তারপর যাদুকর নাদিয়াকে কিভাবে পেল এবং তার মাধ্যমে কিরূপ যাদু করছিল তার বর্ণনা দিল।
যাদুকর : এখন আমার শাস্তি কি?
আব্দুল আজীজ : মৃত্যু দণ্ড।
যাদুকর : আমি যদি আপনাকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি যদ্দরুন আপনি ভবিষ্যতের বিপদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। তাহলে কি আমাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রেহায় দেবেন?
আব্দুল আজীজ : তুমি যদি এমন কিছু বলতে পার যা আমার এবং স্পেন সালতানাতের উপকার হবে তাহলে হয়তো বাঁচতে পার।
যাদুকর : আমাকে যদি মৃত্যুর হাত থেকে নিস্কৃতি দেয়া হয়, তাহলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আপনার এবং আপনার সালতানাতের ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন কোন পদক্ষেপ নিব না যাতে সামান্যতম ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
আব্দুল আজীজ : ঠিক আছে বল!
যাদুকর : মুহতারাম সালার! প্রথম কথা হলো ইহুদীদের ওপর ভরসা করবেন না। কোন মুসলমানের জন্যেই কোন ইহুদীকে বিশ্বাস করা ঠিক না। এখানে ইহুদীরা মুসলমানদেরকে যে সাহায্য করেছে তা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে করেছে। দ্বিতীয় কথা হলো, যে জমিনে আপনি আপনার হুকুমত প্রতিষ্ঠিত করবার এসেছেন, এটা একটা ষড়যন্ত্রপূর্ণ রাজ্য আর এর ইতিহাস রক্ত ঝরা ইতিহাস। ভবিষ্যতেও রক্ত ঝরবে।
আব্দুল আজীজ : এটা কোন নতুন কথা নয় বরং যে দেশে হামলা হয় সে দেশে কিছু খুন-খারাবী তো হবেই। একদল অপর দলকে কতল করে, হামলা করে।
যাদুকর : আমিএ হত্যা কান্ডের কথা বলছিনা, এদেশের অভ্যন্তরে যে খুন খারাবী, হয় তার কথা বলছি। রডারিক মারা গেছে তার পূর্বেও অনেক বাদশাহ্ হত্যা হয়েছে। সে সব হত্যা কাণ্ডের রহস্য এখনো উম্মোচিত হয়নি। আমি আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি নিজের বুদ্ধি বিবেচনার ওপর কখনো কোন রমণীর মতকে প্রাধান্য দেবেন না। আপনি যাকে বিবাহ করেছেন সে খুবই সুন্দরী। সে যার প্রতি দৃষ্টি দেয় সেই তার গোলাম হয়ে যায়। কিন্তু তার সুন্দর নয়যুগল রক্ত চায়। সে রডারিকের বিবি হবার পর রডারিক মারা গেছে। বিদ্রোহীদের অনেকেই তার প্রতি ফেরেফত হয়েছিল তারা সকলেই মারা গেছে, এখন সে আপনার…
আব্দুল আজীজ : তুমি কি ইঞ্জেলার কথা বলছ?
যাদুকর : হ্যাঁ, আমি তার কথাই বলছি।
আব্দুল আজীজ : তুমি ইহুদী। মৃত্যুকে সম্মুখে দেখেও ষড়যন্ত্র ও থোকাবাজী– থেকে ফিরে আসনি;… তুমি কি জীবিত থাকতে চাও না?
