নীর্ভিকতা
অন্য কিছু ভাবার নির্ভীকতা,
উদ্ভাবন করার নির্ভীকতা,
অনাবিষ্কৃত পথে চলার নির্ভীকতা,
অসম্ভাব্য আবিষ্কারের নির্ভীকতা,
সমস্যা আর সাফল্যের দ্বন্দ্বে নির্ভীকতা,
এ সবই হল যৌবনের অনন্য নৈপুণ্য।
দেশের যুবসমাজ হিসেবে,
আমি কাজ করব এবং
লক্ষ্যে সফলতা পাবার জন্য সাহসের সঙ্গে কাজ করব।
ওই একই দিনে আর একটা মর্মন্তুদ উড়ান দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে মাধবরাও সিন্ধিয়া, সাংবাদিক, ওঁর কর্মী এবং বিমানকর্মী-সহ ছয়জন ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। দুটো খবরই রামেশ্বরমে আমার পরিবার এবং দেশে-বিদেশে ছড়ানো বন্ধুদের কাছে পৌঁছে গেছিল। আমি কেমন আছি জানার জন্য তাঁরা প্রত্যেকে ভীষণ উৎকণ্ঠিত ছিলেন। আমি সুস্থ আছি, সংবাদপত্রের মাধ্যমে এ খবর পেয়েও দাদার বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই ওঁর সঙ্গে কথা বলে ওঁকে এবং পরিবারের সবাইকে আশ্বস্ত করতে হয়েছিল।
সেই সন্ধ্যায় আমি যখন দিল্লি পৌঁছলাম, বাজপেয়ীজির সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটা জরুরি বার্তা এসে পৌঁছল— আমি যেতেই তিনি অভ্যর্থনা জানিয়ে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমায় সুস্থ দেখে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। তারপর তিনি বললেন ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনের কাগজপত্র নিয়ে নেতৃস্থানীয় শিল্পপতি ও ক্যাবিনেটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং এর ওপর আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংসদে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমি তাঁকে বললাম, এই কাজে অনেকগুলো বাধা আছে। কিছু ব্যাপার ছিল যা নিয়ে আমি ভাবনাচিন্তা করছিলাম।
ওই দুর্ঘটনার পরিণামে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল। একটা হল আমার বই ‘Ignited Minds’ এর বীজরোপণ ও তার জন্ম— যার উদ্দেশ্য ছিল ‘আমি পারি’ এই আকাঙ্ক্ষা যুবসমাজে জাগিয়ে তোলা। এবং দ্বিতীয়টি হল নিজেকে আত্মিকভাবে পুনরুদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে আম্মা-মাতা অমৃতানন্দময়ীর সঙ্গে দর্শন করার জন্য রাঁচি থেকে কুইলন যাত্রা করা। ঘটনাক্রমে আমি রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হওয়ার ঠিক আগেই ‘Ignited Minds’ প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থটির শিরোনাম প্রচার মাধ্যমের খুব পছন্দসই বাক্যবন্ধ হিসেবে বারংবার আমার রাষ্ট্রপতি পদে অভিষেককালীন সংবাদে প্রচার করা হচ্ছিল। গ্রন্থটি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিল এবং এখনও সারা বছর ধরে বিক্রি হয়। আম্মা এক দেবতুল্য আত্মা, যিনি সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য আর অনাথ ও পতিতদের সহায়তায় নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন। যে দুই বন্ধুর সঙ্গে আম্মার দর্শনে যাত্রা করেছিলাম, তাঁদেরকে আমি বলেছিলাম যে পিএসএ পদ থেকে পদত্যাগ করছি এবং প্রধানমন্ত্রীকে একটা পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। অতএব আমি নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে আম্মার সঙ্গে দেখা করলাম। ওঁর সঙ্গে আমি আমার ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনের কথা ও মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষার কথা আলোচনা করেছিলাম।
সময়টা ছিল ২০০১ সালের নভেম্বর মাস, পিএসএ বা মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আমার ততদিনে দু’বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। চিঠিতে লিখেছিলাম আমি আবার আমার শিক্ষা বিষয়ক ক্ষেত্রে ফিরে আসতে চাই। অবশ্যই এর গভীরতর কারণ ছিল। আমার মনে হয়েছিল, আমি যে গ্রামীণ ক্ষেত্রে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান বা PURA (Providing Urban Amenities in Rural Areas) এবং ইন্ডিয়া ২০২০-র ব্যবস্থাপন পরিচালনা করছিলাম তা প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পাচ্ছিল না। কোথায় সমস্যার উদ্ভব হচ্ছিল? সু-সংহায়িত সময়োপযোগিতা, তহবিল এবং দায়িত্বভার সহযোগে যতদূর সম্ভব আমি প্রতিটা লক্ষ্য বা কার্যক্রমকে রূপায়ণ করতে পছন্দ করি। সামগ্রিকভাবে, সরকারি নিয়মতন্ত্রে এই ধরনের পরিবেশ পাওয়া বেশ কঠিন। কেননা অজস্র মন্ত্রী এবং সরকারি বিভাগ এবং তাদের নিজস্ব লক্ষ্য ও কার্যক্রমের দ্বারা মিশনের উদ্দেশ্য সম্পাদিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কৃষিক্ষেত্রে যদি কেউ প্রতি বছরে ৪% উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে, সেজন্য তাকে জলসম্পদ, শক্তি, সার, রসায়ন, গ্রামীণ বিকাশ, পঞ্চায়েত রাজ, রেল (সার পরিবহণের জন্য) মন্ত্রক ইত্যাদি আরও অনেক কিছুর সাহায্য নিতে হবে। এখানে সহায়ক সংগঠনগুলির কোনও স্বচ্ছ সাধারণ লক্ষ্য নেই। দ্বিতীয়ত পিএসএ-র সমন্বয়সাধনার, উপদেষ্টার ব্যাপক প্রসারিত ভূমিকা ছিল কিন্তু কোনও প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব ছিল না। এটা যে-কোনও মিশন সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কারণ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার মেয়াদ কালের শেষ তিনমাসে দ্বিতীয়বার আমার প্রার্থীপদ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। আমি ততদিনে মনস্থির করে নিয়েছিলাম যে, শিক্ষকতায় আর ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনকে সার্থক রূপদান করতে প্রচার করব। হঠাৎ করে, জুলাই মাস এসে পড়তেই কংগ্রেসের শাসক দল পছন্দসই প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করল। বিরোধী দলের মনোভাব অন্যরকম ছিল। রাজনৈতিক কার্যকলাপে সারা দেশ জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছিল। নদীর স্রোতের মতো বিভিন্ন দলের নেতারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আবার একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জনসাধারণ, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং দেশের যুবসমাজের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে এবং ই-মেলের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি পদগ্রহণের জন্য অজস্র অনুরোধ এসেছিল। মনোনয়ন গ্রহণ শেষ হওয়ার ঠিক আগে একদল রাজনৈতিক নেতা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, যদি আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে রাজি হই তাঁরা সমস্ত দল থেকে এমনকী শাসকদল থেকে সমর্থন পাবেন।