সকালে দরজা খুললে সে শহরে প্রবেশ করে তার চাল-চলন ও পোশাক আষাক বদলে ফেলেছিল ফলে তাকে আরবী মনে হচ্ছিল না। পূর্বেও সে এখানে কয়েকবার এসেছিল তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সম্পর্কে তার জানাছিল। হাবীব ইবনে উবায়দাহ কোথায় থাকে তাও সে জানত।
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে হাবীব ইবনে উবায়দাহ সৈন্য বাহিনীর কোন গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে এবং কিছুদিনের জন্যে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এ কারণে ইতিহাসে তার নামে আমীর শব্দ যোগ করে আমীর হাবীব ইবনে উবায়দাহ্ লেখা হয়।
আবু নছর হাবীবের ঘরে পৌঁছুলে সে সময় হাবীবের এক সহকারী বন্ধু তার সাথে আলাপ করছিল। চাকর খবর দিল এক ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়। হাবীব বাহিরে আসল। কে? হাবীব গভীরভাবে আবু নছর কে দেখে বলল, তুমি আবু নছর না? কারো জন্যে খলীফার পয়গাম নিয়ে এসেছে?
আবু নছর উত্তর দিল, তোমার জন্যে খলীফার কোন বিশেষ ও গোপন পয়গাম রয়েছে। নির্দেশ রয়েছে আমি যে পয়গাম নিয়ে এসেছি তা যেন, কেউ জানতে না পারে। পয়গাম নিয়ে নাও এবং আমাকে গোপনীয়ভাবে থাকার ব্যবস্থা কর। আমি জবাব নিয়ে ফিরে যাব।
হাবীব থলে নিয়ে নিল, আর খাদেমকে নির্দেশ দিল, এ মুসাফিরকে পৃথক কামরাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে এবং তার খানা-পিনার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে। হাবীব নিজ কামরাতে ফিরে বন্ধু যায়েদ ইবনে নাবার সম্মুখে থলে খুলে পত্র বের করে পড়তে লাগল। পত্র পড়ার সময় তার হাত কাঁপছিল। পয়গাম বেশী লম্বা ছিল না। ঐতিহাসিক দুজী এবং স্কট লেখেন, পত্র হাবীরের হাত থেকে পড়ে যায় আর তার চোখ অশ্রুতে ভরে ওঠে। পয়গাম যায়েদ উঠিয়ে নিয়ে পড়তে থাকে
“স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজকে হত্যা করে তার মাথা দামেস্কে পাঠিয়ে দাও। আর এ বিষয়টা যেন কেউ জানতে না পারে।”
হাবীব বলল, ইবনে নাবা! তুমি জান, মুসা ইবনে নুসাইরের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক কত গভীর। আমি তার ছেলেকে কিভাবে হত্যা করব? না… একাজ আমার পক্ষে সম্ভব না।
যায়েদ ইবনে নাবা বলল, তাহলে নিজের মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হও। খলীফার হুকুম যদি না মান তাহলে তিনি তোমাকে এবং তোমার বংশের ছোট বড় সকলকে হত্যা করবেন। হত্যার পূর্বে তোমাকে বন্দী করে এমন কষ্ট দেবেন যে রাতে দিনে কয়েকবার মৃত্যু বরণ করবে আবার জীবিত হবে।
হাবীব বলল, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?
তুমি যদি বল তাহলে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। ইবনে উবায়দাহ! খলীফার এ হুকুম তোমাকে অবশ্যই মানতে হবে।
***
তাদের দুজনের মাঝে আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হলো। প্রায় সকল ইউরোপীয়ান ও মুসলমান ঐতিহাসিকরা লেখেন, হাবীব ইবনে উবায়দার বন্ধুত্ব মুসার সাথে তো অবশ্যই ছিল কিন্তু খলীফা ওয়ালীদ ও তার ভাই সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের অনুগ্রহ হাবীব ও তার পরিবারের প্রতি এত বেশী ছিল যে তা হাবীরের জন্যে ভুলে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া সুলায়মানের শাস্তির ভয়েও হাবীবের জন্যে তার হুকুম অমান্য করার সাহস ছিল না। হাবীব পাঁচজন ফৌজি অফিসারকে কাছে ডেকে তাদেরকে বিশ্বস্ত বানিয়ে ফেলল, তারা পাঁচজনই বনী উমাইয়্যা গোত্রের ছিল। তারা আমীর আব্দুল আজীজকে হত্যার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা হলো, আব্দুল আজীজ উন্নয়ন কাজে এত ব্যস্ত ছিলেন যে কোন এক জায়গায় স্থিরভাবে অবস্থান করতে পারছিলেন না। স্পেনের অনেক এলাকায় তখনও যুদ্ধ চলছিল। খ্রীস্টানরা মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করতে তো অক্ষম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা বাকী স্পেনকে রক্ষা করার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করছিল। আমীর আব্দুল আজীজ হঠাৎ করে কোন কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে উপস্থিত হতেন।
তাকে হত্যার জন্যে কয়েকবার আক্রমণ চালান হয়েছে কিন্তু তা এমনভাবে ব্যর্থ হয়েছে যে তিনি বুঝতেও পারে নি তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিশেষে হাবীব এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করল যে ছিল খুব জেদী, বুদ্ধিমান ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সে ব্যক্তি আব্দুল আজীজকে ছায়ারমত অনুসরণ করতে লাগল, আব্দুল আজীজ সব সময় নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনীতে থাকতেন। তাই তাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করাও সম্ভব ছিল না।
ঐ হত্যাকারী যার নাম কোন ঐতিহাসিকই উল্লেখ করেন নি। একদা সুযোগ পেয়ে গেল। সে সময় সৈন্য বাহিনীতে সিপাহসালার ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন আর রাজধানীর জামে মসজিদে স্বয়ং আমীর ইমামতি করতেন। একদিন আমীর আব্দুল আজীজ ফজরের নামাজের ইমামতি করছিলেন। তিনি সবে মাত্র সুরা ফাতিহা শেষ করে সূরা ওয়াকিয়া শুরু করেছিলেন এরি মাঝে হঠাৎ সামনের কাতার হতে এক ব্যক্তি সামনে অগ্রসর হয়ে তলোয়ার বের করে চোখের পলকে আমীর আব্দুল আজীজের মাথা শরীর থেকে পৃথক করে ফেলল। ঘটনা কি হলো মুসল্লীরা তা জানার পূর্বেই সে ব্যক্তি কর্তিত মাথা নিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে উধাও হয়ে গেল।
সে ব্যক্তি কর্তিত মাথা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে হাবীবের বাড়ীতে পৌঁছুল। হাবীব তার অপেক্ষাতেই ছিল। হাবীব পূর্বেই একটা থলে বানিয়ে রেখেছিল। মাথা থলিতে ভরে তার মুখ সেলাই করে এ থলিকে মখমলের আরেকটা থলের মাঝে ভরে দূত আবু নছরকে দিয়ে দিল।