যাদুকর : এ প্রশ্নই আমিও আপনাকে করি, আপনি কি জীবিত থাকতে চান না? আমি জানি আপনি কি জবাব দেবেন। আপনাকে বলছি, আপনার শির বেশীদিন আপনার শরীরে থাকবে না, ইঞ্জেলা জীবিত থাকবে। এটাও আপনাকে বলছি স্পেন মুসলমানদের হাতে আসবে ঠিক কিন্তু মুসলমানদের বাদশাহ্ একে অপরের হাতে জীবন দেবে। এ সত্য কথায় যদি আপনি দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে কতল করতে পারেন।
আব্দুল আজীজ :-আমাদের ধর্ম ইহুদীদের ভবিষ্যৎবাণী ও যাদুকে বিশ্বাস করে না। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি।
যাদুকরঃ এটা ধর্মের কথা নয় সালার! আমি আমার কথা আপনাকে বিশ্বাস করাতে পারবনা, তবে আপনাকে সতর্ক করে দিলাম।
আব্দুল আজীজ মনে করল, এ ইহুদী ইঞ্জেলাকে তার হাতে কতল করাতে চাচ্ছে বা তালাক দিয়ে বিদায় করে দিতে বলছে তাই তাকেসহ খ্রীষ্টান জমিদার ও তার সাথীদেরকে কতল করার নির্দেশ দিল।
***
টলেডোতে ফিরে আসার জন্যে মুসার নির্দেশ সম্বলিত পয়গাম তারেক ইবনে যিয়াদের হাতে পৌঁছল তালবিয়া শহরে। তারেক যেন এ নির্দেশেরই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার অধিনত কয়েকজন সালারকে সাথে নিয়ে টলেডোর দিকে রওনা হলেন। তিনি গণিমতের যে সব মূল্যবান জিনিস খলীফা ও আমীরে মুসাকে দেয়ার জন্যে রেখেছিলেন তা নিয়ে আসছিলেন।
এখন তারেক সোজা-সরল রাস্তা দিয়ে অতিদ্রুত আসছেন, কয়েকদিনের মাঝেই তিনি টলেডো পৌঁছে গেলেন। তারেক শহরের ফটক দিয়ে প্রবেশ করছিলেন এ সময় মুসাকে তার আগমনের সংবাদ দেয়া হলো। মুসা সঙ্গে সঙ্গে চাবুক হাতে বেরিয়ে এলেন।
তারেক মুসাকে দেখা মাত্র ঘোড়া থেকে নেমে মুসার দিকে দৌড় দিলেন। তিনি দুই হাত প্রসারিত করে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তার ধারণা ছিল স্পেন বিজয়ের কারণে মুসা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে ধন্যবাদ জানাবেন। কিন্তু দর্শকরা এক আশ্চর্যজনক অবস্থা প্রত্যক্ষ করল আর এ দৃশ্য ইতিহাস তার বুকে ধরে রাখল।
মুসা চামড়ার চাবুক বের করে প্রস্তুত করলেন, তারেক কাছে আসা মাত্র তার শরীরে সপাং সপাং করে আঘাত হানলেন।
তারেক নিষ্প্রাণ মূর্তির ন্যায় ‘থ মেরে দাঁড়িয়ে গেলেন।
যেন গোটা পৃথিবী মুহূর্তের মাঝে স্থবির হয়ে গেল।
আশেপাশের বহুলোক এতক্ষণ আনন্দ করছিল হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে গেল। এমন নিরবতা ছেয়ে গেল যেন গাছের পাখি পর্যন্ত নড়া-চড়া বন্ধ করে দিল।
“নাফরমান!” মুসা ইবনে নুসাইর গর্জে উঠে বললেন, “আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যেখানে আছ সেখানে অবস্থান করতে, আর তুমি সারা মুলক বিজয়ের জন্যে সামনে অগ্রসর হয়ে চলেছ, আমার হুকুমের কোন পরওয়া করনি।” মুসা আরেকটি চাবুক মারলেন।
মুসা চাবুক মারছেন আর তারেক নিপ দাঁড়িয়ে তা সহ্য করে যাচ্ছেন। যেন নিষ্প্রাণ কাষ্ঠখণ্ডে আঘাত হানা হচ্ছে।
“আমি তোমাকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করছি।” মুসা ফায়সালা শুনালেন, তারপর কাছে দাঁড়ান সালারদেরকে হুকুম দিলেন,একে কয়েদখানাতে রেখে আস। আমি তাকে আযাদ দেখতে চাই না।”