহসালার নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। আর কেউ বলেছেন গোপনে তারেক নিজেই লোক পাঠিয়ে ছিলেন খলীফার কাছে। তবে এটা যুক্তিযুক্ত– মনে হয় না।
তবে বাস্তব ঘটনা হলো মুসাকে প্রকৃত বিষয়টা বুঝানো হয়ে ছিল যে, তারেককে কয়েদ করাতে বর্বররা ক্ষেপে উঠেছে, যে কোন মুহূর্তে তারা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। তারা আপনার সমালোচনা শুরু করেছে। কোন আরবী সালার যদি তাদেরকে কিছু বলে তাহলে পরস্পরে লড়াই বেধে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। বর্বর মুজাহিদরা তারেককে নিজেদের মুর্শিদ মনে করে।
জুলিয়ন : আমিরে আফ্রিকা ও মিশর! আপনার ফায়সালাতে আমরা নাক গলাতে চাই না। তবে আমি এবং আওপাস যেভাবে আপনার ফৌজকে পথ প্রদর্শন করেছি এবং আওপাস যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইহুদী ও গোথাদেরকে রডারিকের বিরুদ্ধবাদী করে তুলেছে, তাতে আমরা আপনার ফায়সালার ওপর কথা বলতে পারি।
আওপাস : কাবেলে ইহতেরাম আমীর! যদি প্রকৃত যুদ্ধের ময়দানে কয়েক হাজার গোথা ওদিক থেকে তারেকের পক্ষে না এসে যেত, তাহলে রডারিকের সাথে যুদ্ধের ফলাফল অন্যরকম হতো। কিন্তু তার উদ্দেশ্য এ নয় যে লড়াই এ গোথারা বিজেতা। বিজয় অবশ্যই তারেকের বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসীকতার ফল। তারেকের জায়গায় যদি অন্যকোন কমজোর জেনারেল হতো আর তারচেয়েও যদি কয়েকগুণ বেশী গোথা এসে মিলিত হতো তবুও রডারিককে পরাজিত করতে পারত না। রডারিকের মত বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ জেনারেলকে কেবল তারেকই পরাজিত করতে পেরেছে।
জুলিয়ন : এমন মূল্যবান ব্যক্তিকে আপনি ধ্বংস করবেন না।
সালার মুগীছে রুমী : আমীরে মুহতারাম! বর্বরদের পক্ষ হতে পূর্ণ বিপদের আশংকা রয়েছে। আপনি হয়তো সংবাদ পেয়েছেন কিন্তু তা পূর্ণ সংবাদ নয়। আমি জানি বর্বরা কত কঠিন। তাদেরকে আমি পরিচালনা করেছি। তারা মুখেই শুধু কথা বলে না বরং কাজ করে দেখায়। তারা যদি বাস্তবেই বিদ্রোহ করে বসে তাহলে তখন বুঝা যাবে তারা কত কঠিন। তারা বিদ্রোহ করলে স্পেনীরা তাদের সাথে। মিলবে ফলে পরস্পরে লড়াই শুরু হবে যার পরিণাম হবে, আমরাও থাকতে পারব না বর্বররাও না। তখন হাতের মুটোতে আসা স্পেন হবে হাত ছাড়া। আমি চুপে চুপে তাদের কথা-বার্তা শুনেছি। তারেককে যদি মুক্ত না করা হয় তাহলে তারা ময়দানে নেমে আসবে।
সালার আবু জুরয়া তুরাইফ বললেন, আমি আপনাকে বলতে চাই, তারেক কেন আপনার হুকুম মানেননি।
মুসা : সেটা তোমাদের কাছে নয় তা স্বয়ং তারেকের মুখে শুনব। তোমরা যে আশংকার কথা বলছ, তোমরা কি মনে করছ তা আমি জানি না। তোমরা কি জান না যে ইসলাম আমীরের নির্দেশ অমান্যকারীকে ক্ষমা করে না। তোমরা কি আমাকে আহমক মনে করছ যে, আমি তারেকের বিজয় ধুলিম্বা করে দেব আর তার কৃতিত্ব আমার নামে লিপিবদ্ধ করাব? আল্লাহ্ ভাল জানেন কে কি করেছে।
আমার কর্ম মানুষকে দেখাতে চাই না। আমার কর্মফল আল্লাহর দরবারে পেশ করতে চাই। তারেককে আজকের দিবা-রজনী কয়েদ খানায় থাকতে দাও। কাল সকালে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমাদেরকে আরো সম্মুখে অগ্রসর হতে হবে। সম্মুখে ফ্রান্স। জানতে পেরেছি, সেখানের সৈন্য স্পেনের চেয়েও বেশী লড়াকু।
মুগীছে রূমী : এ দিবা-রজনী বর্বরদেরকে কিভাবে শান্ত রাখা যায়?
মুসা : তাদেরকে বল, বরং পূর্ণ মাত্রায় ঘোষণা করে দাও, তারেকের মুক্তি বা শাস্তির ফায়সালা আগামীকাল হবে।
ফৌজের মাঝে যখন এ ঘোষণা করা হলো তখন তারা শ্লোগান দিতে লাগল