একদা বিকেলে ইলো আব্দুল আজীজের সাথে গল্প করছে এমন সময় এক খাদেমা এসে ইঞ্জেলাকে সংবাদ দিল তার এক পুরাতন খাদেমা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে।
ইঞ্জেলা : তার নাম কি?
খাদেমা : নাম বলেনি। বলছে যদি নাম বলি তাহলে তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। আর তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ না করলে তার ভীষণ ক্ষতি হবে।
ইঞ্জেলী : ভেতরে পাঠিয়ে দাও।
কিছুক্ষণ পরেই ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের এক সুন্দরী মহিলা ভেতরে এসে ইঞ্জেলার প্রতি ঝুঁকে সালাম জানাল।
ইঞ্জেলা : ও তুমি! নাদিয়া তুমি কি মনে কর যে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি? তুমি কি আমার খাদেমাকে বলেছ যে আমি যদি তোমার সাথে মুলাকাত না করি তাহলে আমার ক্ষতি হবে? আমার কি ক্ষতি হবে?
নাদিয়া : আমি ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে আসিনি মালেকা! এসেছি আমার বিশ্বস্ততা : প্রমাণ করার জন্যে। যদি ইজত, দেন তো কিছু বলি।
আব্দুল আজীজ : সে কি অন্যায় করেছে ইঞ্জেলা?
রডারিকের মৃত্যুর পর আমি রাজিলীর সাথে মেরীদাতে চলে এসেছিলাম। রাজিলী আমাকে পাওয়ার জন্যে পাগল পারা হয়ে উঠেছিল। একদিন রাত্রে আমি তার কামরায় যাওয়ার জন্যে বের হচ্ছি এমন সময় আমার এক খাদেমা বলল, নাদিয়া বেশ অনেক ক্ষণ ধরে রাজিলীর কামরাতে গেছে। তারপর নাদিয়াকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাজিলীর সাথে অসংলগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। তারপর তাকে আমি বলেছিলাম মহল হতে বের হয়ে যেতে এবং বলেছিলাম এ শহরে যেন আর কোনদিন আমার সাথে সাক্ষাৎ না হয়।
আব্দুল আজীজ : যা হবার তো হয়েছে, এখন তাকে জিজ্ঞেস কর সে কেন এসেছে এবং তার কি বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে এসেছে।
ইঞ্জেলা : ঠিক আছে, বসে বললো, কি পেশ করবার জন্যে এসেছ?
নাদিয়া : ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে এখানে আসিনি। এ আবেদনও করব না যে পুনরায় আমাকে খেদমতে রাখুন। আমি যে একেবারে নিরাপরাধ ছিলাম তাও বলছি না। বরং আপনি আমাকে যে মর্যাদা দান করেছিলেন তার জন্যে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।
আব্দুল আজীজ : এখন কেন এসেছ? তা বল।
নাদিয়া : মালেকা ইঞ্জেলাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে আর তার জন্যে আমাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিভাবে হচ্ছে তা আপনি শুনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
আব্দুল আজীজ : ধীরে সুস্থে তুমি বর্ণনা কর, আমরা তা শ্রবণ করব।
নাদিয়াঃ আমি মেরীদা হতে একটু দূরে একটা গ্রামে থাকি। সেখানে এক বড় জমিদারের ঘরে তার বাচ্চাকে দেখা-শুনা করি। ঐ জমিদারকে বলেছিলাম আমি.. রানী ইঞ্জেলার খাছ খাদেমা ছিলাম। একদিন জমিদার বললেন, তুমি আমার সাথে চল, তোমাকে এক যাদু করের কাছে নিয়ে যাব সে তোমার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিবে ফলে তুমি পুনরায় রাজদরবারের কর্ম ফিরে পাবে। আমি তার সাথে গেলাম। যাদুকর ঐ গ্রামেই থাকত। সেখানে নতুন এসেছে। ইতিপূর্বে তাকে আমি দেখিনি। যাদুকর আমাকে তার সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমি কি চাই। আমি তাকে বললাম, আমি স্পেন রানীর খাছ খাদেমা ছিলাম। আমার ভুলের কারণে বের করে দিয়েছে,আমি চাই তিনি যেন আমাকে পুনরায় তার নকরীতে বহাল করেন।
আমার এ বাসনা আমি নিজের অন্তরে লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাউকে বলিনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না আমার ঐ জমিদার মুনিব নিজ থেকে কেন আমার প্রতি এত সহানুভূতিশীল হলেন এবং নিজেই আমাকে যাদুকরের কাছে নিয়ে গেলেন।
যাদুকর আমাকে তার সামনে বসিয়ে তার আমল শুরু করে বলল, এটা এমন আমূল যা উল্টা করা যায়। সে তার আংটি আমার মাথার ওপর ঘুরাতে লাগল। আমাকে বলল, মালেকা ইঞ্জেলার তাসবীর সামনে এনে তার চোখে চোখ রাখার জন্যে। তারপর সে আমাকে বলল, এ বাক্যগুলো যেন বারবার বলতে থাকি তা হলো, “এ আওরাত আমার দুশমন, তাকে আমি ঘৃণা করি। সে যদি আমার সামনে আসে তাহলে তাকেগলা টিপে ধরব।” আমিএমনটি করতে লাগলাম। তারপর আমার তন্দ্রা ভাব এসে গেলে আমি মালেকার তাসবীর চোখের সামনে দেখতে পেলাম এবং পরিস্থিতি এমন হলো যেন সত্যিই মালেকা আমার দুশমন, তাকে পেলে আমি হত্যা করব। আমল শেষ হলে সে আমাকে বলল, এর দ্বারা মালেকার সাথে তোমার মহব্বত পয়দা হবে এবং তিনি নিজে এখানে এসে তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাবে। এ আমল পাঁচ-ছয়দিন করতে হবে। তুমি প্রতিদিন রাত্রে আমার কাছে আসবে। সেদিনের মত আমার মুনিবের সাথে ফিরে এলাম। পরের দিন রাত্রে আমরা তার কাছে গেলে সে একই আমল করে বিদায় দিল।
তৃতীয় দিন রাত্রে নির্ধারিত সময় যাদু করের কাছে গেলাম। সেখানে গিয়ে বেশ কিছু পরিচিত লোক দেখতে পেলাম। আমি পাশের কামরাতে চলে গেলে তারা আলাপ শুরু করল। তাদের কথা আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা ইবরানী ভাষায় কথা বলছিল। তাদের হয়তো ধারনা ছিল আমি ইবরানী ভাষা বুঝি না তাই তারা বেশ উঁচু স্বরে কথা বলছিল। মালেকা তো জানেন আমি ইবরানী ভাষা ভাল করে বুঝি ও বলতে পারি।
তারা তো অনেক আলাপ-আলোচনা করল কিন্তু মূলকথা যেটা বলার জন্যে এখানে এসেছি। আমার মুনিব জিজ্ঞেস করল, কতদিনের মাঝে মূল কাজ হবে? যাদুকর জবাব দিল সাত-আট দিনের মাঝে কাজ হয়ে যাবে। আরেকজন জিজ্ঞেস করল এ লাড়কী দ্বারা কাজ হবে তো? যাদুকর বলল,এর দ্বারাই কাজ হবে। মাত্র দুটি দিন আমল করেছি তাই তার কিছু ফল পাওয়া শুরু হয়ে গেছে। অপর জন। জিজ্ঞেস করল,