মূল কাজ কিভাবে হবে? যাদুকর বলল, আপনাদেরকে প্রথমে যে ভাবে– বলেছিলাম সেভাবেই হবে। অর্থাৎ এ মহিলা ইঞ্জেলার কাছে গিয়ে তাকে গলাটিপে হত্যা করবে। একজন জিজ্ঞেস করল, যদি পাকড়াও হয় তাহলে তো সর সে বলে দেবে। যাদুকর বলল, তার বোধ শক্তি থাকবে না সে সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে যাবে ফলে তার কাছে যেই আসবে তাকেই সে কতল করতে যাবে তাই তাকে পাকড়াও করে হত্যা করা হবে।
তাদের একজন বলল, আমরা এটাই ভাল করে জানতে এসেছি। আমার মুনিব বলল, ইঞ্জেলার মত রমণীর জীবিত থাকা আদৌ উচিত নয়। সেই আমাদের নেতৃস্থানীয় ও প্রধান প্রধান ব্যক্তিদেরকে কতল করিয়েছে।
যাদুকর : আমি তোমাদের কাছে খামাখা আসিনি বরং প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে এসেছি। ইহুদীরা এ মুলকে নিজেদের সম্মান ফিরে পেয়েছিল। মুসলমানরা তাদেরকে জায়গীরদান করেছিল। এখন সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব করেছে শয়তান ইঞ্জেল। ঐ বদবখত জানেনা যে ইহুদীরা জমিনের নিচ থেকে মূল কর্তন করে।
আমরা কামিয়াব হবে এবং এখানে পুনরায় খ্রিস্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন এক আওরত পেয়েছি যে কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই ইঞ্জেলার কাছে পৌঁছতে পারবে।
গোস্বায় আব্দুল আজীজের চেহারায় রক্ত চড়ে গেল। ইঞ্জেলা কাঁপতে লাগল।
আব্দুল আজীজ : তারপর কি হলো? তাড়াতাড়ি বল, আমরা তোমাকে ইনয়ামে ভূষিত করব।
নাদিয়া : আমার শরীর কাঁপতে ছিল। মনে মনে ভাবতে ছিলাম পালিয়ে যাই কিন্তু চিন্তে করলাম আমি পালিয়ে গেলে তারাও সরে পড়বে। তাই বসে রইলাম! যাদুকর এসে প্রতিদিনের ন্যায় আমল শুরু করল। মালেকার তাসবীর আনতে বলল কিন্তু তা আমি আনলামনা। মুখে কেবল ঐ শব্দগুলো উচ্চারণ করলাম এবং নিজেকে পূর্ণ মাত্রায় স্থির রাখলাম। তারপর আমল শেষ হলো…
এটা গত রাতের ঘটনা। সকালে আমার মনিবের কাছে শহরে আসার অনুমতি প্রার্থনা করলাম। তিনি কোচওয়ানসহ ঘোড়া দিয়ে দিলেন। আমি কোচওয়ানকে শহরের প্রধান ফটক হতেই বিদায় করে দিয়েছি। তাকে বলেছি আমি একাই সন্ধ্যায় ফিরে যাব। কোচওয়ানকে আরো বলেছি প্রতিদিন যেখানে যাই সে সময়ের পূর্বেই আমি পৌঁছব এবং সেখানে যাব।
আপনাদের দু’জনকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যেই আমি এসেছি। আমি মালেক কে এ অনুরোধ করব না যে তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় তার খিদমতে নিয়োজিত করুন। মালেকার প্রতি মহব্বত ও ভালবাসার টানে এখানে এসেছি।
মালেকা আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমি যে অন্যায় করে ছিলাম ইচ্ছে করলে তিনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন তাকে কেউ জিজ্ঞেস করত না। কিন্তু তিনি তা করেননি বরং নিরাপদে কেবল চলে যেতে বলেছেন। তার প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রয়েছে তা কোনদিনও শেষ হবে না এবং তা বিন্দুমাত্র কমবেও না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
আব্দুল আজীজ : তুমি সন্ধ্যার পূর্বেই ফিরে যাও। সে গ্রামের রাস্তা ভাল করে বলে যাও। তুমি তোমার মুনিবের সাথে যাদু করের কাছে পৌঁছে যাবে বাকী কাজ আমাদের।
ইঞ্জেলা : নাদিয়া! তুমি তোমার ভালবাসা মহব্বতের দায়িত্বপালন করেছ। আমি আমার মহব্বতের দায়িত্ব পালন করব।
রাত্রে বেলা। নাদিয়া যাদুকরের সম্মুখে। যাদুকর তার যাদুর আমল করে চলেছে। পাশের কামরাতে নাদিয়ার মালিকসহ তিন-চারজন বসে আছে। দরজায় করাঘাত হলে এক ব্যক্তি দরজা খুলে দিল। সে দরজা খুলার সাথে সাথে বাঘ দেখার মত চমকে উঠে সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিল। কিন্তু বাহির হতে দরজাতে এত জোরে ধাক্কা দেয়া হলো সে দরজা বন্ধ করতে ব্যর্থ হলো। বিশ পঁচিশ জন জানবাজ মুজাহিদ ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। পুরো গ্রাম অবরোধ করা হলো। এর নেতৃত্বে ছিল স্বয়ং আব্দুল আজীজ।
যাদুকরসহ ঘরে যেসব লোক ছিল সকলকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রামের নেতৃস্থানীয় লোককৈও তাদের সাথে পাকড়াও করা হলো। নাদিয়াকেও তাদের সাথে নিয়ে গেল যাতে তাকে সন্দেহ না হয়। তাদের সকলকে মেরীদাতে নিয়ে গিয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। আব্দুল আজীজ আবুল হাসান নামে এক পুলিশ অফিসারের কাছে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করে যাদুকর ও নাদিয়ার মালিক থেকে তথ্য বের করার নির্দেশ দিল।
আবুল হাসান তাদেরকে বিশেষ কামরাতে নিয়ে নানা ধরনের শাস্তি ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য বের করার চেষ্টা করলেন। ইহুদী যাদুকর বাধ্য হয়ে তথ্য দিতে স্বীকার হলো এবং সে বলল, আমি সব কিছু সরাসরি আব্দুল আজীজের কাছে বলব, তাছাড়া তার সাথে আরো কিছু কথা রয়েছে।
পরের দিন সকালে যাদুকর আব্দুল আজীজের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বলল,
“আমি একজন ইহুদী ফলে আমি তাই করেছি যা একজন ইহুদীর করা দরকার ছিল। ইঞ্জেলাকে ইহুদী কওম কখনো ক্ষমা করতে পারে না। সে আমাদেরকে বিদ্রোহে উসকে দিয়ে আমাদের সকলকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে। এজন্যে তাকে কতল করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব ছিল। কিন্তু হত্যার জন্যে কেউ তৈরী হচ্ছিল না। কারণ তাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝ থেকে কতল করা বড় দুস্কর ছিল। তাকে কতলের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। আমার কাছে যাদুর হাতিয়ার ছাড়া আর কিছু ছিল না। এ যাদু কার্যকর করার জন্যে এমন এক ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল যে কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়া ইঞ্জেলার কাছে পৌঁছতে পারত।”